• নিজেদের ফেভারিট মানছেন না, বৃত্ত পূর্ণ করাই লক্ষ্য হাবাসের...
    আজকাল | ০৪ মে ২০২৪
  • সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: আইএসএলের সবচেয়ে সফল কোচের নাম কী? কোনও স্পোর্টস কুইজ প্রতিযোগিতায় এই প্রশ্ন করা হলে, সবাই বোধহয় সঠিক উত্তর দেবেন। টুর্নামেন্টের দশ বছরের ইতিহাসে সেরা কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। মোট চারবার ফাইনালে উঠেছেন। দু"বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। একবার রানার্স। এবার আইএসএল ট্রফির হ্যাটট্রিকের সুযোগ রয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই মিরাকেল করে দেখিয়েছেন। বছর শেষে হারের সরণি থেকে নতুন বছরে রাজপথে ফিরেছে মোহনবাগান। তাঁর সিংহভাগ কৃতিত্ব প্রাপ্য বর্ষীয়ান কোচের। আইএসএলে তিনি বেঞ্চে থাকাকালীন মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছে সবুজ মেরুন ব্রিগেড। সেটা ভুবনেশ্বরে প্রথম সেমিফাইনালে ওড়িশার বিরুদ্ধে। যুবভারতীতে এখনও অপরাজেয়। অন্যদিকে তাঁর কাউন্টারপার্ট পিটার ক্র্যাকির কোচ হিসেবে এটা প্রথম মেগা ফাইনাল। তাই ধরে নেওয়াই যায় মস্তিষ্কের লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন হাবাস। তারওপর ঘরের মাঠে ফাইনাল। ৬২ হাজার সমর্থক। একটু হলেও খাতায়-কলমে এগিয়ে মোহনবাগান। তবে নিজেদের ফেভারিট মানছেন না হাবাস। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ফাইনালে কেউ ফেভারিট হয় না। হাবাস বলেন, "ফাইনালে কেউ ফেভারিট নয়। আমি ফেভারিট হিসেবে নামতেও চাই না। নব্বই মিনিটে একটা মুভ ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে। ফাইনালে কোনও একটা দলকে ফেভারিট বাছার মানে হয় না। তবে স্ট্যান্ডে আমাদের সমর্থকরা থাকবে। তার একটা প্রভাব ফুটবলারদের মধ্যে পড়বে। আমরা আগের মরশুমের থেকে এবার বেশি শক্তিশালী। মুম্বই সিটি এফসিও অনেক উন্নতি করেছে। নির্দিষ্ট দিনে প্লেয়ারদের কমিটমেন্ট পার্থক্য গড়ে দেবে।" ২০২০-২১ মরশুমে আইএসএল ফাইনালে এই মুম্বই সিটির কাছে হেরেই রানার্স তকমা পায় তৎকালীন এটিকে মোহনবাগান। সেদিনও কোচের হটসিটে ছিলেন হাবাস। হারের ফলে আটকে যায় তাঁর আইএসএল হ্যাটট্রিক। এবার প্রতিশোধের সুযোগ রয়েছে। প্রায় চার বছর আগে করোনাকালে গোয়ায় ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলতে হয়েছিল। এবার কলকাতায় ভরা যুবভারতীর সামনে খেলবেন দিমিত্রি,‌ কামিন্সরা।‌ তবে এটাকে প্রতিশোধের ম্যাচ হিসেবে দেখছেন না বাগান কোচ। হাবাস বলেন, "আমার কাছে প্রতিশোধের ম্যাচ নয়। বদলা মাফিয়ারা নেয়। আমার জন্য আরও একটা ফুটবল ম্যাচ। আমরা ভাল প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হব। ফাইনাল নিয়ে আমি খুবই উত্তেজিত। ট্রফি পেতে আমাদের ভাল খেলতে হবে। মুম্বই, গোয়া সহ আমরা বিভিন্ন জায়গায় ফাইনাল খেলেছি। তবে এটা স্পেশাল। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে ফাইনাল খেলার গুরুত্বই আলাদা।" আইএসএল ফাইনাল এবং হাবাস যেন সমার্থক শব্দ। সেটা একপ্রকার মেনে নেন বাগান কোচ। তবে একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, এটা মোটেই বাড়তি অ্যাডভান্টেজ দেবে না। ওড়িশার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ৯০ মিনিটেই শেষ করেন পেত্রাতোস, কামিন্সরা। ফাইনালেও এক্সট্রা টাইম বা টাইব্রেকার পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান না বাগান কোচ। কথাবার্তার বুঝিয়ে দিলেন, প্রথম থেকেই অ্যাটাকিং ফুটবল খেলবেন। হাবাস বলেন, "আমরা ৪৫ মিনিটেই ম্যাচটা শেষ করে দিতে চাই। এক্সট্রা টাইমে নিয়ে যেতে চাই না। গরমের মধ্যে ম্যাচ টাইব্রেকারে যাক চাইব না। তবে যদি ম্যাচ সেই পর্যন্তও গড়ায়, আমরা তৈরি।" তাঁর জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে বাগান। দলের দায়িত্ব নিয়েই টিম স্পিরিট বাড়ানোর কাজে লেগে পড়েন। মুছে দেন ফুটবলারদের মধ্যে যাবতীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বিভেদ। এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি। হাবাস অবশ্য কঠোর পরিশ্রমকেই যাবতীয় কৃতিত্ব দিলেন। তবে পাশাপাশি এও জানান, শক্তিশালী দল হাতে পান। প্রয়োজন ছিল শুধুমাত্র একতার। দায়িত্ব নিয়েই তাঁর প্রাথমিক কাজ ছিল, টিম স্পিরিট বাড়ানো। তাতে একশো শতাংশ সফল বর্ষীয়ান কোচ। মেগা ফাইনালের আগে শুক্রবার সন্ধেয় যুবভারতীর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারে মোহনবাগান দল। তবে এখন আর নতুন করে ট্যাকটিক্যাল কিছু শেখানোর নেই হাবাসের। মানসিকভাবে দলকে চাঙ্গা এবং চাপমুক্ত রাখাই মেগা ম্যাচের আগের হাবাসের চ্যালেঞ্জ। কার্ডের জন্য নেই আর্মান্দো সাদিকু।‌ বাকি সবাইকে পাওয়া যাবে। হালকা চোটের জন্য গত দু"দিন দলের সঙ্গে অনুশীলন করেননি মনবীর সিং। তবে শনিবার মাঠে নামার জন্য তৈরি। লিগ শিল্ড জেতার পর এবার লক্ষ্য আইএসএল ট্রফি। কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সবুজ মেরুনের কোচ? হাবাস বলেন, "লিগ শিল্ড জেতা সবচেয়ে কঠিন। কারণ একটানা ভাল খেলতে হয়। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হয়। তাই ওটা বেশি স্পেশাল। নিয়মিত লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই আসল ট্রফি। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এটা আমাদের কাছে আরও একটা সুযোগ। আমাদের বৃত্ত পূর্ণ করতে হবে। মরশুমের প্রথম থেকেই আমরা ভাল খেলেছি। চ্যাম্পিয়ন না হলে সেগুলোর মূল্য কমে যাবে।" আইএসএলের ইতিহাসে কোনও দল পরপর চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এবার সেই রেকর্ডের হাতছানি হাবাসের বাগানের সামনে। ছবি: অভিষেক চক্রবর্তী
  • Link to this news (আজকাল)