• ৫৫% কোভিশিল্ড টিকাপ্রাপকের কোনও না কোনও সাইড এফেক্ট! ভয় ধরাল অসম মেডিক্যাল কলেজের গবেষণা
    এই সময় | ০৫ মে ২০২৪
  • করোনা পর্বে নেওয়া কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের সাইড এফেক্টের বিষয়টি নিয়ে বড় স্বীকারোক্তি প্রস্তুতকারী সংস্তা অ্যাস্ট্রাজেনেকার। তারপর থেকেই লাগাতার সংবাদ শিরোনামে এই কোভিড টিকা। আদৌ কি কোভিশিল্ড প্রাপকদের ভয়ের কোনও কারণ রয়েছে? এই টিকা নিয়ে থাকলে কি হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেন হ্যামারেজের মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে?ভারতে কোভিশিল্ড টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর প্রকাশ্যে আসেনি। ভারতীয় চিকিৎসক এবং কোভিড বিশেষজ্ঞরা জোরের সঙ্গেই এমনটা জানাচ্ছেন। তবে এর মাঝেই উদ্বেগজনক রিপোর্ট পেশ করল অসম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ডিব্রুগড়ের এই হাসপাতালের চিকিৎসক-গবেষকরা এই কোভিশিল্ড নিয়ে একটি বিস্তারিত গবেষণা চালিয়েছেন। ICMR অনুমোদিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে হওয়া এই গবেষণা জানাচ্ছে, কোভিশিল্ড প্রাপকদের ৫৫ শতংশই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার স্বীকার হয়েছেন।

    ৫৫ শতাংশ টিকাপ্রাপক জ্বর, মাথা যন্ত্রণার মতো রোগে ভুগেছেন। প্রথম ডোজ নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই ধরণের সাইড এফেক্ট দেখা গিয়েছে টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে।

    তবে গবেষকরা আশ্বাস দিয়েছেন, কোনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কোভিশিল্ড প্রাপকদের মধ্যে দেখা যায়নি। অসম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তথা এই গবেষণার প্রধান গায়ত্রী গগৈ বলেন, 'আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ৫৫ শতাংশ টিকাপ্রাপক কোভিশিল্ড নেওয়ার পর ছোটখাটো সমস্যায় ভুগেছেন। যেমন জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, শরীরে গাঁটে গাঁটে ব্যথা কিংবা ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা অনুভব করেছেন তারা। বাকি ৪৫ শতাংশ টিকাপ্রাপকদের কোনও সমস্যাই হয়নি। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর মাত্র ৬.৮ শতাংশের সাইড এফেক্ট হয়েছে, যা সামান্য। এক বছর ধরে আমরা যে গবেষণা চালিয়েছি তাতে টিকাপ্রাপকদের মধ্যে কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।'

    গায়ত্রী গগৈ জানিয়েছেন, গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরা হয় বিকলাঙ্গ, প্রাণের ঝুঁকিপূর্ণ বিরল রোগ। তিনি বলেন, 'প্রবীণরা যাও বা সাইড এফেক্টে ভুগেছেন, তরুণদের মধ্যে তাও দেখা যায়নি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে কোমরবিড রোগীদের কোভিশিল্ড নেওয়ার পর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই দেখা যায়নি।'

    এই গবেষণা চালানো হয় ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে। কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রথম চালু হয় সে সময়। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত গবেষণা চলে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ২০২১ সালে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের বাড়বাড়ন্তের সময় দেখা গিয়েছে, ৬১ শতাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ৩৯ শতাংশের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তারা প্রত্যেকেই কোভিশিল্ডের টিকা গ্রহণ করেছিলেন।

    ICMR-এর প্রাক্তন জাতীয় সভাপতি ড: রাজন শর্মা বলেন, 'প্রত্যেক ওষুধেরই কোনও না কোনও সাইড এফেক্ট থাকে। করোনা পর্বে এতটা সময় ছিল না যে টিকার ট্রায়াল রান সম্পূর্ণ করে তবে তা বাজারে চালু করা হবে। এর জেরে টিকাপ্রাপকদের কোথাও না কোথাও গিয়ে একটু আধটু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। করোনা পর্ব আমাদের কাছে তখন একটি অন্ধকার গুহার মতো ছিল। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য আমি নিজে টিকা নিয়েছিলাম আগে।' ড: রাজন শর্মা আরও বলেন, 'মনমোহন সিং সরকারের সময় সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে গিয়েছিল ভারতে। সেটির মৃত্যুর হার ছিল ৭.৪। সে সময় কোনও লকডাউনও ছিল না। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ২.৮ শতাংশ। কোনও ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য ন্যূনতম তিন বছর ট্রায়াল রান দেওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু, সে সময় আমাদের কাছে এত সময় ছিল না। টিকাকরণে আমাদের দেশ বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে।'

    ICMR-এর প্রাক্তন বিজ্ঞানী ড: রমন গঙ্গাখেদকর বলেন, '১০ লাখ কোভিশিল্ড প্রাপকের মধ্যে কেবলমাত্র সাতজনের থ্রম্বসিস বা থ্রম্বসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।' পাশাপাশি IMA-র সহকারী চেয়ারম্যান ড: রাজীব জয়াদেবন বলেন, 'এই থ্রম্বসিস বা থ্রম্বসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম অত্যন্ত বিরল একটি রোগ। ফলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই ভারতীয় টিকাপ্রাপকদের।' কোভিশিল্ড নেওয়ার পর ভারতে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও খবর এখনও মেলেনি।
  • Link to this news (এই সময়)