Covishield Side Effects : কোভিশিল্ডের সাইড এফেক্টে শরীরে জমাট বাঁধা রক্ত? বড় আপডেট বিশিষ্ট চিকিৎসকদের
এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
দেশের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহসিন বলী মতে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশবাসীর ঘাবড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। এই টিকার জন্য লাখ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন।প্রণব মুখোপাধ্যায় সহ ভারতের তিন রাষ্ট্রপতির নিজস্ব চিকিৎসক মোহসিন বলী বলেন, 'জরুরিকালীন সময় করোনাভাইরাসের হাত থেকে অসংখ্য মানুষের প্রাণরক্ষা করেছিল কোভিশিল্ড। ভারতে এই টিকার প্রাপকদের মধ্যে কোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা সামনে আসেনি। ব্রিটেনে কোভিশিল্ডের কারণে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে এ দেশকে জুড়ে দেওয়া অনুচিত। ওখানে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আমার মতে কোভিশিল্ড এ দেশে প্রচুর মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। সাইড এফেক্ট যদি হয়েও থাকে তবে তা নজিরবিহীনভাবে এক-দু'ক্ষেত্রে হতে পারে।'
যে কোনও টিকার দোষ-গুণের উপর নির্ভর করে সেটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট চিকিৎসক বলেন, 'কোনও টিকা নিয়ে যদি লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচে আর কয়েকটি নেচিবাচক প্রভাবের খবর মেলে, সে ক্ষেত্রে সেই টিকাকে নিরাপদ নয় তা ধরা যাবে না। কোভিশিল্ড কিংবা কোভ্যাকসিন টিকা নিয়ে এ দেশের মানুষের মধ্য কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ফলে এ দেশে দুই টিকাই নিরাপদ। কোনও সাইড এফেক্ট হওয়ার থাকলে তা এতদিনে হয়ে যেত।'
সম্প্রতি ICMR নিশ্চিতভাবে জানিয়েছে, কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাকসিন ভারতে নিরাপদ। ICMR-এর বিজ্ঞানী বলেন, 'লং কোভিডের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চলছে। ব্রেন ফগ, স্মৃতিভ্রমের মতো প্রভাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তা টিকাকরণের সঙ্গে জোড়া যাবে না।'
গবেষকরা এও জানাচ্ছেন, থ্রম্বসিস বা থ্রম্বসাইটোপেনিয়া কোভিশিল্ড নিয়ে হচ্ছে না করোনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের জেরে হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক ডা. মোহসিন বলী বলেন, 'আমার ক্লিনিকে প্রায় চার হাজার কোভিড রোগী চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকের মধ্যেই এবার লং কোভিডের প্রভাব দেখা দিচ্ছে। আমার এক রোগীর পায়ে থ্রম্বসিস দেখা দিয়েছিল। তবে সেটি টিকাকরণের জন্যই হয়েছে কি না, তা প্রমাণ ছাড়া বলা সম্ভব নয়।'
গঙ্গারাম হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজীব পাসেও মেনে নিচ্ছেন, কোভিশিল্ডের জেরে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও ঘটনা এ দেশে ঘটেনি। তিনি মনে করছেন, যাদের একবার অন্তত কোভিড হয়েছে অথবা করোনা ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। ছয় মাস অন্তর হার্টেক চেক আপ প্রয়োজন। বদলাতে থাকা লাইফস্টাইল এবং খাবারের অনিয়মের জেরে একাধিক রোগে শরীরে বাসা বাঁধে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। কোভিডজয়ীদের মধ্যে অনেকেরই শরীরচর্চা, জিম করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। ডা. রাজীব পাসে বলেন, 'সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা এবং হালকা ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।'
কোভিশিল্ড টিকার সুরক্ষা যাচাইয়ের আর্জিতে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। যেখানে আবেদন করা হয়, কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা হোক। ভারতে সর্বপ্রথম কোভিডের টিকা হল কোভিশিল্ড। এটি পুণের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদন করা হয়। কোভিশিল্ডের ফর্মুলা প্রস্তুত করেছিল ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ব্রিটেনের আদালতে স্বীকার করেছে, তাদের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনে দুলর্ভ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। থ্রম্বসিস বা থ্রম্বসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম রোগ এই সাইট এফেক্টের মাধ্যমে হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আর বেঙ্কটরমন, শংকরদয়াল শর্মা এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নিজস্ব চিকিৎসক ছিলেন মোহসিন বলী। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি রাষ্ট্রপতির নিজস্ব চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির চিকিৎসায় নিযুক্ত সবচেয়ে অল্পবয়সী ডাক্তার এই ডা. মোহসিন বলী। ভারতের চিকিৎসায় তাঁর অবদানের জন্য ২০০৭ সালে সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।