• মমতার পদযাত্রায় জনস্রোত
    বর্তমান | ০৬ মে ২০২৪
  • সুখেন্দু পাল, বধর্মান: হ্যামলিনের সেই বাঁশিওয়ালার গল্প জানতে বইয়ের পাতা ওল্টাতে হয়। তাঁর বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে সকলেই বেরিয়ে আসতেন। বাস্তবে সেই চিত্র যেন ধরা পড়ল বর্ধমানে তৃলমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রায়। তাঁর কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে ভিড় কিছুটা পাতলা ছিল। তাঁর হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দিতেই পিলপিল করে জনতা ছুটে এল। মুহূর্তের মধ্যে জনতার দখলে চলে যায় রেল ওভারব্রিজ। পুরসভার কাছ থেকে পদযাত্রা শুরু করতেই রাস্তার দু’পাশে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। 

    জনগর্জনে এদিন বর্ধমান কার্যত কাঁপতে থাকে। পদযাত্রা কার্জনগেটের দিকে যতই এগিয়েছে রাস্তার দু’পাশে ততই পাল্লা দিয়ে ভিড় বেড়েছে। দিদিকে একবার স্পর্শ করার জন্য ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেন অনেকে। ভিড় সামাল দিতে ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার পুলিস আধিকারিকদের নাজেহাল হতে হয়। শুধু রাস্তার দু’পাশ নয়, বাড়ির ছাদ থেকেও ‘দিদি দিদি’ আওয়াজ আসতে থাকে। তৃণমূল সুপ্রিমো তাঁদের দিকে হাত নাড়তে থাকেন। ছোটনীলপুর মোড়ের কাছে আওয়াজ ওঠে, ‘আয় বিজেপি দেখে যা তৃণমূলের ক্ষমতা।’ একটু এগতেই চিৎকার করে কয়েকজন বলতে থাকেন, ‘দিদি থাকতে বিজেপি সিএএ, এনআরসি করতে পারবে না।’ জনতার এই আওয়াজ ‘দিদি’র কানেও পৌঁছয়। মুখে কিছু না বললেও হাত নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেন তিনি তাঁদের সঙ্গেই আছেন।

    পদযাত্রায় তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে পা মেলান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ সহ জেলার অন্যান্য নেতারা। প্রায় চার কিলোমিটার পদযাত্রা করে তৃণমূল সুপ্রিমো থামেন পুলিস লাইনের কাছে। তাঁকে দেখার জন্য সেখানেও রাস্তার দু’পাশে স্থানীয়রা দাঁড়িয়েছিলেন। অন্যান্য কর্মসূচির মতো এদিনের পদযাত্রাতেও মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। নেত্রীকে এক ঝলক দেখার জন্য তাঁরাও ছুটতে থাকেন। বাঁকার ব্রিজের কাছে আসতেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। সেতুর ওপার থেকে তৃণমূল সুপ্রিমোকে দেখা যাবে এই আশায় রাস্তার দু’পাশে থাকা লোকজন ছুটতে থাকেন। 

    কয়েকদিন আগে বর্ধমান শহর লাগোয়া তালিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সভা করেছেন। ভিড়ের নিরিখে কে কাকে টক্কর দিল তা নিয়ে চর্চা হতেই পারে। তবে তৃণমূল নেত্রী এদিন ফের বুঝিয়ে দিলেন হ্যামলিনের সেই বাঁশিওয়ালার থেকে তাঁর ক্যারিশমা কোনও অংশে কম নয়। তীব্র রোদ বা গলদঘর্ম পরিস্থিতি উপেক্ষা করে তাঁকে এখনও এক ঝলক দেখার জন্য  জনতার ভিড় উপচে পড়ে। তিনি পদযাত্রা শেষ করে হেলিকপ্টারে চড়ে পানাগড়ের উদ্দেশে রওনা দেন। আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর না দেওয়া পর্যন্ত ভিড় রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকল। তখন মহিলারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েই চলছেন। আর মাইকে বেজে চলছে ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়।’
  • Link to this news (বর্তমান)