• বাবার শ্রাদ্ধশান্তি, ক্যান্সার আক্রান্তদের চুলদান মেয়ের
    এই সময় | ০৭ মে ২০২৪
  • গৌতম ধোনি, কৃষ্ণনগর

    মৃত্যুশয্যায় বাবা বলে গিয়েছিলেন, ছোট মেয়েই যেন তাঁর মুখাগ্নি করে পারলৌকিক কাজ সারেন। বাবার কথা রাখলেন নিবেদিতা ঘোষ দাস। মুখাগ্নির পরে ১৩ দিনের মাথায় শ্রাদ্ধ-শান্তি সারলেন মাথা সম্পূর্ণ নেড়া করে। তবে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। লম্বা চুলের গোছ দান করেছেন ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য। নদিয়ার শান্তিপুর শহরের ঘটনা।শান্তিপুর শহরের লেনিন সরণিতে নিবেদিতার বাপের বাড়ি। তাঁরা দুই বোন। বিয়ের পরেও ছোট মেয়ে নিবেদিতা বাপের বাড়িতেই থাকেন বাবা-মায়ের দেখভালের জন্য। কয়েক মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নিবেদিতার বাবা নারায়ণচন্দ্র ঘোষ। গত ২৪ এপ্রিল মৃত্যু হয় তাঁর।

    নিবেদিতা বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পরে কে সামাজিক রীতি মেনে মুখাগ্নি করবে, কে শ্রাদ্ধশান্তি করবে, জ্যেঠতুতো দাদাদের কাছে অনুরোধ করতে হবে কিনা, এ সব নিয়ে ভেবে একটুও সময় নষ্ট করিনি। গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরে মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে বাবা-ই আমাকে একদিন বলেন, ‘মরে গেলে তুইই আমার মুখাগ্নি করিস।’ বাবার মৃত্যুর পরে আমিই যথারীতি মুখাগ্নি করেছিলাম। বিবাহিত মেয়েরা যেমন বাবার মৃত্যুতে তিন দিনের মাথায় একটা পারলৌকিক কাজ করে থাকেন, সেটা করতে আমার মন চায়নি।

    মনে মনে ঠিক করেছিলাম, ছেলেরা যেমন প্রয়াত বাবার পারলৌকিক কাজ ১৩ দিনে করে থাকেন, আমিও সে ভাবে করব। মাথা নেড়া করার ব্যাপারটা নিয়ে প্রথমে আমি শুধু আমার স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করি। তার পরে মাকে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানাতে মা ভীষণ খুশি হন।’ পারিবারিক পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছিলেন। পুরোহিত তাঁকে জানান, এই সিদ্ধান্ত অশাস্ত্রীয় কিছু নয়।

    সোমবার ছিল পারলৌকিক কাজ। প্রথা মেনে তার আগের দিন বাড়িতে ক্ষৌরকার ডাকা হয়। মাথা নেড়া করেন নিবেদিতা। ঘটনা জানাজানি হতেই আত্মীয়-প্রতিবেশীদের অনেকে এসে অবশ্য পিঠ চাপড়ে গিয়েছেন। এর পরে অবশ্য পিঠ চাপড়ানোর মতো আরও একটি সিদ্ধান্ত নেন নিবেদিতা। নিজের লম্বা চুলের গোছা ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য দান করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। নিবেদিতা বলেন, ‘চুল দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শান্তিপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের মাধ্যমে মুম্বইয়ের হাসপাতালে সেই চুল পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’

    শান্তিপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার তপন মজুমদার বলেন, ‘পেশায় তাঁত ব্যবসায়ী নারায়ণবাবু মৃত্যুর আগে আমাদের সংস্থার কাছে কর্নিয়া দান করার অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন। তিনি খুবই প্রগতিশীল মানসিকতার ছিলেন। তাঁর মেয়ের এই পদক্ষেপকেও কুর্নিশ জানাই। সমাজে কিছু দরজা খোলা দরকার। নিবেদিতা সেই কাজটাই করে দেখিয়েছেন।’

    নিবেদিতার স্বামী রেলকর্মী সুদীপ দাস বলেন, ‘স্ত্রীর এই পদক্ষেপ যথেষ্ট সাহসী। আমি খুব খুশি ওর এই সিদ্ধান্তে।’
  • Link to this news (এই সময়)