• নির্বাচন আসে-যায়, কিছুই পান না দৃষ্টিহীন তিন ভাই
    এই সময় | ০৪ মে ২০২৪
  • গৌতম ধোনি, করিমপুর

    ওঁরা তিন ভাই। আর পাঁচ জনের মতো তাঁদের দু’চোখে আলো নেই। জন্মান্ধ। তবে দু’চোখ ভরা স্বপ্ন রয়েছে। সেই ছোট থেকেই। বয়স যখন আট-নয়, ভোট চাইতে আসা বিভিন্ন দলের নেতাদের প্রতিশ্রুতি শুনে মনে অনেক আশা জাগত নদিয়ার করিমপুর বিধানসভার হোগলবেড়িয়া থানার বালিয়াশিশা গ্রামের আনন্দ বিশ্বাস, ভক্ত বিশ্বাস ও পতিরাম বিশ্বাসের। পঞ্চায়েত, বিধানসভা বা লোকসভা ভোট এলে আশায় বুক বাঁধতেন তাঁরা।এ বার বোধ হয় তাঁদের একটা হিল্লে হবে। মিনিমাম একটা ব্লাইন্ড ওয়াকিং স্টিক, সরকারি কোনও সাহায্য নিশ্চয় মিলবে। নেতাদের প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে কৈশোর, যৌবন পার করে আজ তাঁরা বৃদ্ধ। তিন জনেই এখন ষাটোর্ধ্ব। বড় ভাই আবার সত্তর ছুঁয়েছেন। তিন জনেরই বড় প্রাপ্তি বলতে শুধু মানবিক ভাতা।

    তাও আবার সেটা জুটেছে ২০১৮ সালে। এত না পাওয়ার পরেও ক্ষোভ, অভিমান একটুও পুষে রাখেননি তাঁরা। এবারও তাঁরা ভোট দেবেন। পতিরাম বলেন, ‘কেন যাব না? এটা তো অধিকার, দায়িত্বও।’ আনন্দরা আসলে চার ভাই। প্রথম তিনজন জন্মান্ধ। স্কুলে পড়া হয়নি কারও। তবে তাঁদের সঙ্গে কথা বললে মনেই হবে না, তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

    আবার দৃষ্টিহীন বলে এমন নয় যে তাঁরা গ্রাম, জেলা, রাজ্য বা দেশের কোনও খবর রাখেন না। গ্রামের চেনা রাস্তা দিয়ে নিত্যদিন হেঁটে বাড়ি ফেরেন তিনজনই। চেনা চাষের জমিতে হেঁটে গিয়ে জল দেওয়া, ফসল তোলার কাজও করেন তাঁরা। সঙ্গে বাড়ির বিভিন্ন কাজও। এমনকী পাঠকাঠি দিয়ে মেপে জমির পরিমাণও বের করে দিতে পারেন।

    তিন ভাই-ই আবার কীর্তন ও লোকগানের শিল্পী। গ্রামের হরিসভা থেকে শুরু করে কেউ মারা গেলে, শেষযাত্রায় খোল-করতাল নিয়ে ডাক পড়ে তাঁদেরই। মেজ ভাই ভক্ত বলেন, ‘কীর্তন বা লোকগানের জন্য শুধু গ্রাম নয়, আশপাশের গ্রাম থেকে প্রায়শই ডাক আসে। তবে এজন্য কোন পারিশ্রমিক দাবি করি না আমরা।’

    আগামী মঙ্গলবার ৭ মে মুর্শিদাবাদ লোকসভার ভোট রয়েছে। আনন্দরা নদিয়ার বাসিন্দা হলেও করিমপুর বিধানসভা এই লোকসভার মধ্যে। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন দলের নেতারা তাঁদের দরজাতেও এসেছেন ভোট চাইতে। তাঁদের কথা শুনে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে বড় ভাই আনন্দের। তিনি বলেন, ‘নেতাদের প্রতিশ্রুতি শুনে মনে মনে হাসি। তবে ভোট চাইতে তাঁরা বাড়িতে এলে সৌজন্যের খামতি রাখি না।’

    কিছু চাইছেন না? আনন্দের মন্তব্য, ‘বিভিন্ন দলের গ্রাম বা ব্লক স্তরের যে নেতারা ভোট চাইতে আসেন, তাঁদের ক্ষমতা কতটুকু সেটা তো জানি। তাই কিছু আর চাই না। পথ চলার ব্লাইন্ড স্টিকটাও কেউ কিনে দেয়নি। তাছাড়া, আমাদের জীবনে না পাওয়ার তালিকাটা এত বড় যে চেয়েও কিছু মিলবে না সেটা জানি।’

    ভক্ত বলেন, ‘অপেক্ষায় থেকে থেকে ছ’বছর আগে এক হাজার টাকা করে পাচ্ছি তিনজনেই। কিছু না পাওয়ার সঙ্গে দায়িত্ব, কর্তব্যের কোনও তুলনা করা উচিত নয়।’
  • Link to this news (এই সময়)