Gir National Park : এশিয়াটিক লায়নের ডেরায় দখলদারি বাড়াচ্ছে লেপার্ড!
এই সময় | ০৬ মে ২০২৪
শিলাদিত্য সাহা
গিরের জঙ্গলে ওরা বহু বছরের পড়শি। তবে বন্ধু নয়। একে অন্যকে এড়িয়ে চলতে বিলক্ষণ জানে। দু’জনেই নিশাচর, সাধারণত মুখোমুখি না-হয়েও রাতের অন্ধকারে শিকারের খোঁজে ঘোরে মাইলের পর মাইল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, এশিয়াটিক সিংহের বিশ্বের একমাত্র মুক্ত আবাস গিরে হু হু করে বাড়ছে পড়শি লেপার্ডের সংখ্যা। বৃদ্ধির হারে তা সিংহের দ্বিগুণের থেকেও বেশি। পরিস্থিতি এমনই, একই ল্যান্ডস্কেপে সিংহ ও লেপার্ডের দাপাদাপিতে ক্রমশ টান পড়ছে তাদের খাবার বা শিকারে। ফলে বাড়ছে মানুষ-পশু সংঘাত। আগেই গিরের কিছু সিংহ ও লেপার্ডকে রেডিয়ো কলার পরিয়ে গতিবিধি ট্র্যাক করা শুরু হয়েছিল। এবার দক্ষিণ গুজরাটেও লেপার্ডকে রেডিয়ো কলার পরানোর ভাবনায় রয়েছে গুজরাট বন দপ্তর।আন্তর্জাতিক লেপার্ড ডে উপলক্ষে ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্সের (আইবিসিএ) একটি আলোচনায় দিন দুয়েক আগে উঠে এসেছে এই নতুন চ্যালেঞ্জের কথা। গুজরাটের প্রধান মুখ্য বনপাল নিত্যানন্দ শ্রীবাস্তব জানাচ্ছেন, মানুষ ও বন্য জীবজন্তুর মধ্যে সংঘাত আটকানোই এখন তাঁদের কাছে সবথেকে কঠিন কাজ। নিত্যানন্দের কথায়, ‘গুজরাটের সাসান গির সংলগ্ন ৯টি জেলা মিলিয়ে গ্রেটার গির ল্যান্ডস্কেপে প্রায় হাজার লেপার্ড বাস করছে।
এর মধ্যে গির অরণ্যে ৬-৮ কিলোমিটার এলাকায় লেপার্ডের আনাগোনা ভালোই। সেখানে সিংহের সংখ্যাও কম নয়। দু’জনেই যখন শিকারের সন্ধানে বেরোচ্ছে, তখন লেপার্ড আশপাশের শস্যের জমি, আখের খেত, গ্রাম্য এলাকা থেকে গবাদি পশু তুলে নিচ্ছে হামেশাই। লেপার্ডের হানায় মানুষ জখম হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।’
হঠাৎ পরিস্থিতিটা কঠিন হয়ে পড়ছে কেন?
নিত্যানন্দের হিসাব, ‘গুজরাটে বনাঞ্চল ১১%। সেটার পরিমাণ বাড়েনি। কিন্তু ২০১৬ সালে যেখানে রাজ্যে ১৩৯৪টি লেপার্ড ছিল, সেখানেই ২০২৩-এর শুমারিতে আমরা অন্তত ২২৭৪টি লেপার্ড পেয়েছি, যা ৬৩% বেশি।’ ঘটনা হলো, ২০১৫ সালে গিরে সিংহ ছিল ৫২৩টি। ২০২০ সালের শুমারিতে সেই সংখ্যাই বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭৪, অর্থাৎ ২৮% বৃদ্ধি। এর সঙ্গে সিংহের এলাকাও বেড়েছে ৩৬%। আবার আর পাঁচটা রাজ্যের মতো গুজরাটেও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় নগরায়নের চাপ বাড়ছে। বন দপ্তরের তরফে প্রে বেস (শিকার) বাড়ানো হলেও লেপার্ড ও সিংহ নতুন এলাকার খোঁজে এমন জঙ্গলে ঢুকছে, যেখানে উপযুক্ত প্রে বেস নেই। ফলে নজর পড়ছে সংলগ্ন গ্রাম বা বসতি অঞ্চলে।
গিরের রেডিয়ো কলার পরানো একটি এশিয়াটিক সিংহ সম্প্রতি ঢুকে পড়ে জামনগর জেলায়, যেখানে এর আগে তাদের অস্তিত্ব ছিলই না। জামনগরে নীলগাই শিকার করে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছে সে। কিন্তু গির-সহ নানা জঙ্গলে লেপার্ডের বৃদ্ধির হার চিন্তা বাড়াচ্ছে। কারণ তাদের হানায় মানুষের মৃত্যু প্রায় নিয়মমাফিক ঘটনায় পরিণত হওয়ায় ক্ষোভও বাড়ছে। গিরে মানুষ-পশু সংঘাত নিয়ে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসে প্রকাশিত একটি স্টাডি বলছে, সিংহের আক্রমণে মানুষের সম্পত্তির ক্ষতি (গবাদি মৃত্যু, ফসল নষ্ট বা প্রাণহানি) লেপার্ডের তুলনায় (১৭.৪%) অনেক বেশি (৮২.৬%) হলেও ৮০% মানুষ সিংহকে পছন্দ করেন। সেই পছন্দটাই লেপার্ড বা চিতাবাঘের ক্ষেত্রে অনেক কম (২৮%)।
আইবিসিএর লিড স্পেশ্যালিস্ট কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘গিরের ভিতরে চিতল, সম্বর, নীলগাই মিলিয়ে অন্যতম সেরা প্রে বেস আছে। সিংহ আর লেপার্ড নিজেদের সাইজের অনুপাতে শিকার ধরে। সেটাতেই জঙ্গলের ইকোলজিক্যাল ব্যালান্স বজায় থাকে। কিন্তু গিরের বাইরে লেপার্ড গ্রামে ঢুকলে ছাগল-ভেড়া-কুকুর তো তুলে নেয়ই। মানুষ শিকারের ঘটনাও বেশ কিছু রয়েছে। ভোরে শৌচকর্মে বেরনো মহিলারা, এলাকা সম্পর্কে ধারণা না-থাকা ভিনরাজ্যের মজুর এদের সহজ টার্গেট হয়ে পড়ে।’
আপাতত বনকর্তাদের নজর দক্ষিণ গুজরাটে, যেখানে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে লেপার্ড বেড়েছে ১৪৫% হারে! তুলনায় উত্তর গুজরাটে লেপার্ড বৃদ্ধির হার কিছুটা কম, ৬৭%। আর যে সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ রিজিয়নে সবথেকে বেশি লেপার্ড (১,১১৭), সেখানে বৃদ্ধি হয়েছে ৫৯% হারে। কী ভাবে এদের সঙ্গে সংঘাত কমানো যায় বা মৃত্যু রোখা যায়, তা নিয়ে সম্প্রতি দেরাদুনের ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার তরফে বিশেষজ্ঞরা গুজরাটের বনাধিকারিক ও কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তবে নিত্যানন্দের কথায়, ‘প্রে বেস বাড়ানোটাই আসল চ্যালেঞ্জ। নইলে শিকারের খোঁজে লেপার্ড চাষের জমি, আখের খেতে ঢুকবেই। আমরা মনিটরিংও বাড়াচ্ছি।’