এই সময়, নয়াদিল্লি: বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব আসলে হিন্দু বিরোধী, তাই তাঁরা অযোধ্যার রামমন্দির পরিদর্শনে যাননি এখনও — চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগ তুলেই এবার লোকসভা নির্বাচনের বাকি পর্বে প্রচার ঝড় শুরু করতে চলেছে বিজেপি, দাবি দলীয় সূত্রের৷ এখনও পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরের প্রচারের প্রধান মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ লোকসভা ভোটের বাকি চারটি পর্বেও তিনিই দলকে নেতৃত্ব দেবেন৷অযোধ্যার ইস্যু তুলে ধরে বিরোধীদের নিশানা করার দায়িত্বও প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতেই তুলে নেবেন বলে দাবি জানানো হয়েছে দলীয় সূত্রে৷ যে মন্দির অদূর ভবিষ্যতে গোটা দেশের আন-বান-শান হয়ে উঠতে শুরু করেছে, সেই মন্দির এবং রামলালার মূর্তি পরিদর্শনে যেতে বিরোধী নেতা নেত্রীদের আপত্তি কোথায়? প্রশ্ন তুলবেন বিজেপি নেতারা৷ গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধনের পরে নিজের শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও প্রধানমন্ত্রী মোদী ফের অযোধ্যায় গিয়েছিলেন, রবিবার ৫ মে৷ সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেন রামলালাকে। এই ছবি তুলে ধরেই এবার বিরোধী শিবিরকে ব্যাপকভাবে নিশানা করার পরিকল্পনা করছে বিজেপি!
এর সঙ্গে সোমবারই নয়া ‘তথ্য’ যোগ করেছেন কংগ্রেসের বহিষ্কৃত নেতা আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণম। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির বানানোর পক্ষে রায় দেওয়ায় রাহুল অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। তার পরে সেখানে রামমন্দির হওয়ায় তাঁর রাগ বেড়ে যায়। তিনি তাঁর খুব ঘনিষ্ঠদের জানান, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মানা হবে না। রাজীব গান্ধী যেমন শাহ বানো মামলায় সুপারপাওয়ার কমিশন গড়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মানেননি, তেমনই করবেন তিনি! যদিও এই কথার সত্যতা সম্পর্কে কংগ্রেস কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠায় কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস ও বামেদের কোনও প্রতিনিধি ছিল না৷ ‘রাম মন্দির উদ্বোধন প্রকৃতপক্ষে বিজেপি এবং আরএসএস-র সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কর্মসূচি’ — অভিযোগ করে বিরোধী শিবির৷ এর পরেই বিরোধী শিবিরকে পাল্টা নিশানা করতে শুরু করেন বিজেপি নেতারা৷ বিরোধী শিবির দেশের গৌরব অযোধ্যাকে সুপরিকল্পিত ভাবে বয়কট করছে, এই অভিযোগ তুলে সরব হন গেরুয়া শিবিরের ছোট বড় সব স্তরের নেতানেত্রীরা৷
এই আবহে চলে আসে লোকসভা ভোট৷ প্রত্যাবর্তন বনাম পরিবর্তনের এই মহা যুদ্ধে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও প্রকারের বিরুদ্ধ প্রচার যাতে শুরু না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্যই কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির তরফে জানানো হয়েছিল, পরবর্তী কালে তারা সময় সুযোগ মত রামমন্দির পরিদর্শন করবেন৷ সপা এবং কংগ্রেসের তরফে দেওয়া এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি এখনও৷ কোনও বড় মাপের কংগ্রেস বা সপা নেতা নেত্রী এখনও পর্যন্ত রামলালাকে পরিদর্শন করেননি৷
এই ইস্যুটিকেই হাতিয়ার করে বিজেপি নেতারা এবার সারা দেশে লোকসভা ভোটের বাকি পর্বের নির্বাচনে প্রশ্ন তুলবেন, কেন রাম মন্দির উদ্বোধনের ১০৩ দিন পরেও বিরোধী নেতা নেত্রীরা রামলালা মূর্তি পরিদর্শন করার সময় পেলেন না? এই প্রসঙ্গেই বিরোধী নেতা নেত্রীদের হিন্দু বিরোধী তকমা দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হবে দলের পক্ষে, দাবি সূত্রের৷ এই মর্মেই হাতিয়ার করা হতে পারে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে, যেখানে রামলালার দর্শন করার জন্য ইতিমধ্যেই দলের তিন নেতা নেত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে শতাব্দী প্রাচীন দল৷
এ দিন আবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেন, ইন্ডিয়া ব্লকের ডিএনএ-তে কোনও রাম-ভক্তি নেই, রয়েছে শুধু ‘রামদ্রোহ!’ সুযোগ পেলেই বিরোধী নেতারা রামলালার মন্দির ঘিরে আপত্তিকর কথাবার্তা বলছেন। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অযোধ্যা ইস্যুতে বিরোধীদের তোপ দেগেছেন মোদী৷ এবং বিজেপির প্রচারের অভিমুখ এখন ধর্মীয় মেরুকরণই, তা সব প্রচারেই স্পষ্ট।