• Prajwal Revanna : কূটনৈতিক পাসপোর্টে জার্মানি সফরে প্রোজ্জ্বল, জানাল কেন্দ্র
    এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
  • এই সময়: যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত জেডিএস সাংসদ প্রোজ্জ্বল রেবান্নাকে জার্মানিতে পালাতে সাহায্য করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার- এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করেছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্র স্পষ্ট জানিয়ে দিল - ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টে জার্মানি গিয়েছেন প্রোজ্জ্বল, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে তিনি কোনও রাজনৈতিক ক্লিয়ারেন্স চাননি, মন্ত্রকও তাঁকে ক্লিয়ারেন্স দেয়নি।প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি প্রোজ্জ্বল (৩৩)-এর বিরুদ্ধে একাধিক মহিলাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগ রয়েছে তাঁর বাবা তথা জেডিএস বিধায়ক এইচডি রেবান্নার বিরুদ্ধেও। সম্প্রতি হাজার তিনেকের বেশি ভিডিয়ো ক্লিপিং ভাইরাল হয়েছে, যেখানে প্রোজ্জ্বলকে বিভিন্ন মহিলার হেনস্থা করতে দেখা গিয়েছে!

    এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবারই প্রোজ্জ্বলকে সাসপেন্ড করেছে জেডিএস। তবে ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়া এবং এক মহিলা অভিযোগ জানানোর আগেই শনিবার জার্মানি পাড়ি দেন প্রোজ্জ্বল। আর তা নিয়েই বিতর্ক তুঙ্গে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার কর্নাটকের নির্বাচনী সভা থেকে অভিযোগ তোলেন, ৪০০-রও বেশি মহিলাকে ধর্ষণ করেছেন প্রোজ্জ্বল, হেনস্থার ভিডিয়োও করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী মোদী অভিযুক্তকে পালাতে সাহায্য করেছেন।

    রাহুলের দাবি, 'এক বিজেপি নেতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, প্রোজ্জ্বল মহিলাদের ধর্ষণ করছেন। তার পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা কোনও সেক্স-স্ক্যান্ডাল নয়, গণহারে ধর্ষণ! অমিত শাহ জানতেন মানে প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি জানতেন। মোদী কেন প্রোজ্জ্বলকে আড়াল করলেন? কেন সব কিছু জেনেও অভিযুক্তের হয়ে ভোটপ্রচার করলেন?'

    প্রসঙ্গত, কর্নাটক প্রশাসন হাসানের সাংসদ প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে। প্রোজ্জ্বল নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় বুধবার ঘোষণা করেছেন, 'আমি তদন্তে যোগ দেওয়ার জন্য বেঙ্গালুরুতে নেই। তবে আমার আইনজীবীর মাধ্যমে সিআইডি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সত্যেরই জয় হবে।'

    বিশেষ তদন্তকারী দলের সামনে হাজিরা দেওয়ার জন্য সাত দিন সময়ও চেয়েছেন তিনি। তবে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে প্রোজ্জ্বলের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বদলের আর্জি করেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, 'সিট দিনরাত তদন্তে ব্যস্ত, কিন্তু অভিযুক্তকে দেশে ফেরানোটা সবথেকে বেশি প্রয়োজন। আপনার কাছে অনুরোধ অবিলম্বে প্রোজ্জ্বলের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করে তাঁকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।'

    মোদী সরকার কি সত্যিই সেটা করছে? বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে। তাঁর বক্তব্য, 'পাসপোর্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশেই কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা যায়। এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে কোর্টের তেমন কোনও নির্দেশ নেই।'

    সেই সঙ্গে জয়সওয়ালের দাবি, 'অভিযুক্ত সাংসদের জার্মানিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশ মন্ত্রকের কাছ থেকে কোনও পলিটিক্যাল ক্লিয়ারেন্স চাওয়া হয়নি, আমরা কোনও ক্লিয়ারেন্স ইস্যুও করিনি। কোনও ভিসা নোটও দেওয়া হয়নি। কারণ, কূটনৈতিক পাসপোর্ট হোল্ডারদের জার্মানি যাওয়ার জন্য কোনও ভিসার প্রয়োজন পড়ে না।'

    এদিকে, প্রোজ্জ্বলের গাড়িচালক কার্তিক-ই যৌন হেনস্থার এই সব ভিডিয়ো বিজেপি নেতা দেবরাজ গৌড়ার হাতে তুলে দিয়েছেন বলে দাবি। সিট নোটিস জারি করার পর থেকেই নিখোঁজ কার্তিক। ১৩ বছর ধরে প্রোজ্জ্বলের গাড়ি চালাচ্ছেন কার্তিক। বছর খানেক আগে একটা জমির লেনদেন নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝামেলা হয়, সেই রাগেই কার্তিক ভিডিয়ো ফাঁস করে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

    তবে কার্তিকের বেপাত্তা হওয়া নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। জেডিএস নেতা তথা কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর দাবি, কার্তিকের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে প্রভাবশালী কিছু নেতার ভূমিকা রয়েছে। কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা শিবকুমার-ই ভিডিয়ো ফাঁসকারী কার্তিককে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ কুমারস্বামীর।

    শিবকুমারের অবশ্য দাবি, 'আমি লড়াকু নেতা, কাউকে লুকিয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার দরকার আমার হয় না। দেবগৌড়া পরিবার এই সব করতে পারে। আর কার্তিক বলেছিলেন, তাঁর দেওয়া পেনড্রাইভে রেবান্নার সব অশ্লীল ভিডিয়ো রয়েছে। তা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা না করে ভিডিয়োগুলোর তদন্ত হোক।'

    এদিকে, প্রোজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করতে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার ব্যর্থ বলে সরব হয়েছে বিজেপি। প্রোজ্জ্বলের দাদা সুরজ রেবান্নার অবশ্য দাবি, তাঁর পরিবার এবং এইচডি রেবান্নার সুনামকে খাটো করতে এটা পুরোটাই একটা ষড়যন্ত্র। তবে সাবধানের মার নেই। তাই ছেলের অনুপস্থিতিতে একই মামলায় নাম জড়ানো এইচডি রেবান্না বেঙ্গালুরুর সেশনস কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন দায়ের করেছেন বৃহস্পতিবার।
  • Link to this news (এই সময়)