Isha Khan Choudhury : ঈশাই কি কোতোয়ালি হাভেলির শেষ প্রহরী?
এই সময় | ০৪ মে ২০২৪
মানস রায়, মালদা
ভোট এলে মালদায় কোতোয়ালি প্রসাদের গায়ে রঙের প্রলেপ পড়ে। গনি খানের আমল থেকেই চলে আসছে এই রেওয়াজ। এ বার ব্যতিক্রম। প্রাসাদের বাইরের দেওয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। টাকার অভাবে কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খানের সমর্থনে দেওয়াল লিখন বা ব্যানার-পোস্টারও তেমন নজরে পড়ছে না। অথচ গনি খান চৌধুরী, আবু হাসেম খান চৌধুরীর পরে কোতোয়ালি প্রাসাদের ব্যাটন ভাইপো ঈশা খান চৌধুরীর হাতে। তিনি সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন হুড খোলা জিপে। প্রচারও একেবারে জৌলুসহীন।জেলার দু’টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীদের প্রচারে ইতিমধ্যে এসেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের এক ঝাঁক মন্ত্রী এমনকী টলিউডের তারকারাও। বিজেপিও টক্কর দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে প্রচারে এনে। সেখানে কংগ্রেসের প্রচার চমকহীন। মালদা উত্তর আর মালদা দক্ষিণ এই দুই কেন্দ্রের দুই প্রার্থী মোস্তাক আলম আর ঈশা খান চৌধুরী সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত নিজেরাই নিজেদের মতো করে দৌড়চ্ছেন।
সঙ্গী স্থানীয় নেতাকর্মীরা। প্রথম প্রথম প্রচারের জন্য বেশ কিছু ভারী নাম শোনা গিয়েছিল, কিন্তু ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে সেই নামগুলোর আসার সম্ভাবনাও ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আসার খবর থাকলেও এখন শোনা যাচ্ছে, তিনিও নিশ্চিত নন। অথচ, গনি খানের আমলে তো বটেই, পরে ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু বাবু) আমলেও মালদায় ভোট প্রচারে কংগ্রেস হাইকমান্ডের শীর্ষ নেতৃত্বের আসাটা অনিবার্য ছিল।
গত নির্বাচনের আগেও সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এসে সভা করেছেন। কিন্তু এবার সব যেন ভো-কাট্টা। নেতৃত্ব স্বীকার না করলেও দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, টাকা নেই। তাই বলে কি কংগ্রেসের আশা শূন্য? একথা শুনে হা হা করে হেসে উঠেছেন এক বিজেপি নেতা। তাঁর মন্তব্য, ‘মালদায় কংগ্রেসকে অবহেলা করা তাও আবার লোকসভা ভোটে! এটা কোনও মূর্খও ভাববে না।’
তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘মালদায় কংগ্রেসকে যতই সাইনবোর্ড হয়ে যাওয়া দল বলি না কেন, বহু মানুষের আবেগে কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে গিয়েছে। অবশ্যই বরকতদার জন্য। কিন্তু বরকতদার নাম ভাঙিয়ে বোধহয় আর বেশিদিন চলবে না। কারণ এই প্রজন্মের ভোটাররা গনি খানকে দেখেনি।’ গনি মিথ আর কতদিন? এ বারের ভোটে প্রশ্নটা বোধহয় একটু বেশি করেই উড়ে বেড়াচ্ছে মালদায়। ঈশা অবশ্য প্রশ্নটা শুনে আপত্তি করেছেন।
তাঁর কথায়, ‘বরকতদা মানে আমার জেঠু, মোটেই মিথ নন। তিনি সত্যিকারের কাজের মানুষ ছিলেন। তাঁর অবদান মালদার মানুষ মনে রেখেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত এ বারেও প্রচারে এসে গনিখান চৌধুরীর কথা বলেছেন। তৃণমূলের মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র একসময় গনি খান চৌধুরীর সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন। তিনিও বলেছেন, ‘বরকতদা শ্রদ্ধেয় মানুষ, মালদার মানুষ কোনওদিন তাঁকে ভুলবে না। কিন্তু সব কিছুতে ওঁকে টানতে হবে কেন?’
এই প্রথম মালদা উত্তর কেন্দ্রে কোতোয়ালির কোনও প্রার্থী নেই। মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে ঈশা খান চৌধুরী একমাত্র প্রতিনিধি। বলা ভালো, মালদার কংগ্রেসি রাজনীতিতে কোতোয়ালি প্রাসাদের শেষ প্রহরী তিনি। গনি খান নেই। তবে তাঁর ডব্লিউএমডি-৪০৮৫ নম্বরের মার্সিডিজটা কোতোয়ালি প্রাসাদের গ্যারাজের এক কোণে পড়ে রয়েছে। ১৮ বছর তার চাকা ঘোরেনি। অথচ একটা সময়ে মালদার শাহেনশার প্রিয়তম বাহন ছিল সুইস এডিশনের গাড়িটা।
বলা ভালো, গ্রামের মানুষ তাঁদের আদরের বরকত সাহেব ও তাঁর গাড়িটাকে প্রায় সমার্থক করে নিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে গনি খানের গাড়িটার মতোই মালদার রাজনীতিতে কি কোতুয়ালি প্রাসঙ্গিকতা হারাবে, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।