এই সময়: মাথার উপর গনগনে রোদ। তার মধ্যেই খোলা জিপের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে তিনি। রাস্তায় কাউকে দেখতে পেলেই হাতজোড় করে নমস্কার করছেন। কখনও আবার জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছেন। মাথায় সাদা টুপি। গলায় গামছা। কপাল দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। মাঝেমধ্যেই গামছা দিয়ে ঘামটা মুছে নিচ্ছেন। পিছনে বাইকের লম্বা লাইন। কোনওটাতে কংগ্রেসের পতাকা বাঁধা। কোনওটাতে আবার লাল পতাকা উঠছে। বক্সে একটানা থিম সং বেজে চলেছে— ‘রেল, পানি, সেচ উন্নয়ন আনতে/দিদি-মোদী-ভাইপোর পোষা চোর তাড়াতে/এই মুর্শিদাবাদে সেলিমদাকে চাই..।’সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে এবার কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদ মহম্মদ সেলিম। তাঁর কাঁধে ভর করেই বাংলায় জয়ের খরা কাটানোর স্বপ্ন দেখছেন বাম সমর্থকরা। সেলিমের বাম রাজনীতিতে হাতেখড়ি কলেজ জীবন থেকে। তারপর রকেটের গতিতে উত্থান। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা ১০ বছর ডিওয়াইএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৯০ সালে রাজ্যসভার এমপি হন। পরপর দু’বার রাজ্যসভার এমপি হয়েছেন। ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথমবারের জন্য মন্ত্রী হওয়া। ২০০৪ সালে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে সংসদে পা রাখেন। ২০০৯ সালে ওই একই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালে রায়গঞ্জ থেকে জিতে আবারও এমপি হন। কিন্তু পরের লোকসভা ভোটে তিনি রায়গঞ্জে পরাজিত হন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে হুগলির চণ্ডীতলা থেকে লড়লেও জিততে পারেননি।
এবার লোকসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী করেছে দলের তরুণ তুর্কিদের। প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে একঝাঁক নতুন মুখ। সেই দলে অভিজ্ঞতার মুখ সেলিম। এবং সে কারণে এই ভোট সেলিমের কাছে মুখরক্ষার লড়াইও বটে। সেলিম জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদ থেকে ভোটে লড়ার জন্য প্রথম প্রস্তাবটা এসেছিল অধীর চৌধুরীর কাছ থেকে। অধীরের দাবি, ‘মুর্শিদাবাদে সেলিম ভাই অলরেডি জিতে গিয়েছেন।’ সেলিমের হয়ে মুর্শিদাবাদে প্রচার সভাও করেছেন অধীর।
তবে কি এবার নবাবের জেলা থেকেই সিপিএমের শূন্যের গেরো কাটতে চলেছে? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। সিপিএম-কংগ্রেসের জোট হলেও এখানে আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। ভোট কাটাকাটিতে কে লাভবান হবে, তা বলা কঠিন। ভোটের অঙ্ক অত সহজ না-হলেও সেলিম কিন্তু আশাবাদী। তাঁর কথায়, ‘জিতব বলেই তো মুর্শিদাবাদে লড়তে এসেছি। ২০১৯ ও ২০২১ সালের ভোটে মাল্টিপল ওয়েতে বাম ভোট চলে গিয়েছিল। গত লোকসভা ভোটে পুলওয়ামাকে সামনে রেখে ‘দেশ খতরে মে’ এই আবহ তৈরি করা হয়েছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সিএএ-এনআরসি নিয়ে একটা বাইনারি তৈরি করা হয়েছিল। ২০২৪-এ সেটা নেই।’