Lok Sabha Election: ইয়ং মাইন্ড কোন দিকে ঢলে, সবার নজর বাকি পাঁচ ফেজ়ে
এই সময় | ০৬ মে ২০২৪
এই সময়: শুধু নরেন্দ্র মোদীর কথায় চিঁড়ে ভিজছে? না তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সে ভাবে দাগ কাটতে পারছে না প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ? প্রথম দু’দফার ভোট মিটে যাওয়ার পরে এ নিয়ে কাটাছেঁড়া করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আগামিকাল, মঙ্গলবার দেশে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম দু’দফায় ভোটদানের হারের যে পরিসংখ্যান গত সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে।প্রদত্ত ভোটের হারে জালিয়াতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে সরব তৃণমূল, কংগ্রেস, বামেদের মতো দলগুলি। কিন্তু সার্বিক ভাবে আগের লোকসভা ভোটের তুলনায় ভোটদানের হার খানিকটা কম এবং এই বিষয়টি চিন্তায় রাখছে গেরুয়া শিবিরকে। আবার নিছক গরমের জন্যই ভোটদানের হার কমলো, না কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে ঢালাও ভোটদানের আগ্রহ কম, সে বিষয়ে বিরোধী দলগুলিও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছে না।
কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে পাঁচ ভাগের অন্তত দু’ভাগ ভোটারের বয়স ২৫-এর নীচে। তাই শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই বোঝার চেষ্টা করছে, নতুন মন কোন দিকে ঝুঁকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, এমনিতে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুগুলি দেশের তরুণ ভোটারদের প্রভাবিত করছে ঠিকই, তবে বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণ ভোটারদের বড় অংশ এখনও মোদীকে সরাসরি এর জন্য দায়ী করতে রাজি নন। গত ফেব্রুয়ারিতে সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ (সিপিআর) এবং একটি সংবাদমাধ্যমের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৫৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন না আগামী পাঁচ বছরেও কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
২৫ বছর বয়স পেরিয়েছে, এমন স্নাতক উত্তীর্ণদের মধ্যে অন্তত ৪১ শতাংশ বেকারত্বের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদিও এই হারটা মাধ্যমিক বা তার থেকে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নদের মধ্যে ৮ শতাংশের মতো। এই পরিসংখ্যান থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, তুলনায় বেশি শিক্ষিতরা বেকারত্বের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন এবং ভোটবাক্সে এর প্রভাব পড়ার কথা। তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন যেমন বলছেন, ‘কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির কারণে দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষ অত্যন্ত বিরক্ত। এর মধ্যে তরুণ প্রজন্মও রয়েছে। সেই জায়গা থেকে অনেকে ভোট দিতেও যাচ্ছেন না। এই ট্রেন্ড ইঙ্গিত করছে বিজেপির ভরাডুবি নিশ্চিত। নতুন প্রজন্ম বিজেপি-কে চায় না।’
যদিও রাজনৈতিক মহলের অন্য একটি বড় অংশের মত, দেশের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুগুলির দ্বারা প্রভাবিত হলেও সকলে এর জন্য মোদী বা তাঁর দলকে দায়ী করতে রাজি নন। কারণ সিপিআর সার্ভে অনুযায়ী, ১৯৯৬-এর পরে জন্মেছেন এমন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ৪৪ শতাংশের সমর্থন রয়েছে মোদী সরকারের পিছনে। ১৯৮০-এর পরে জন্মগ্রহণ করাদের মধ্যে এই হার ৪৮ শতাংশ এবং ’৮০-এর আগের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ।
বিরোধী দলগুলি এই বেকারত্ব, অনিশ্চিত কর্মসংস্থানের সুযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুগুলিতে কেন্দ্রকে বিঁধছে প্রায় প্রতিদিনই। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩০ বছরে দেশের অর্থনীতি ৬.৪ শতাংশ হারে বাড়লেও ২০০০-২০১২-র মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে মাত্র ১.৬ শতাংশ, ২০১২-১৯ এর মধ্যে সে ভাবে কোনও বৃদ্ধিই হয়নি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপির ইস্তেহারে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও অন্ত্রপ্রনিয়রশিপ বৃদ্ধির আশ্বাস দেওয়া হলেও এ বিষয়ে খুব নির্দিষ্ট কোনও রোডম্যাপ বা দিশা নেই। তার পরেও বিনামূল্যে দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়া, নতুন সড়ক নির্মাণ, বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সংযোগের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে ভোটারদের একটা বড় অংশ মোদীকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন।
অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার সমীক্ষায় আবার উঠে এসেছে, দেশের শহুরে এলাকার বাসিন্দা ১৮-৩৫ বছর বয়সিদের মধ্যে অন্তত ৮৩ শতাংশ কেন্দ্রের বিদেশনীতির পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, জি-২০ সামিট আয়োজনে ভারতের সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের গৌরব বাড়িয়েছে।
সার্বিক ভাবে তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ মনে করছে, বিশ্বের দরবারে ভারতকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে মোদী সরকার। এবং এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রায় দশ কোটি এবং ইনস্টাগ্রামে প্রায় ন’কোটি ফলোয়ারের মধ্যেও একটা বড় অংশ যে তরুণ প্রজন্ম— সেটা বলাই বাহুল্য। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘নতুন প্রজন্ম মোদীময়। গোটা দেশও মোদীময়। চারশোর বেশি আসন নিয়ে আবার মোদী সরকারই তৈরি হতে চলেছে। ভোটের হার সামান্য কম। কারণ বিরোধী বলে কিছু নেই।’ এখন সব পক্ষের নজর, শেষমেশ আগামী পাঁচদফার ভোটে এই তরুণ প্রজন্মের ভোট কোন দিকে যায়।