আমার স্টেটাসের সঙ্গে বিধায়ক পদটা যায় না: আবদুল গনি
এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
মানস রায়, মালদা
‘হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিধায়ক হচ্ছেন, এটা স্টেটাসের সঙ্গে ঠিক যায় না। বিরল ঘটনা। আমি নিজেও বিধায়ক পরিচয়টা দিতে পছন্দ করি না। বলি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান।’ বক্তা সুজাপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবদুল গনি। রবিবার মালদায় গিয়ে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমাপ্রার্থনার জেরে ‘এই সময়’-এর কাছে মুখ খুললেন বিধায়ক।এ বারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বারবার উঠে এসেছে নিজের কেন্দ্রে তাঁর নিরুদ্দেশ থাকার প্রসঙ্গ। বিরোধী প্রার্থী তো বটেই, এমনকী, দলীয় প্রার্থীও প্রচারে এটাকেই ইস্যু করেছেন। গত রবিবার মালদায় প্রচারে এসে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিধায়কের অনুপস্থিতির জন্য মানুষের যে অসুবিধা হয়েছে, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
সে দিনের পর থেকে জেলার রাজনৈতিক মহলে বলা হচ্ছে, মালদার ভোট আলোচনায় এখন দুই গনি সাহেব। একজন ১৮ বছর আগে প্রয়াত আবু বরকত আতাউল গনি খান চৌধুরী। যিনি দেড় যুগ না থেকেও জেলার ভোটে এখনও প্রাসঙ্গিক। দ্বিতীয় জন সুজাপুরের বিধায়ক আবদুল গনি। হাইকোর্টের এই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গত বিধানসভা নির্বাচনে সুজাপুরে কংগ্রেসের গড় তছনছ করে দিয়ে ইশা খান চৌধুরীকে হারিয়েছিলেন ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ভোটে। কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটে তাঁকে নিয়েই বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল। কারণ অতি বড় তৃণমূল সমর্থকও স্বীকার করছেন, তারকা বিধায়ক কলকাতায় থাকেন, এলাকায় তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
আর খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কারণে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন জনতার কাছে। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মালদার আশিস কুণ্ডু সুজাপুর দেখে নেবে। আমি নিজে সুজাপুরের দায়িত্ব নিচ্ছি।’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর নাম মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শুনে আবদুল গনি বলছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমার এলাকা দেখার দায়িত্ব নিতেই পারেন। কিন্তু আশিসকে যুক্ত করাটা ঠিক হয়নি। ওর কোনও প্রোফাইলই নেই।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু আমাকে গালাগালি করেননি। বলেছেন, সময় দিতে পারি না।’
তবে তাঁর দাবি তিনি মোটেও বিধায়ক হতে চাননি। তিনি বলেন, ‘প্রাক্তন বিচারপতির জন্য বিধায়ক তকমাটা সুইটেবল নয়। আমাকে না বলেই বিধায়কের টিকিট দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর প্রচারেও সব জায়গায় যেতে পারিনি। কিন্তু হিউজ ভোটে জিতেছিলাম। সেটা একেবারেই নিজের ইমেজে, দলের জন্য নয়।’
দলীয় রাজনীতিতে মোটেই আনকোরা নন আবদুল গনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জগৎবল্লভপুর কেন্দ্রের বিধায়ক হন তিনি। মালদায় কংগ্রেসের গড় ভাঙতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমিপুত্র গনি সাহেবকে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে সুজাপুর থেকে টিকিট দেন। তৃণমূল নেত্রীর অঙ্ক যে ঠিক ছিল, সেটা মিলে যায় সুজাপুর কেন্দ্রে তাঁর রেকর্ড ভোট জয়ে।
তাঁকে ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কয়েক বার মালদায় এলেও বিধায়ক হিসেবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মালদায় প্রশাসনিক সভায় পর্যন্ত তাঁকে দেখতে না পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী একবার বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তাতেও লাভ কিছু হয়নি। বরং মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে জয়ী হতে হলে সুজাপুর বড়সড় বাধা হয়ে যেতে পারে, সেটা টের পেয়েছে দল। তাই মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হানকে বলতে শোনা যায়, ‘বিধায়ক তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি, এটা সত্যি! মানুষের সেই অভাব আমি পূরণ করে দেবো। আমি ভূমিপুত্র হয়েই থাকব।’
সে প্রসঙ্গে এ দিন বিধায়ক বলেন, ‘শাহনওয়াজ আমার সম্পর্কে উল্টোপাল্টা বলে ঠিক করেনি। এলাকার অনেকেই এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ওরা সেই খবর রাখে না।’ তবে কথোপকথনে শেষমেষ গরহাজির থাকার কথা মেনে নিয়ে বিধায়ক বলেন, ‘স্বীকার করছি, আমি সুজাপুরে কম যাই। ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কলকাতায় আমার যা কাজ থাকে, তাতে সুজাপুরে যাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু তাই বলে ওখানকার কাজ পড়ে থাকে না। খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, সুজাপুরে এত দিনে বাকি সব বিধায়ক মিলে যা কাজ করেছেন, আমি একা এই তিন বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছি।’