এই সময়: বিজেপিকে ভোট দিতে বলছেন অধীর চৌধুরী—এই অভিযোগ তুলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে তীব্র আক্রমণ শানাল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। বুধবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর বৃহস্পতিবার তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ নিয়ে সরব হয়েছেন। অধীর অবশ্য এদিন দাবি, তাঁর বক্তব্য বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে।মঙ্গলবার জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী মুর্তাজা হোসেনের সমর্থনে একটি জনসভা করেন অধীর। এরপরই একটি ভিডিয়ো ক্লিপ (এর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তৃণমূল। যেখানে অধীরকে বলতে শোনা যায়, ‘তৃণমূলের চেয়ে ভালো বিজেপিকে ভোট দেওয়া।’ বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের তেহট্টের নির্বাচনী সভা থেকে সরাসরি অধীরের নাম না করে তোপ দাগেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর কথায়, ‘কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা! যিনি বলছেন, হয় বিজেপিকে ভোট দিন, নয়, কংগ্রেসকে ভোট দিন। বুঝুন, না আছে নীতি, না আছে আদর্শ।’ সম্প্রতি বহরমপুরে সভা করে করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তার আগে মুর্শিদাবাদে ভোট-প্রচারে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এদিন সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতার খোঁচা, ‘দু’জন নেতা মিটিং করে গেলেন বহরমপুরে। একবারও তাঁদের নাম মুখে আনলেন না (অধীর)। এঁদের মতো কয়েকটা স্বার্থপর লোক দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছেন।’
তার আগে বুধবার মালদার সামসিতে নির্বাচনী সভা করতে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অডিয়ো ক্লিপটি দর্শকদের শুনিয়ে বলেন, ‘এই যে কংগ্রেস নেতা বলছেন, বিজেপিকে ভোট দাও! প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলছেন, তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার থেকে বিজেপিকে ভোট দেওয়া ভালো!’ তাঁর সংযোজন, ‘বিজেপির হাত শক্ত করছে কারা? অধীর চৌধুরীর বহরমপুরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সভা করতে এসেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একটিও শব্দও খরচ করেননি উনি। কারণ, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই!’
প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। তারা তৃণমূলের ভিডিয়ো ক্লিপ এবং সভায় অধীরের গোটা বক্তৃতাটি প্রকাশ করে দাবি করেছে যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজ্যের শাসক দল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কংগ্রেসের দাবি, অধীর ওই সভায় যা বলেছেন তার নির্যাস হলো, বাম ও কংগ্রেস গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য লড়াই করছে। তাই বিজেপিকে নয়, তৃণমূলকে নয়, ভোট দিতে হবে বাম-কংগ্রেসকে। এর আগে ও পরে আরও অনেকগুলো কথা বলেছেন অধীর। শুধুমাত্র একটা অংশ তুলে ধরে বিকৃত প্রচার করা হচ্ছে। শুধু কমিশনে অভিযোগ জানানোই নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনি পদক্ষেপের কথাও ভাবছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
অধীর তাঁর ভাইরাল হওয়া বক্তব্য সম্পর্কে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমার ভিডিয়ো দেখে নিন। সবটা দেখলেই বোঝা যাবে, আমি কী বলতে চেয়েছি। বিজেপি আর তৃণমূল একই। বিজেপি মানেই তৃণমূল। আর তৃণমূল মানেই বিজেপি।’ তৃণমূলনেত্রীকে পাল্টা আক্রমণ করে অধীরের তোপ, ‘আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায় দল করি না। উনি কী ভুল করছেন, সেটা ৪ জুন বুঝতে পারবেন। আপনারা বিরোধীদের মূর্খ ভাববেন না।’
কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘আমি জানি না অধীরজি কোন প্রেক্ষিতে কী বলেছেন। তবে আমাদের লক্ষ্য, বাংলায় বিজেপির আসন সংখ্যা যতটা সম্ভব কমানো।’ জয়রামের সংযোজন, ‘ওরা (বিজেপি) গতবার ৪২টির মধ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। ওদের আসন কমাতেই হবে এবং সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এটা বিধানসভা নয়, লোকসভা নির্বাচন। বাম ও কংগ্রেস বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের সদস্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনিও ইন্ডিয়া ব্লকে আছেন, তবে তাঁদের সঙ্গে আমাদের সিট শেয়ারিং হয়নি।’ যদিও তেহট্টের সভা থেকে মমতার দাবি, বাংলায় কোনও ইন্ডিয়া জোট হয়নি। তাঁর কটাক্ষ, ‘এখানে সিপিএম আর কংগ্রেসের ঘোঁট হয়েছে।’