ইংরেজি পড়তে গিয়ে ঘনিষ্ঠতা, তারপর? ইনিই রবিঠাকুরের 'প্রথম প্রেমিকা'
আজ তক | ০৮ মে ২০২৪
First Love of Rabindranath Tagore: অন্নপূর্ণা, আন্না, নলিনী-- যে নামেই ডাকুন, তিনি বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রেম হয়েই থাকবেন। 'প্রথম প্রেম' যা কোনওদিন ভোলা যায় না। প্রথম প্রেম প্রথম বসন্তের মতো। শীতের ঝরা পাতার পর গাছের ডালে ডালে ঠিক যেমন বসন্তের কচি পাতা গজায়, চিরসবুজ, চিরসতেজ। বসন্ত চিরকালই রঙিন। জীবন, যৌবনে রঙ নিয়ে আসে এই বসন্ত। প্রথম প্রেমও ঠিক তাই। একইভাবে কবির জীবনে প্রথম প্রেম এসেছিল মারাঠা ভূমে। এই মারাঠি কন্যের নাম ছিল আনা পান্ডুরঙ্গ তড়খড়। কাদম্বরী ও ওকাম্পোর মতো তিনিও বহুল চর্চিত।
কে ছিলেন আনা পান্ডুরঙ্গ তড়খড়?
কৃষ্ণ কৃপালানির লেখা রবি ঠাকুরের ওপর এক জীবন গ্রন্থে অন্নপূর্ণার সঙ্গে রবি ঠাকুর সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বিবরণ দিয়েছেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭, ইংল্যান্ডে পড়াশোনার জন্য যাওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথ বোম্বেতে দু'মাস ছিলেন। তখন ১৮৭৮ সাল। বোম্বেতে তিনি যে বাড়িতে থাকতেন সেটি ডাঃ আত্মরাম পান্ডুরঙ্গ তড়খড়ের। তিনি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং প্রার্থনা সভার প্রতিষ্ঠাতা। ডাঃ আত্মারাম রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু ছিলেন।
জানা যায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর আশা করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ যদি তাঁর বাড়িতে থাকেন তবে তাঁর ছোট ভাইকে ইংরেজি ভাষায় উন্নতি করতে এবং ব্রিটিশ আচার-ব্যবহার শেখাতে সাহায্য করবেন। এই প্রচেষ্টার জন্য তাঁর পরামর্শদাতা এবং শিক্ষক ছিলেন ডঃ আত্মারামের দ্বিতীয় কন্যা অন্নপূর্ণা (আনা)। রবীন্দ্রনাথের থেকে প্রায় তিন বছরের বড়, অন্নপূর্ণা সবেমাত্র ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছিলেন এবং ইংল্যান্ডের সংস্কৃতি, সমাজ এবং ভাষার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আনার সঙ্গে প্রেম
এই ক্লাস যত এগোয় তত উভয়ের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তা এতটাই যে অত্যন্ত তিনি প্রথম প্রেমিকাকে একটি নতুন নাম দিয়েছিলেন - নলিনী। যে নামটি তিনি পরে তাঁর কবিতায় ব্যবহার করে অমর করে রেখেছেন।
ঠাকুরবাড়ির একাধিক গ্রন্থ অনুযায়ী জানা যায়, ১৮৭৯ সালের প্রথম দিকে আনার বাবা আনা এবং তার আরেক মেয়ের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ইংল্যান্ডে। প্রায় নিশ্চিতভাবেই তিনি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখতে এসেছিলেন এবং মনে করা হয় যে তিনি তাদের বিয়ের প্রসঙ্গ তুলছিলেন। কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। আনা যদিও রবীন্দ্রনাথকে ভুলতে পারেননি এবং নলিনী নামটি ব্যবহার করতে থাকেন।
এর কয়েক মাস পরে ১৮৭৯ সালের ১১ নভেম্বর বরোদা কলেজের উপাধ্যক্ষ হ্যারল্ড লিটলডেলের সঙ্গে আনার বিবাহ হয়। প্রেম করেই এই বিবাহ হয়। যদিও বিবাহের পর আনা রবীন্দ্রনাথকে ভুলে যাননি। রবীন্দ্রনাথের 'শোনো নলিনী খোলো গো আঁখি' কবিতা তাঁকে উৎসর্গ করেই।