বিক্ষুব্ধ কাঁটাই বঙ্গ বিজেপির মূল সমস্যা, মানলেন সুকান্ত
প্রতিদিন | ০৭ মে ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: দলের মধ্যে বিক্ষুব্ধ কাঁটা যে অস্বস্তিতে রাখছে তা অস্বীকার করলেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বাঁকুড়া-সহ একাধিক জায়গায় নির্দল ও বিক্ষুব্ধদের বিষয়টি কার্যত মেনে নিয়েই সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘একটু সমস্যা হচ্ছে। সবার লক্ষ্য থাকে এমপি-এমএলএ হওয়ার। যে টিকিট পায় না তার দুঃখ হয়। কেউ কেউ ‘ওভার রিঅ্যাক্ট’ করে ফেলছে।’’ এর পরই অবশ্য সুকান্তর দাবি, ‘‘পার্টি বড় হচ্ছে। বয়ঃসন্ধিকালে একটু সমস্যা হয়।’’ বিজেপির বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সভাপতি জীবন চক্রবর্তী নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। কাঁথি ও তমলুকেও নির্দল কাঁটা রয়েছে। বিক্ষুব্ধরা অনেকেই বসে গিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গেই সুকান্ত (Sukanta Majumdar) বলেন, ‘‘রাজনীতিতে যিনি নেতৃত্ব দেন তাঁর বিরোধী থাকবে। বাঁকুড়ার জীবন চক্রবর্তী দিলীপ ঘোষের সময়ই সাসপেন্ড ছিলেন।’’ দার্জিলিংয়ে দলের বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এখনও বিজেপি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সুকান্তর কথায়, ‘‘বিষ্ণু প্রসাদ এখন এমএলএ আছেন। পরেরবার টিকিট পাবেন না আর।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি এদিন দাবি করেন, ‘‘এবার লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের থেকে একটি আসন হলেও বেশি পাবে বিজেপি। আর সেটা হলে আগামী বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসবে।’’ বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসা প্রসঙ্গে সুকান্তর এই ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, বাংলায় বিজেপি তৃণমূলের থেকে বেশি আসন পেলেও সরকার ভাঙার কোনও বিষয় নেই। বিধানসভা ভোট যথাসময়ে হবে। কিন্তু সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে সুকান্ত দাবি করলেন, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের থেকে বেশি আসন পাবে বিজেপি। বিধানসভা ভোটও এগিয়ে আসবে। ব্যাখ্যায় অবশ্য সুকান্ত বলেছেন, ‘‘বিজেপি সরকার ভাঙায় বিশ্বাসী নয়। কিন্তু সরকার যদি এমনি এমনি পড়ে যায়, তাহলে আর কী হবে।’’ সন্দেশখালির স্টিং ভিডিও প্রসঙ্গে প্রথমে সুকান্ত এদিন বলেন, ‘‘ভিডিওটি সঠিক নয়। আর যদি তর্কের খাতিরেও ধরে নিই যে ওই ভিডিও ঠিক, তা হলেও ব্যাপারটা মিলছে না। এক হাজার মহিলা নির্যাতনের কথা হলফনামা দিয়ে আদালত ও সিবিআইকে জানিয়েছেন। তা হলে ওই একজনের কথা ধরবেন, না কি হাজার হাজার মহিলা যে অভিযোগ করেছেন সেটা ঠিক বলবেন।’’
পরে অবশ্য করে সুকান্তর সরাসরি দাবি, ‘‘সন্দেশখালির ভিডিওটি ফেক। সন্দেশখালির ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তৃণমূল এই ভিডিও বানিয়েছে।’’ তৃণমূল সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নাম বদলে অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার হবে। অর্থ তিনগুণ বাড়ানো হবে।’’ একসময় বিজেপি নেতারা এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সমালোচনা করলেও তার জনপ্রিয়তার কথা ভেবে এদিন সুকান্ত কার্যত সেই প্রকল্পকে পরোক্ষে মান্যতা দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অর্জুন সিংয়ের মতো নেতা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসে আবার তৃণমূলে যান। পরে বিজেপি তাঁকে আবার দলে নিয়ে প্রার্থী করেছে। এঁরা আবার বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না তো? এই প্রশ্নের জবাবে সুকান্ত মজুমদারের যুক্তি, ‘‘অর্জুন যখন তৃণমূলে যায় বলে গিয়েছিল। আর এর সঙ্গে দলের মতাদর্শের বিষয়টা নেই। পার্টি যাতে জেতে সেজন্য স্ট্র্যাটেজি করতে হয়।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি এদিন দাবি করেন, এখনও পর্যন্ত যে ছয়টি আসনে ভোট হয়েছে, সবকটি আসনেই বিজেপি জিতবে।