রক্তাক্ত এক ব্যক্তিকে একটি জুয়েলারি শোরুম থেকে বের করে এনে গাড়িতে বসানোর একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্য়াল মিডিয়ায়। কেউ কেউ বলছেন, এই ভিডিয়োটি কর্নাটকের কল্যাণ জুয়েলার্স শোরুমের, যেখানে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।ভিডিয়োতে দেখা যায় শোরুমের চারদিক ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে শোরুমের সামনের ছোটাছুটি করছেন অনেকে। একাধিক নেটাগরিক এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ করা হচ্ছে, রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণের পর এবার এই রাজ্যেও আরও একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সন্ত্রাসবাদীরা। এই ভিডিয়ো শেয়ার করে আবার একজন লিখেছেন, 'নির্বাচনে জিতিয়ে কংগ্রেসকে শাসক হিসেবে বেছে আসলে মৃত্যুকে বেছে নেওয়ার সামিল। যদি কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোটকে বেছে নেয় মানুষ তাহলে প্রতিটি রাজ্যে এই ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। একাধিক জন একই দাবিতে এই ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন।
এই ভিডিয়ো পোস্ট করে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'কল্য়াণ জুয়েলার্সের শোরুমে বিস্ফোরণ। কর্নাটকের বেল্লারিতে বিস্ফোরণ। বহুজন আহত হয়েছেন, তদন্ত চলছে। কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই কল্যাণ জুয়েলার্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। চোর ইসলামি, জিহাদিদের দলকে ভোট দেবেন না।'
ফ্য়াক্ট চেক অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে এসি মেরামতির সময় কর্নাটকের বেল্লারিতে কল্যাণ জুয়েলার্সের শোরুমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বেল্লারি এসপি রঞ্জিত কুমার বান্দারু সংবাদ মাধ্যম 'আজ তক'-কে নিশ্চিত করেছেন কল্যাণ জুয়েলার্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রের কথা ভিত্তিহীন।
কী ভাবে উঠে এল সত্য? কীওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করে, 'হিন্দুস্তান টাইমস কন্নড়'-এর ইউটিউব চ্যানেলে-এ এই ঘটনা সম্পর্কিত ভাইরাল ভিডিয়োর কিছু অংশ পাওয়া যায়। এই ভিডিয়োর শিরোনাম হল 'কল্যাণ জুয়েলার্স, বেলারিতে এসি বিস্ফোরণ।'
এই ভিডিয়োতে পুলিশ, দমকলকর্মী এবং স্থানীয় লোকজনকে শোরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সর্বত্র। প্রতিবেদনে শোরুম বিল্ডিংয়ের বাইরে থেকে তোলা একটি ভিডিয়োতে একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে ইংরেজি এবং কন্নড় ভাষায় 'কল্যাণ জুয়েলার্স' লেখা রয়েছে।
এশিয়ানেট সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী , দোকানের এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেমে গ্যাস রিফিল করার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আহমেদ বাশা, সৈয়দ তাবরেজ বাশা, সৈয়দ জুবায়ের, অরুণ ও নিঙ্গাপ্পা আহত হয়েছেন এবং আহমেদ বাশার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আহত সকলকে ভিআইএমএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে, এ ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসাবীদ ষড়যন্ত্রের কোনও যোগ নেই। কন্নড় প্রভা এবং টাইমস নাউ -এর খবরেও এসি রিফিল করার সময় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করা হয়েছে এই ঘটনাকে।
কী বলছে কর্ণাটক পুলিশ?কর্নাটক পুলিশও তাদের একটি টুইটে এই ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। লেখা হয়েছে, 'এই ঘটনার কারণ হল এয়ার কন্ডিশনার বিস্ফোরণ। বেল্লারি এসপি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। অনুগ্রহ করে গুজব ছড়াবেন না বা কোনও প্রকার গুজবে কান দেবেন না।'
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হয় বেল্লারির এসপি রঞ্জিত কুমার বান্দারুকে। কল্যাণ জুয়েলার্সে বোমা বিস্ফোরণের কথা তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন। বলেন, 'শোরুমে এসি মেরামতির কাজ চলছিল। টেকনেশিয়ানরা সেটিতে গ্য়াস ভরছিলেন। এই সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। অবহেলার পরিপ্রেক্ষিতে কল্যাণ জুয়েলার্স শোরুম ও এসি সার্ভিস সেন্টারের বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট দায়ের হয়েছে।'
এর থেকেই স্পষ্ট কর্নাটকে এসি মেরামতের সময়ে বিস্ফোরণের ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে অভিহিত করে মানুষের মধ্য়ে বিভ্রান্তি ছাড়ানো হচ্ছে।
(This article was originally published by Aajtak Live and later edited and translated by Ei Samay Digital)