Voting Percentage : তৃতীয় দফাতেও ব্যতিক্রমী বাংলা, স্রোতের বিপরীতে হেঁটে ভোটের হারে প্রথম সারিতে পশ্চিমবঙ্গ
এই সময় | ০৮ মে ২০২৪
প্রথম দুই দফার মতো তৃতীয় পর্বেও ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কমল। মঙ্গলবার ছিল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের রাউন্ড ৩। এই পর্বে ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৯৩টি কেন্দ্রে হয় ভোটগ্রহণ। এই দফার ভোটের হারও ২০১৯ সালের তৃতীয় পর্ব থেকে কম।নির্বাচন কমিশনে আপলোড করা রাত ১১টা ৪০ মিনিটের তথ্য অনুযায়ী, ৬৪.৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে তৃতীয় পর্বে। ২০১৯ সালে যে পরিসংখ্যান ছিল ৬৭.৩৩ শতাংশ। প্রথম দফার নির্বাচনে ১০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটের হার ছিল ৬৬.১৪ শতাংশ যা ২০১৯ সালের তুলনায় চার শতাংশ কম। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬৬.৭১ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের তুলনায় তিম শতাংশ কম।
নির্বাচন কমিশনের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, তৃতীয় দফার লোকসভা ভোটও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময় অশান্তির অভিযোগ ওঠানো হয়েছিল কিন্তু সে রাজ্যেও নির্বিঘ্নেই মিটেছে তৃতীয় পর্ব।
নির্বাচন কমিশনের ভোটার টার্ন আউট অ্যাপের তথ্য অনুযায়ী, চারটি আসনের অসম নির্বাচনে তৃতীয় পর্বে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে (৮১.৬১ শতাংশ)। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে উত্তর প্রদেশ (৫৭.৩৪ শতাংশ)। এখানে মঙ্গলবার ১০টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ২০১৯ সালে এই একই আসনগুলিতে ভোট পড়েছিল ৬০.১ শতাংশ। বিহারের পাঁচটি আসনে ভোট পড়েছে ৫৮.১৮ শতাংশ। গুজরাটের ২৫টি আসনে ভোটগ্রহণ হয় মঙ্গলবার। সেখানে ভোট পড়েছে ৫৮.৯৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে যা ছিল ৬৪.৫ শতাংশ। মহারাষ্ট্রের ১১টি আসনে ভোট পড়েছে ৬১.৪৪ শতাংশ। ছত্তিশগড়ের সাতটি আসনে ভোট পড়েছে ৭১.০৬ শতাংশ। গোয়ার দু'টি আসনে ভোট পড়েছে ৭৫.২০ শতাংশ। কর্নাটকের ১৪টি আসনে ভোট পড়েছে ৭০.৪১ শতাংশ। বাংলার চারটি কেন্দ্রে এদিন ভোটগ্রহণ হয়। মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ। সেখানে ভোট পড়েছে মোট ৭৫.৭৯ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ১১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে তৃতীয় দফায় ভোটের হারের নিরিখে বাংলা রয়েছে অসমের পর দ্বিতীয় নম্বরে। বড় বড় রাজ্যগুলিতে যেখানে ভোটের হার অত্যধিক পরিমাণে কম, সেখানে কার্যত উলটো পথে হাঁটছে বাংলা। প্রথম তিন দফাতেই বাংলায় ভোটের হার অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। পাশাপাশি মহিলা ভোটারের হারও পুরুষদের তুলনায় বেশি। স্রোতের বিপরীতে হেঁটে কী ভাবে এ রাজ্য উদাহরণ তৈরি করছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকসভা নির্বাচনে বরাবরই দেখা যায় বাংলায় ভোটের হার বেশি। অন্যান্য বড় রাজ্য যেমন উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রে ভোটের হার যেখানে কম থাকে, সেখানে বাংলা ব্যতিক্রম। বাংলায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি মহিলা ভোটারদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করছে বলে মনে করছেন অধিকাংশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্প লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম বড় অস্ত্র, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি, সেফোলজিস্ট তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয় মুর্গ একটি সংবাদমাধ্যমে জানান, ভোটারদের হার দেখে বোঝা যায় একটি দেশের গণতান্ত্রিক চেহারা কেমন। কম ভোটের হার ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ত ভোটারের ইঙ্গিত। আবার ভোটের হার বেশি থাকলে সরকার বিরোধী ভোট হওয়ার সুযোগ থাকে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের সংঘবদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলগুলি। রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং ক্যাডার ভিত্তিক দল CPIM-এর জন্যই ভোটের হার বেশি হওয়া বাংলার অতীতের ট্রেন্ড। পরবর্তী শাসকদলের আমলেও সেই ট্রাডিশন বজায় রয়েছে। এই রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলির কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ এবং নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলে।' সাংবাদিক তথা লেখক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, 'শহুরে মানুষের উদাসিনতা ভোটের হার কম থাকার অন্যতম কারণ। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বরাবরই ভোট নিয়ে সচেতন মানুষের সংখ্যা বেশি। ইতিহাস বলছে বঙ্গের ভোটের হার বরাবরই বেশি।'