চতুর্থ দফার আগেই নতুন প্লেয়ার ভোট-ময়দানে নামাল বিজেপি! তামিলনাড়ু থেকে ইতিমধ্যেই বাংলায় এসে পৌঁছেছেন অরবিন্দ মেনন। বঙ্গ-রাজনীতির মাঠ-ময়দান তাঁর চেনা। ১ জুন ভোট-পর্ব না-মেটা পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে বিভিন্ন জেলায় মেননকে ব্যাট হাতে ছোটাছুটি করতে দেখা যাবে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশা, তাঁর ব্যাট থেকে ভালোই রান আসতে চলেছে পরবর্তী দফার ভোটগুলিতে।২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বঙ্গ-বিজেপির রণকৌশল ঠিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মেননের। খাতায়-কলমে তিনি ছিলেন বিজেপির এ রাজ্যের সহকারী কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। তবে বিভিন্ন জেলায় সংগঠনের খুঁটিনাটি বিষয়ে মেননই হয়ে উঠেছিলেন শেষ কথা। সে সবে বিশেষ নাক গলাতে দেখা যেত না অন্য দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক, কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং শিবপ্রকাশকে।
বিধানসভা ভোটের পরই বঙ্গ-বিজেপির সংগঠনে ব্যাপক রদবদল ঘটে। তখনই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক করে মেননকে তামিলনাড়ুতে পাঠানো হয়। তারপর থেকে গত তিন বছর বঙ্গ-রাজনীতির সঙ্গে কার্যত কোনও সম্পর্ক ছিল না মেননের। লোকসভা ভোটের মাঝপথে সেই মেননের নাম আবার ভেসে উঠেছে বাংলার গেরুয়া শিবিরে।
বিজেপি সূত্রে খবর, কোনও নির্বাচনী জনসভা নয়, মেনন বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে ঘুরে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ভোটের দিন কী ভাবে বুথ-রক্ষা করতে হবে, কী ভাবে শেষ মুহূর্তে প্রচারে ঝড় তুলতে হবে, এ সব নিয়ে তিনি টিপস দেবেন বুথস্তরের বিজেপি নেতা-কর্মীদের। এর মধ্যেই হুগলি ও বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন ব্লকে একাধিক বৈঠকও করে ফেলেছেন মেনন।
তবে বিজেপির একাংশের মতে, দলের পুরোনো কর্মীদের সক্রিয় করতেই মেননকে তামিলনাড়ু থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হলো। কারণ, সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডের মতো বঙ্গ-বিজেপির বর্তমান পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে দলের পুরোনো কর্মীদের সে ভাবে কোনও যোগাযোগ নেই। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের পর বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের একাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
লোকসভা ভোটের আগে একাধিকবার তাঁদের মাঠে নামানোর চেষ্টা হলেও তাতে সে ভাবে সাফল্য পায়নি বিজেপি। বিজেপির পুরোনো কর্মীদের অনেকের সঙ্গেই ব্যাক্তিগতস্তরে মেননের সম্পর্ক বেশ ভালো। বাংলায় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের আবহেও বহু বিজেপি কর্মীকে তিনি তামিলনাড়ুতে ‘আশ্রয়’ দিয়েছিলেন বলেও বিজেপির অন্দরের খবর। পরবর্তীতে ওই কর্মীরা অধিকাংশই বাংলায় ফিরে রাজনীতি-বিমুখ হয়ে পড়েছেন।
লোকসভা ভোটের মাঝপথে তাঁদের সক্রিয় করে তুলতেই মেনন তামিলনাড়ু থেকে বাংলায় এসেছেন—এমনটাই অভিমত রাজ্য বিজেপির অনেকেরই। এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘বিজেপি সর্বভারতীয় দল। এক রাজ্যের নেতা অন্য রাজ্যে সংগঠনের কাজে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক।’ তৃণমূলের অবশ্য দাবি, বাংলায় বিজেপির যা অবস্থা, তাতে মেনন কেন, খোদ নরেন্দ্র মোদীও বুথে বুথে গেলেও কোনও লাভ হবে না।