মহিলা গার্ডের উপর হামলায় 'অস্বস্তিতে' রেল, চাকরির বিভাগ পরিবর্তনের দাবিতে জোর সওয়াল
এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
সোমবার তামিলনাড়ুর মাদুরাই রেলস্টেশনের কাছে এক মালবাহী ট্রেনের মহিলা গার্ডের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই সুর চড়িয়েছে মহিলা চালকদের অধিকারের হয়ে সওয়ালকারী একাধিক রেল ইউনিয়ন। দাবি তোলা যাতে এভাবে কোনও মহিলা আক্রান্ত হলে একবার হলেও তাঁরা চাকরির ক্যাটাগরি বদলানোর সুযোগ পান।মাদুরাই রেল স্টেশনে ২৮ বছর বয়সী গার্ড রেখাকে মোতায়েন করা হয়েছিল। লাল সিগন্য়ালে মালবাহী ট্রেন থামানোর দায়িত্বে মোতায়েন ছিলেন রেখা। সেই সময় হঠাৎই কয়েক জন দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় রেখার উপর। শারীরিক ভাবে তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ রেলওয়ের তরফে জানা গিয়েছে, দুই যুবক রেখার মোবাইল ফোন, টাকা এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে গার্ডের কেবিনে ঢুকে পড়েছিল। এক রেল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রেখা বাধা দিলে তাঁর উপর চড়াও দুর্বৃত্তরা। এরপর মূল্য়বান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। মাথায় চোট পান রেখা। কোনওক্রমে যোগাযোগ করেন লোকো পাইলটের সঙ্গে। লোকো পাইলটই রেখার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।' বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখা। রেলের কর্মকর্তারা স্থানীয় পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন। যে যুবকদের বিরুদ্ধে রেখার উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তাদের মধ্য়ে একজনকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেলের মহিলা কর্মীরা। ড্রাইভার সহ মহিলা ফ্রন্টলাইন কর্মীরা তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, মহিলাদের নিরাপদ পরিবেশে কাজের প্রতিশ্রুতি দিতে রেল যে ফের ব্যর্থ তা আরও একবার এই ঘটনা থেকে প্রমাণ হল। ভারতীয় রেলওয়ে লোকো রানিংম্যান অর্গানাইজেশন (IRLRO)-এর কার্যকরী সভাপতি সঞ্জয় পান্ধীর কথায়, 'এই ঘটনাই প্রথম নয়। অতীতেও মহিলা ফ্রন্টলাইন কর্মীদের উপর এই ধরনের হামলা চলেছে। ঝুঁকির নিয়েই তাঁদের কাজ করতে হয় সর্বদা। কারণ মহিলাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় উপযুক্ত পরিবেশে মহিলা কর্মীদের নিয়োগের কোনও ব্যবস্থা নেই রেলে। একই অভিযোগ তুলেছেন মহিলা চালকরাও। তাঁদের অভিযোগ, মালগাড়ির কোনও মহিলা কর্মী তিনি চালক হোন বা কার্ড প্রত্যেকেই সর্বদা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এক মহিলা লোকো পাইলটের কথায়, 'মালবাহী ট্রেনগুলি প্রায়শই বনাঞ্চল বা গ্রামীণ এলাকার নির্জন স্থানে এমনকি খুব গভীর রাতেও কোনও কোনও জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টার স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকে। ইঞ্জিন ভিতর থেকে লকের সুযোগ থাকে না। সেই সময় একজন মহিলা চালক বা সহকারী চালক জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এক প্রকার অপেক্ষা করেন।' তাঁর সংযোজন, 'গার্ডের কেবিনটি ট্রেনের একেবারে শেষপ্রান্ত। একজন মহিলা গার্ডের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত কর্মীও থাকেন না। গভীর রাতে ডিউটি করতে বুক দুরু দুরু করে রীতিমতো।'
ট্রেন পরিচালনার কাজকর্মের যুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ট্রেন চালক হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পর প্রত্য়েক মহিলা কর্মী বা চালককেই প্যাসেঞ্জার চ্রেনের চালক বা গার্ড পদে যোগ দেওয়ার আগে কাজ করতে হয় মালবাহী ট্রেনে। কাজে যোগদানের পর একেবারে সরাসরি প্য়াসেঞ্জার ট্রেনের চালক বা গার্ড হিসেবে যোগ দিতে পারেন না তাঁরা। কারণ বিষয়টি নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার নিয়ম বিরুদ্ধ। যাত্রীবাহী ট্রেনে কাজ করার আগে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয় চালক ও গার্ডদের। যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথা রেখে প্রথমেই কোনও নবাগত চালক বা গার্ড যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকের পদে মোতায়েন করা হয় না। মহিলা চালকদের কথায়, কাজে যোগদানের সময়ই তাঁদের বিষয়গুলি সম্বন্ধে জানিয়ে দেওয়া উচিত রেলের। ভবিষ্যতে যে এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন সেই সম্বন্ধে ধারণাও দেওয়া উচিত। এক মহিলা লোকো পাইলটের কথায়, 'আমরা অন্তত একবার চাকরির ক্য়াটাগরির পরিবর্তন করার মতো সুযোগ পেতে চাই। কারণ চাকরিতে যোগদানের সময় ভবিষ্যতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে চ্য়ালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সে সম্বন্ধে কিছুই জানানো হয় না।' তাঁর অনুরোধ, 'আমার অনুরোধ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যাতে অন্য বিভাগের কাজের দায়িত্বে মোতায়েন করা হয় মহিলাদের সেই বিষয়টি বিবেচনা করুক রেল।'
অল ইন্ডিয়া রেলওয়েম্যান ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্র মহিলাদের দাবি সমর্থন করেছেন। তাঁর কথায়,'রেলওয়েকে মহিলা কর্মীদের দাবিগুলি বিবেচনা করার এবং অন্যান্য বিভাগে চাকরি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।' মহিলা লোকো পাইলটদের একটি দল, যাঁরা অল ইন্ডিয়া রেলওয়েম্যান ফেডারেশনের সদস্য, সম্প্রতি রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারপারসন জয়া বর্মা সিনহার কাছে একটি তাঁদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে 'এককালীন ক্যাডার পরিবর্তন' বিকল্পের দাবি জানিয়েছেন।.
ইঞ্জিনে শৌচাগারের সমস্যা, ঋতুস্রাবের সময় প্যাড পরিবর্তন করতে না পারা, এমনকী রাতে যেকোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়লেও ইঞ্জিন থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা না থাকা এবং গভীর রাতের ডিউটির জন্য পিক-আপ এবং ড্রপ সুবিধা না থাকার মতো কিছু সমস্যা তুলে ধরেছেন মহিলা ট্রেন চালক। মহিলা চালকদের দাবি, রেলওয়ে যদি কাজের পরিবেশের উন্নতি করতে না পারে তবে তাদের চাকরির ক্যাটাগরি পরিবর্তনের বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়া হোক।