মুশকিল এবং আসান প্রায় একই সঙ্গে হাজির। সমস্যার পিছন পিছনই এলো সমাধান সূত্রেরও হদিশ। করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিপদ এবং বিপদ-তারণ আত্মপ্রকাশ করলো বিশ্ব মানচিত্রে।দেখা গেল, করোনা শুধু রয়েই যায়নি। ফের নয়া রূপে হাজির হয়েছে তার দু’টি নতুন অবতার। ওমিক্রনের সেই দু’টি সাব-ভ্যারিয়েন্টই এখন ছেয়ে গিয়েছে গোটা ইউএসএ জুড়ে। ফলে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আবার এমনই সন্ধিক্ষণে জানা গেল আরও একটি তথ্য, অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা যৌথ গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন করোনার এমন এক টিকা, যা কোভিড ঠেকানোর ক্ষেত্রে পিছনে ফেলে দিতে সক্ষম বাকি কোভিড টিকাগুলিকেও। কেননা, সেই অল-ইন-ওয়ান ভ্যাকসিনটি শুধু করোনার বর্তমান ভ্যারিয়েন্টকেই নয়, ভবিষ্যতে যে সব ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে, সেগুলিরও প্রতিরোধে পারদর্শী।
নতুন অবতার
নয়া অবতার যুগলের নাম দেওয়া হয়েছে ফ্লার্ট (FLIRT)। ওমিক্রনের চারটি মিউটেশন (এফ, এল এবং আর, টি)-কে সংক্ষেপে ব্যক্ত করতেই ফ্লার্ট শব্দটি ব্যবহার করছেন বিজ্ঞানীরা।দু’টি সাব-ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ইউএসএ-তে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে কেপি.২ উপপ্রজাতি, যা এখন ওমিক্রনের জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্টকে পিছনে ফেলে দিয়ে সংক্রমণের মূল চালিকাশক্তি।তুলনায় কম হলেও ইউএসএ-তে ভালোই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কেপি.১.১ নামের অন্য সাব-ভ্যারিয়েন্টটি।ইউএসএ-র পাশাপাশি ইউকে, নিউজি়ল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ফ্লার্ট ছড়াচ্ছে জোর কদমে।
ফ্লার্টের উপসর্গ
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওমিক্রনের যে উপসর্গ এতদিন দেখা যাচ্ছিল, তার থেকে আলাদা নয় ফ্লার্টের উপসর্গ।গলা খুসখুস, কাশি, ক্লান্তি, নাক দিয়ে জল, মাথা ও মাংসপেশিতে ব্যথা, জ্বর অথবা জ্বর জ্বর ভাব এবং শীত লাগা। তবে কোনও উপসর্গই মারাত্মক নয়।
অভয়বাণী
ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, ফ্লার্টও আদতে ওমিক্রনেরই একটি তুতো-ভাই। তাই চিন্তার কিছু নেই। প্রকৃতিতে ভাইরাস ক্রমাগত মিউটেশন করতে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। আগামী দিনেও এ রকম নতুন নতুন রূপ মাঝে মাঝেই আরও দেখতে পাওয়া যাবে।ভবিষ্যতের টিকা
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এখানেই কামাল দেখাবে সদ্য আবিষ্কৃত অল-ইন-ওয়ান ভ্যাকসিন। যা পূর্ববর্তী ও বর্তমান ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি আগামী দিনে যে সব ভ্যারিয়েন্ট আসবে করোনার, সেগুলিকেও ঠেকিয়ে দিতে পারবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দোলুইয়ের মতে, ‘এমনটাই হওয়া উচিত আদর্শ টিকা। যা মিউটেশনের পরে ভাইরাসের চরিত্র বদল হলেও তাকে প্রতিহত করতে পারে।’যদিও মানুষের উপর এখনও এই টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। ‘নেচার ন্যানোটেকনোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ বলছে, গবেষণাটি সাফল্য পেয়েছে আপাতত অ্যানিমাল মডেলে (ইঁদুর)।টিকাটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেয় যাতে নভেল করোনাভাইরাসের যে কোনও ভ্যারিয়েন্টের ‘কমন সাইট’কে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে ইমিউনিটি।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
এই টিকা মানুষ নিয়ে নিলে আগামী দিনে প্রতিহত করা যাবে ফের করোনার কোনও অতিমারীকে।ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘টিকা তৈরির নানা পদ্ধতির মধ্যে এ ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি বহুল-ব্যবহৃত সাব-ইউনিট ভ্যাকসিনেরই একটা রূপ। সচরাচর এই ধরণের ভ্যাকসিনে ভাইরাসেরই একটা নির্দিষ্ট প্রোটিনের এমন একটি অংশকে টার্গেট করা হয়, যার ইমিউন সিস্টেমকে তাতিয়ে তোলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন করোনাভাইরাস থেকে এই ধরনের প্রোটিনের অংশ (পেপ্টাইড) একসঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে টিকায়। দীপ্যমানের মতে, ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ না থাকলেও আরও বেশ কিছু উত্তরের অপেক্ষা করতে হবে এই টিকার বাস্তবিক ফলাফল বুঝতে।’যেমন, এই টিকা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় ইমিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করে তুলবে না তো? সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘অল-ইন-ওয়ান ভ্যাকসিন অভাবনীয় আবিষ্কার, সন্দেহ নেই। কিন্তু মানুষের শরীরে সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হওয়া পর্যন্ত বেশি উচ্ছ্বাস দেখানো ঠিক নয়। তবে নিঃসন্দেহে সেই রাস্তাটা চওড়া করে দিয়েছে এই আবিষ্কারই।