West Bengal Governor : রাজভবনে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আগেও! কোন কোন ক্ষেত্রে ইস্তফা রাজ্যপালেদের? তালিকায় বাংলাও
এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ। রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মচারীর দাবি, শ্লীলতাহানি করা হয়েছে তাঁর। অশালীন ইঙ্গিতের অভিযোগ তুলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। ভোটের মধ্য়ে বাংলার সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় রাজনীতি। সাংবিধানিক বলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ সম্ভব নয়। অতীতে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে গুরুতর অভিযোগের দায়ের নিয়ে পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যপালেরা।মেঘালয়ের রাজ্যপাল ভি শনমুগণথনঘটনা ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের। মেঘালয়ের তৎকালীন রাজ্যপাল ভি শনমুগণথনকে ২৬ জানুয়ারি বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে সে রাজ্যের রাজভবনের এক কর্মচারী যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ডেপুটেশন। রাজভবনে লেডিস ক্লাব চালানোর মতো বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
গোয়ার রাজ্যপাল বি ভি ওয়াংচুঅগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড ভিভিআইপি চপার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৪ সালে CBI তদন্তের পর পদত্যাগ করেছিলেন গোয়ার রাজ্যপাল বি ভি ওয়াংচু। অগাস্টা কেলেঙ্কারির ঘটনার পর তিনি দ্বিতীয় রাজ্যপাল ছিলেন যাতে ইস্তফা দিতে হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণবি ভি ওয়াংচুর মতো পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণও ২০১৪ সালের ৩০ জুন পদত্যাগ করেছিলেন। অগাস্টা কেলেঙ্কারিতে CBI তদন্তের পর তিনিও পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্যপাল এন ডি তিওয়ারিতিনজন মহিলার সঙ্গে আপত্তিজনক অবস্থায় থাকার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল ৮৬ বছর বয়সী এন ডি তিওয়ারির বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা একাধিকবারের মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক মিডিয়ায় নাগাড়ে এই কভারেজ করা হয়। তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস। ২০০৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইস্তফা দেওয়া ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও উপায় ছিল না।
ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল প্রভাত কুমারঅতীত তাড়া করে বেড়িয়েছে তাঁকে। ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি ইস্তফা দেন। ১৯৯৯-২০০০ সালে ক্যাবিনেট সচিব থাকাকালীন প্রভাত কুমারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রভাত কুমারের অফিসে বসে একাধিক রাজনৈতিক দলকে ঘুষ দেওয়ার কথা CBI জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছিলেন বিতর্কিত শিল্পপতি তথা ফ্লেক্স ইন্ডাস্ট্রিসের চেয়ারম্যান অশোক চতুর্বেদি।
উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল মোতিলাল বোরা এবং কেরালার রাজ্যপাল পি শিবশংকরএই দুই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হাওয়ালার অভিযোগ ওঠে প্রাথমিক তদন্তে। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মোতিলাল বোরা উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল ছিলেন। কেরালার রাজ্যপাল পি শিবশংকর ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ক্যাবিনেটের মন্ত্রী। ১৯৯৬ সালের ১ মে রাতে তাঁরা দু'জনেই রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের ইস্তফাপত্র পাঠান। এমনটাই উল্লেখ রয়েছে শ্রীগোবিন্দ মিশ্রর লেখা 'ডেমোক্রেসি বাই ইন্ডিয়া' বইটিতে। CBI সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, সাংবিধানিক সুরক্ষা কবচের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট ফাইল করা যাচ্ছে না।
হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল শিলা কউল১৯৯৬ সালের ২১ এপ্রিল বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করেছিলেন জওহরলাল নেহরুর বৌদি এবং পি ভি নরসিমা রাও সরকারের পূর্তমন্ত্রী শিলা কউল। রাজভবনে থেকে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এই নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে একটি মামলাও দায়ের হয়েছিল।
হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল গুলসের আহমেদদেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশনের ক্রোধের মুখে পড়েছিলেন হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন রাজ্যপাল গুলসেন আহমেদ। ১৯৯৬ সালের ৩০ মে তিনি রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু, ছয় মাসের মধ্যেই পদ ছাড়তে হয় তাঁরে। মধ্য প্রদেশের সাতনা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন এই রাজ্যপালের পুত্র। তাঁর হয়ে রাজভবন থেকেই প্রচার করছিলেন তিনি। এমনটাই অভিযোগ ওঠে। এই মর্মে টি এন সেশন সাতনা লোকসভার নির্বাচন পর্যন্ত বাতিল হয়েছিল।
মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল কোনা প্রভাকর রাও১৯৮৬ সালে বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ বিভাগের এমডি পরীক্ষা কেলেঙ্কারির ঘটনায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শিবাজিরাও পাটিল নীলাঙ্গেকর এবং রাজ্যপাল কোনা প্রভাকর রাও একসঙ্গে পদত্যাগ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে তিনবার এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে তাঁকে পাশ করানো হয়। বম্বে হাইকোর্টে এই মর্মে একটি মামলায় দায়ের হয়। তদন্তে দেখা যায়, এমডি পরীক্ষার রেজাল্ট হেরফের করা হয়েছিল। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যকে প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে। আর্থিক সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য রাজভবনকে ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও খবর মেলে। ১৯৮৬ সালের ৩০ মে শপথ নিয়ে ২ এপ্রিলই পদত্যাগ করেন রাজ্যপাল।