• CV Ananda Bose : রাজ্যপালের ‘পদ’ দিয়েছে রক্ষকবচ সরলেই কি বিপদ বাড়বে বোসের?
    এই সময় | ০৫ মে ২০২৪
  • সোমনাথ মণ্ডল

    পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস-র বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলেও, সংবিধান তাঁকে ‘রক্ষাকবচ’ দিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করার কোনও আইনি পথ খোলা নেই কলকাতা পুলিশের কাছে। ফলে অভিযোগকারী মহিলা হেয়ার স্ট্রিট থানার দ্বারস্থ হওয়ার পরেও এখনও ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়নি। লালবাজারের বক্তব্য, তদন্ত শুরু না হলেও ঘটনার অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে কোনও বাধা নেই তাদের। আপাতত সে পথেই এগোচ্ছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ অনুসন্ধান দল।আইনজ্ঞদের মতে, যাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে, তিনি সংবিধানের ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সুরক্ষিত। যেখানে বলা হয়েছে, সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি কোনও মামলাই করতে পারবে না পুলিশ। তবে, যখন তিনি ওই পদে থাকবেন না, তখন তাঁকে আর রক্ষাকবচ দেবে না সংবিধান। সে কারণেই পুলিশ ঘটনার অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ আইনজ্ঞদের বক্তব্য, ‘পুলিশ এক্ষেত্রে তাদের রিপোর্ট রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরে জমা দিতে পারে।’

    ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি স্পেশাল এনকোয়ারি টিম গঠন করেছে লালবাজার। শনিবার সেই দলের তরফে রাজভবনের তিনজন এবং কলকাতা পুলিশের এক অফিসারকে ডাকা হয়। একই সঙ্গে রাজভবনের কাছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও চাওয়া হয়। সূত্রের খবর, রাজভবনের তিনজন পুলিশের ডাকে সাড়া দেননি। এমনকী, শনিবার পর্যন্ত সিসিটিভির ফুটেজও হাতে পাননি তদন্তকারীরা।

    অভিযোগকারী রাজভবনের অস্থায়ী ওই মহিলা কর্মী পুলিশকে জানিয়েছেন, ২৪ এপ্রিল বেলা পৌনে ১টা নাগাদ অফিসে গেলে রাজ্যপাল তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন এবং শ্লীলতাহানি করেন। এরপর ২ মে ফের রাজ্যপাল তলব করলে তিনি এক সুপারভাইজ়ারকে সঙ্গে নিয়ে চেম্বারে যান। সুপারভাইজ়ারকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। অভিযোগ, রাজ্যপালের সঙ্গে কথোপকথন চলার সময়ে তাঁকে প্রমোশনের টোপ দেন বোস। এমনকী গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টাও করেন বলে অভিযোগ।

    আইনজ্ঞদের মতে, অভিযোগকারীর এই বক্তব্য অনুসন্ধান রিপোর্টে উল্লেখ করতে পারে কলকাতা পুলিশ। এ বিষয়ে রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল জয়ন্ত মিত্র বলেন, ‘রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয় না। এমনকী, দেওয়ানি মামলাও করা যায় না। আপাতত, যতদিন তিনি রাজ্যপাল রয়েছেন, ততদিন আইনি পদক্ষেপ করার পথও প্রায় নেই। তবে পুলিশ অনুসন্ধান রিপোর্ট তৈরি করে রাখতেই পারে।’ তাঁর মতে, ‘রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়ে কোনও লাভ হবে বলেও মনে হয় না। সুপ্রিম কোর্টেরও হাত বাঁধা রয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে, তা এখনই বলতে পারছি না।’

    একই সুর প্রাক্তন পুলিশকর্তা পঙ্কজ দত্তের। তাঁর মতে, ‘সংবিধানে যে রক্ষাকবচ রয়েছে, তাতে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর করা যায় না। গুরুতর অভিযোগ উঠলে, রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে। অথবা, এফআইআর না করে পুলিশ অনুসন্ধান করে রিপোর্ট তৈরি করেও রাখতে পারে। ওই পদে যখন তিনি থাকবে না, তখন সেই রিপোর্টের সূত্র ধরে পুলিশ এগোতে পারবে।’ তবে সুপ্রিম কোর্টের রাস্তা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তা অবশ্য মনে করছেন না আইনজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের মতো পরিস্থিতি হলে, সংশ্লিষ্ট সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সমাধানের জন্য দরবার করতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে পারে।’
  • Link to this news (এই সময়)