সম্প্রতি একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ইউজার দাবি করেছেন যে, '@ECISVEEP ভোট কর্মীদের প্রাথমিক সুবিধা দিতে ব্যর্থ। পঞ্চাশোর্ধ্ব অনেকেই গুরুতর অসুস্থতায় ভোগেন, তাঁরা ২০২৪ সালের নির্বাচন সফল করার জন্য ধীরগতির ফ্যানের নীচে গরমে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।' বিষয়টি নজরে আসার পরে সেটির ফ্যাক্ট চেক করে দ্য হেলদি ইন্ডিয়ান প্রজেক্ট।
ফ্যাক্ট চেকলোকসভার নির্বাচনের প্রক্রিয়া আগামী ১৬ জুন ২০২৪-এ শেষ হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে লোকসভা গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বছর মোট সাত দফায় নির্বাচন হচ্ছে। গণনা আগামী ৪ জুন।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন একটি স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা যারা দেশের লোকসভা ও রাজ্যগুলি বিধানসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনার দায়িত্বে থাকে। এই সংস্থাটি ভারতে লোকসভা, রাজ্যসভা, রাজ্য বিধানসভা এবং দেশের রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি পদের জন্যও নির্বাচন পরিচালনা করে।
ভারতের নির্বাচন কমিশন গরম সম্পর্কে কী নির্দেশিকা জারি করেছে?বেসরকারি আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট স্কাইমেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সালকে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০২৪ 'সবচেয়ে উষ্ণ' ছিল। আর যদি বর্তমান সময়ের বিষয়ে আলোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি রেকর্ড করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করা কিছুটা কঠিন বলেই মনে করা হয়। তবে এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা আছে। যেমন-
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল কিট / প্রাথমিক চিকিৎসা কিট রয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রীষ্মকালে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ওআরএস সরবরাহ করা, যাতে কোনও ভোটার হিট-স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তা দেওয়া যায়। হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে হ্যান্ড-বিল সরবরাহ করা যেতে পারে। আসবাবপত্রের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে আসবাবপত্র যেমন টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চ ইত্যাদির সুবিধা থাকতে হবে যাতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং পার্টি এবং পোলিং এজেন্টদের কোনও সমস্যা না হয়।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন কি লোকসভা নির্বাচনের সময় স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করছে না?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমনটা নয়। নির্বাচন কমিশন ভোট কর্মীদের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সুযোগ-সুবিধার অভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে, সেগুলি পোলিং বুথের কর্মী ও ভোটারদের কথা মাথায় রেখেই আয়োজন করা হয়েছে। এই তথ্য থেকে এটা উঠে আসে যে ভারতের নির্বাচন কমিশন ভোটারদের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে যথাযথ পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে। কিছু উদাহরণ দিয়েও বিষয়টি বোঝান যেতে পারে। যেমন, তেলেঙ্গানার বর্তমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে।
ECI, IMD-ভারত আবহাওয়া বিভাগ, NDMA- জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের আধিকারিকদের সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। এটি প্রতিটি ভোটের পর্বের পাঁচ দিন আগে তাপপ্রবাহ এবং আর্দ্রতার প্রভাব পর্যালোচনা করবে।
গ্রামাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুযোগ-সুবিধা কেমন?কোনো ভোটার যাতে পিছিয়ে না থাকে সেজন্য গ্রামীণ এলাকায় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দায়িত্বও নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড অনুসারে, হিমাচল প্রদেশের লাহৌল এবং স্পিতির তাশিগাং-এ বিশ্বের সর্বোচ্চ ভোট কেন্দ্র রয়েছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫,২৫৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই এলাকাটি গ্রামীণ এলাকায় পড়ে এবং দুর্গমও।
মেঘালয়ের পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলার কামসিং গ্রামে নদীর তীরে অবস্থিত একটি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মীদের লাইফ জ্যাকেট পরতে হয়েছিল এবং ডুবুরিদের সঙ্গে যেতে হয়েছিল।
এছাড়াও, ভারত বৈচিত্র্যে পূর্ণ একটি দেশ। এখানে অনেক জাতি ও উপজাতি বাস করে। এমতাবস্থায়, সমস্ত সুযোগ-সুবিধা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া একটি কিছুটা জটিল প্রক্রিয়া। বহু বছর ধরে সরকার অনেক অংশে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, তবে গতি খুবই ধীর। এমতাবস্থায় নির্বাচন কমিশনের কাছে অবিলম্বে ওই সব অংশে পৌঁছানো অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়।
সুতরাং, উপরোক্ত বাস্তব তথ্য অনুসারে, বলা যেতে পারে যে এক্স হ্যান্ডেলে করা দাবিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল। কারণ এমন অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বছরের পর বছর ধরে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ভোট গ্রহণকে সুবিধাজনক করতে নির্বাচন কমিশন আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
(This story was originally published by The Healthy Indian Project and translated and edited by Ei Samay Digital as part of the Shakti Collective)