• মৌ রায়চৌধুরীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সাহিত্যমহল
    আজকাল | ০৮ মে ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শিল্পোদ্যোগী, সংস্কৃতিমনস্ক, সাহিত্যিক মৌ রায়চৌধুরী প্রয়াত। তিনি চলে গেলেন, রেখে গেলেন পরিবার, পরিজন, একাধিক কর্মোদ্যোগ, একগুচ্ছ বই আর সকলের মনে রয়ে গেল তাঁর মায়াভরা, মধুর ব্যবহারের স্মৃতি। মঙ্গলবারের সকালে দুঃসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই শোকস্তব্ধ সাহিত্যমহল। কেউ মানতেই পারছেন না এই মর্মান্তিক সংবাদকে। পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। কথা বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে গলা। সোমবার সারারাত ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন হাসপাতালে। প্রার্থনা করেছেন। তবু সকালে বাড়ি ফিরে পেয়েছেন দুঃসংবাদ। দীর্ঘ দু’ দশকের বেশি সময়ের সম্পর্ক, পারিবারিক যোগাযোগের স্মৃতি মনে করছেন ত্রিদিব-চুমকি। বলছেন, পরিবারের সদস্য চলে গেলেন, এ শোক বলার নয়। ভোলার নয়। দে’জ পাবলিশিং-এর কর্ণধার সুধাংশুশেখর দে"র গলাতেও মৌ রায়চৌধুরীর অমায়িক, মধুর, আন্তরিক ব্যবহারের কথা। ভারাক্রান্ত গলায় বললেন, ‘বছরভর নানা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত থাকতাম। কিছু হলেই খোঁজ নিতেন। এই মাসখানেক আগে গেলাম মাসিমার বইয়ের উদ্বোধনে। এত আমোদপ্রিয়, ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যাচ্ছেন আমাদের জীবন থেকে। শোনার পর থেকে ভারাক্রান্ত।‘ কবি, সাহিত্যিক সুবোধ সরকার এই সংবাদে স্তব্ধ। বলছেন, ‘মৌ রায়চৌধুরী আমাদের বড়ো কাছের মানুষ ছিলেন। তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হননি এমন কোনও লেখক, শিল্পী ছিলেন না। তিনি সবার সঙ্গে মিশতেন, সবাইকে যোগ্য জায়গা দিতেন। তিনি নিজে লেখক বলে, লেখকদের সঙ্গে তিনি একাত্ম বোধ করতেন। সত্যম রায়চৌধুরীর পাশাপাশি মৌ রায়চৌধুরী একটি বিশিষ্ট নাম হিসেবে বাঙালি সমাজে উঠে এসেছিল। আমি তাঁর সুলিখিত গদ্য রচনা পড়েছি। আমি তাঁর কবিতা পড়েছি। তাঁর কবিতায় হৃদয় ছিল। মানুষের প্রতি ভালবাসা ছিল।কয়েকবছর আগে, আমেরিকাতে, বঙ্গ সম্মেলনে যে বছর আমি আজকাল-এন এ বি সি সম্মাননা পেয়েছিলাম, সেবার মৌ একশ দুই জ্বর নিয়ে যেভাবে শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, লড়াই করেছিলেন, সে দৃশ্য আমি ভুলব না। সম্পাদনার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর অকাল প্রয়াণে আমি স্তব্ধ হয়ে আছি। এই শোক সহ্য করা যায় না। তাঁর সন্তপ্ত পরিবারের সবার পাশে আমরা আছি। বিশেষ করে বাংলার শিক্ষা ও সংস্কৃতির কাল্ট ফিগার সত্যম রায় চৌধুরীর পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে। মৌ শুধু মাত্র তাঁর স্ত্রী ছিলেন না, বাঙালির এক বিপুল কর্মযজ্ঞে তিনি ছিলেন ভরকেন্দ্র।‘ শেষবারের মতো মৌ রায়চৌধুরীকে দেখতে যাচ্ছেন কবি শ্রীজাত। বিদায় জানাতে যাচ্ছেন তাঁর অন্যতম প্রিয় মানুষকে। ভাঙা গলায় থেমে থেমে বললেন, ‘এই তো সেদিন জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান হল। এই ৭-৮ দিন আগেও আমাকে মেইল করেছিলেন। শারদীয়া পূজা সংখ্যার জন্য কবিতা চেয়েছিলেন। তাঁকে আজ দেখতে যাচ্ছি শায়িত অবস্থায়। এই অবিশ্বাস্যতা অতিক্রম করা মুশকিল। এত হাসিমুখ মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। সকলের সঙ্গে তাঁর যত্নের, আদরের ব্যবহার ভোলার নয়। কত কাজের স্বপ্ন ছিল, তাতে আমাদের সামিল করতে চেয়েছিলেন। জীবন এত অনিত্য। ভাবতেই পারছি না।‘ বিদেশে বসে দুঃসংবাদ শুনেছেন সাহিত্যিক নবকুমার বসু। লেখা, আড্ডা, পারিবারিক যোগাযোগ সবকিছু রেখে মৌ রায়চৌধুরী চলে গেলেন, এ তিনি ভাবতেই পারছেন না। বললেন, "সকালে খবর পেলাম। এতদূরে থাকি, আচমকা চোখে পড়ল এই দুঃসংবাদ। জানি দুঃসংবাদ মিথ্যে হয় না। তবু যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। এই তো কিছুদিন আগে কথা হল। শারদীয়া পূজা বার্ষিকী নিয়ে কথা হল। কত স্মৃতি আমাদের। নানা অনুষ্ঠানে দেখা, পুজোর সময় একসঙ্গে অনুষ্ঠান করে হুগলি, চুঁচুড়ায় ফেরা, শান্তিনিকেতনের বাড়িতে হাতা খুন্তি হাতে মৌ-এর রান্না। ভাবছিলাম ফোন করে বইমেলার বই নিয়ে কথা বলব। সেটা আর হল না। কত কথা মনে পড়ছে একে একে।" শেষবারের মতো মৌ রায়চৌধুরীকে দেখতে গিয়েছেন সাহিত্যিক দেবযানী কুমার। সোমবার রাতে খবর পেয়েই দৌড়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। ভোর রাতে বাড়ি ফেরার আগেও ভেবেছেন, যদি কিছু মিরাকেল হয়। বয়সে ছোট, মৌ"কে হারিয়ে শোকাতুর তিনি। বললেন, "এই শোক প্রকাশের নয়। এই শূন্যস্থান পূরণ হবে না। ভাবতেও পারছি না এখনও।" কবি বীথি চট্টোপাধ্যায় স্তব্ধ দুঃসংবাদে। ভারাক্রান্ত গলায় বললেন, "কথা বলবার ইচ্ছে নেই। আমি অত্যন্ত স্নেহ করতাম। হৃদয় বিদারিত হচ্ছে। বজ্রাহত হয়েছি। এত প্রাণবন্ত, উচ্ছল একজন নেই! কত স্মৃতি আছে ওর সঙ্গে। সেসব যতদিন আমি বেঁচে থাকব মনে রাখব। গুছিয়ে কিছু বলবার ক্ষমতা নেই।"
  • Link to this news (আজকাল)