NKDA : জমিয়ে স্তূপ আর নয়, এবার আবর্জনার স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট
এই সময় | ০৬ মে ২০২৪
প্রশান্ত ঘোষ
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল! পাহাড়ের মতো উঁচু। যাবতীয় বর্জ্যের পাহাড়। তাতে বসছে কাক, চিল। পড়ে আছে মৃত গবাদি পশু। দুর্গন্ধে টেকা দায়। তার পাশ দিয়ে যেতে গেলে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসার জোগাড়। কলকাতার ধাপা কিংবা মহানগর লাগোয়া বিভিন্ন পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনার পাহাড় নিয়ে নাজেহাল কেবল সেখানকার বাসিন্দারা নন— সমস্যা পুরসভার আধিকারিদেরও। জঞ্জাল থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো এবং অন্যান্য কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ— এমন অভাব-অভিযোগের শেষ নেই। স্বভাবতই নাজেহাল হতে হচ্ছে পুর-আধিকারিকদের।এই সমস্যাসঙ্কুল অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আধুনিক ‘ওয়েস্ট টু ওয়েল্থ’ ব্যবস্থা গড়ছে নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ বা এনকেডিএ। স্মার্ট সিটি মিশনের অধীন ইন্দোর শহরের মতো ইন্টিগ্রেটেড সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে নিউ টাউনে। যার ফলে আচ্ছাদন দেওয়া বিশাল গোডাউনের মধ্যেই বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং সেই সঙ্গে বর্জ্য থেকে সার ও অন্যান্য ব্যবহারযোগ্য সরঞ্জাম তৈরি করা সম্ভব হবে। এয়ারপোর্টের মতো কনভেয়ার বেল্ট থাকবে ওই গোডাউনে। সেখানেই মেশিনের সাহায্যে বর্জ্য পৃথকীকরণ হবে। এর জন্য ১৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের স্মার্ট সিটি মিশন কর্তৃপক্ষ।
ভারতের মোট ৮৪টি শহর এই বরাদ্দ পেতে দরবার করলেও সব কিছু যাচাই করে মাত্র ১৮টি শহরকে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারক কমিটি। নিউ টাউনের তিনটি অ্যাকশন এরিয়া মিলিয়ে মোট পাঁচ থেকে সাত একর জমি দিয়েছে হিডকো। যার উপর গড়ে তোলা হবে সুবিশাল প্রসেসিং ইউনিট। এখন ডিপিআর তৈরি, টেন্ডারের কাজ চলছে। এনকেডিএ সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৭-’২৮ সালের মধ্যে এই ব্যবস্থায় আমূল বদলে যাবে নিউ টাউন-রাজারহাটের বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা। পূর্ব ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাট-নিউ টাউন ছাড়াও বিহারের মুজফ্ফরপুর, অসমের গুয়াহাটি ও ত্রিপুরার আগরতলা এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে।
যে ভাবে কাজ করবে এই প্রকল্প উৎসেই পৃথকীকরণ: নিউ টাউনের প্রতিটি আবাসন ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোয় দু’টি করে বিন দেওয়া আছে বর্জ্য জমানোর জন্য। ড্রাই ওয়েস্ট বিনে পেপার, কাঠ, প্লাস্টিক, কাচ, আলো, রবার, বোতল, থার্মোকল জমা হয়। ওয়েট ওয়েস্ট বিনে জমা করা হয় খাবার, ফুল, আনাজের খোসা, ডিমের খোলা, মাছের আঁশ, মাংস, হাড়ের মতো বর্জ্য।
বাড়ি বাড়ি বর্জ্য সংগ্রহ: এনকেডিএ-র কর্মীরা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমস্ত বর্জ্য সংগ্রহ করেন। রাস্তার পাশে যে সব ডাস্টবিন রাখা আছে, সেগুলো ভর্তি হলেই এনকেডিএ-র ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে মেসেজ পৌঁছে যায়। তখন সেখান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়।
ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস): বর্জ্য সংগ্রহের জন্য কোন গাড়ি কোন এলাকায় ঘুরছে, সেগুলো সত্যিই কাজ করছে নাকি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে ফাঁকি দিচ্ছে, সে সবই বোঝা যায় কম্যান্ড সেন্টারে। কারণ, বর্জ্য সংগ্রহের প্রতিটি গাড়িতে বসানো আছে ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো আছে।
ওয়েস্ট ট্রান্সফার স্টেশন: ছোট ছোট গাড়িগুলোয় আসা বর্জ্য জমা হয় ওয়েস্ট ট্রান্সফার স্টেশনে। সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সেগুলো লোড করা হয় বড় গাড়িতে। সলিড ওয়েস্ট আপাতত ধাপায় পাঠানো হচ্ছে। তবে বছর তিনেক পর সেগুলো নিউ টাউনের সলিড ওয়েস্ট প্রসেসিং ইউনিটে রাখা হবে। ওয়েস্ট ট্রান্সফার স্টেশনের সংখ্যা আপাতত ১৫।
বায়ো গ্যাস প্লান্ট: ওয়েট ওয়েস্ট প্রসেসিংয়ের জন্য দীর্ঘদিন আগেই অ্যাকশন এরিয়া ১-এ নিজস্ব ইউনিট গড়েছে এনকেডিএ। যেখানে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁ ও আবাসন থেকে রোজ গড়ে ৫-১০ টন বর্জ্য এসে পৌঁছয়। ওই সব বর্জ্য থেকে প্রথমে বায়ো গ্যাস এবং তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। ওই বিদ্যুতে আপাতত ১০০টি স্ট্রিট লাইট জ্বলছে।