জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ৬২ হাজার দর্শকের গর্জন শেষপর্যন্ত থামিয়েই দিলেন পিটার ক্রাতকি! কথা দিয়ে কথা রাখলেন মুম্বই সিটি এফসি-র (Mumbai City FC) কোচ। আইএসএল ফাইনালের (SL Final 2023-24) আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে ক্রাতকি দিয়েছিলেন আইএসএল ফাইনালের পূর্বাভাস। শনিবার সন্ধ্য়ায় কুরুক্ষেত্রে নেমে তা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিলেন। গতবারের চ্য়াম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে (Mohun Bagan Super Giant vs Mumbai City FC, MBSG vs MCFC) ৩-১ উড়িয়ে, মুম্বই সিটি এফসিকে করলেন আইএসএল চ্য়াম্পিয়ন (ISL Champion 2023-24)। গঙ্গাপারের ট্রফি নিয়ে গেলেন আরবসাগরের তীরে! দ্বিতীয়বার ভারতসেরা হল মুম্বই। এর সঙ্গেই ১৮ দিন আগে মোহনবাগানের হাতে আইএসএল লিগ-শিল্ড হারানোরও মধুর প্রতিশোধও নিলেন পিটার। মরসুমের মাঝপথে ডেস বাকিংহামের জুতোয় পা গলিয়েছেন পিটার। এখান থেকে দলকে লিগ-শিল্ড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ও এবার আইএসএল ফাইনাল জেতানো। নিঃসন্দেহে ঠান্ডা মাথার কোচ ব্য়তিক্রমী হয়েই থেকে যাবেন।
এদিন মোহনবাগান গোট ম্য়াচ জুড়ে যে ফুটবলটা খেলল, তা দেখে একটাবারের জন্য়ও মনে হয়নি যে, কামিন্স-কাউকোরা ফাইনাল জেতার জন্য় মাঠে নেমেছেন। মনে হয়েছিল যে, লিগের আর পাঁচটা ম্য়াচের মতোই এই ম্য়াচ। প্রথমার্ধের প্রায় অধিকাংশ সময় জুড়েই মুম্বইয়ের আধিপত্য় ছিল মাঠে। বল পজেশন থেকে শুরু করে গোলমুখী শটের বিচার করলে, মোহনবাগানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিন ৩১ ও ৩৮ মিনিটে ছাংতের বল প্রতিহত না হলে, তাহলে মুম্বই এগিয়ে যেতে পারত। তবে খেলাটার নাম ফুটবল, যখন তখন গোল চলে আসতে পারে। ৪১ মিনিটে প্রথম গোলের রাস্তা তৈরি করে ফেলেছিল মোহনবাগান। অনিরুদ্ধ থাপার থেকে পাওয়া বল ধরে মুম্বইয়ের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন লিস্টন কোলাসো। তবে সেই লালচেনপা রুখে দেন কোলাসোকে। তবে ৪৪ মিনিটেই যুবভারতীকে সেলিব্রেট করার কারণ উপহার দিলেন জেসন কামিন্স। দিমিত্রি পেত্রাতোস একটি দূরপাল্লার গোলমুখী শট নিয়েছিলেন। কিন্তু ফুর্বা লালচেনপা ফিস্ট করে বল বাঁচিয়ে দেন। কিন্তু বল রিবাউন্ড করে আগুয়ান কামিন্সের নাগালের কাছেই চলে গিয়েছিল। কামিন্স লালচেনপাকে একা পেয়ে চিপ করে তাঁর মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। বিরতির ঠিক আগেই বাগান সমর্থকদের আনন্দে মাতিয়ে হাবাসের শিষ্যরা ১-০ এগিয়ে মাঠ ছাড়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মুম্বই সমতায় ফেরে। নগুয়েরার বল ধরে বক্সে ঢুকেছিলেন জর্জ পেরেরা দিয়াজ়। মনবীর-হেক্টর চেষ্টা করেও মুম্বই সিটির আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে আটকাতে পারেননি। এরপর যত সময় এগোচ্ছিল তত যেন মোহনবাগান ম্য়াচ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। মুম্বই এর মধ্যে জোড়া গোলের সুযোগ নষ্ট করেও ৮১ মিনিটের মাথায় ২-১ ব্য়বধানে এগিয়ে যায়। বিপিন সিংয়ের গোল করে মুম্বইকে সেলিব্রেশনে ভাসান। সবুজ-মেরুনের জঘন্য রক্ষণের সঙ্গে মিশেছিল গোলরক্ষক বিশাল কাইথের ভুল। এখানেই যেন মোহনবাগান খেলা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যায়। সংযুক্তি সময়ে তৃতীয় গোলও খেয়ে যায় মোহনবাগান। আইএসএল ফাইনালেই মুম্বইয়ের জার্সিতে নিজের অভিষেক গোল করলেন ইয়াকুব। এরসঙ্গেই মোহনবাগানের কফিনে পুঁতে দেন শেষ পেরেক।এদিন ২৩ বছর পর ত্রিমুকুট জেতার সামনে দাঁড়িয়েছিল মেরিনার্স। ২০০১ সালে একই মরসুমে জাতীয় লিগ, ফেডারেশন কাপ, কলকাতা লিগ, সিকিম গোল্ড কাপ এবং বরদোলই ট্রফি জিতেছিল এই ক্লাব। তখন দলের কোচ ছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। ডুরান্ড কাপ, আইএসএল লিগ-শিল্ড জেতা দল পরপর দু'বার আইএসএল চ্য়াম্পিয়ন হয়েই ত্রিমুকুট জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আপাতত স্বপ্নই থেকে গেল।