প্রচারে পরিবেশ ব্রাত্য? বাংলা পলিটিক্স কিন্তু ভাবছে
এই সময় | ০৮ মে ২০২৪
‘আমার শহরে শুকিয়ে যাচ্ছে জল
ফুরিয়ে আসছে স্নান করবার দিন |
অন্য কোথাও চল...’
এক দশক আগেকার বাংলা গানের এই লিরিক্স যেন লেখা হয়েছিল বেঙ্গালুরুর জন্য! কলকাতায় পানীয় জলের হাহাকার বেঙ্গালুরুর মতো হয়নি। দেড়-দু’হাজার টাকা দিয়ে এক বালতি জলও কিনতে হচ্ছে না। কিন্তু বেঙ্গালুরুর ঘটনা থেকে যদি শিক্ষা নিয়ে দ্রুত আমরা ভুল-ত্রুটি শুধরে না নিই, তা হলে ভবিষ্যতে কলকাতার পরিণতিও এ রকম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা।পরিস্থিতি গুরুতর হলেও রাজনৈতিক দলগুলির নেতানেত্রীদের মুখে কেন পরিবেশ বাঁচানোর পরিকল্পনার কথা শোনা যায় না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পরিবেশকর্মীদের। তাঁদের বক্তব্য, সন্দেশখালির অস্ত্র উদ্ধার থেকে নিয়োগ দুর্নীতির ইস্যুতে একে অন্যকে বিঁধতে ব্যস্ত সব দল।
কিন্তু কতটা গুরুত্ব পায় পরিবেশ? প্রচারে এই সমস্যা কি অনেকটা ব্রাত্য নয়? কী বলছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা?
ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেতা দীপক অধিকারীর (দেব) ঘোষণা, ‘আমি ঠিক করেছি, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে যতগুলো ভোট পড়বে, আমি তত গাছ লাগাব।’ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী, আর এক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় একসুরে বলছেন, ‘পরিবেশ যদি ঠিক না-থাকে তা হলে রাজনীতি করব কাদের নিয়ে। যে ভাবে গরমের দাপট চলল, তা থেকে বাঁচাতে গাছ তো লাগাতেই হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে উষ্ণায়ন কী ভাবে কমবে?’
দেবের পথে এগিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু। জিতলে পাঁচ বছরে ওই কেন্দ্রে অন্তত এক লক্ষ গাছ লাগানোর কথা বলেছেন তিনি। প্রচারে বেরিয়ে বৃক্ষরোপণ করছেন। হাওড়া সদর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ও প্রচারে বেরিয়ে গাছ লাগাচ্ছেন এবং পরিবেশরক্ষার কথা বলছেন। দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের বক্তব্য, ‘রাতের অন্ধকারে কোথাও কোথাও গাছ কাটা হচ্ছে। এটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। শুধু ৫ জুন পরিবেশ দিবস পালন করলে হবে না। সারা বছরই আমাদের এ দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবেই মানুষ বাঁচবে।’
এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শায়রা শাহ হালিমও একমত। তবে অভিযোগও রয়েছে কিছুটা— ‘কলকাতা তিরিশ শতাংশ সবুজ হারিয়েছে। তৃণমূল এই ইস্যুতে কোনও কথা বলে না। আমারা শহরে সবুজ ফেরাতে চাই। এটাই আমাদের সংকল্প।’ আর যাদবপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চে অবশ্যই পরিবেশের গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এই সরকারের আমলে নিয়ন্ত্রণহীন, পরিকল্পনাহীন ভাবে বহুতল উঠেছে। পুকুর বোজানো হচ্ছে। তাতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।’
নদিয়ায় বিভিন্ন দলের প্রচারে উঠে আসছে জলঙ্গি নদী বাঁচানোর কথা। অতএব প্রার্থীদের অনেকেই সচেতন, সে কথা বলাই যায়। যদিও পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘ভোটের প্রক্রিয়ায় পরিবেশের ইস্যুর পরাজয় ঘটে। ভোটে জেতা বা না-জেতার সঙ্গে পরিবেশের কোনও যোগাযোগ নেই। সে কারণেই হয়তো গুরুত্ব পায় না পরিবেশ।’
নদী আন্দোলনের কর্মী তাপস দাসের অভিযোগ, ‘সংসদে যাঁরা যাবেন, ভোটপ্রচারে তাঁদের উচিত পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া। অরণ্যরক্ষা আইনে কর্পোরেটকে সুবিধে করে দেওয়া হয়েছে।’