Narendra Modi On Ambani-Adani: 'টেম্পোয় টাকা? এখন কেন চুপ?' আম্বানি-আদানি নিয়ে রাহুলকে বিঁধে খোঁচা খেলেন মোদী
এই সময় | ০৯ মে ২০২৪
এই সময়: লোকসভা ভোটের তৃতীয় দফার ঠিক পরেই রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রবিন্দুতে দু’টি নাম—আম্বানি ও আদানি! এবং সেটা নরেন্দ্র মোদীর মুখেই। শুধু দেশের প্রথম সারির দুই উদ্যোগপতির নাম করে মোদী রাহুল গান্ধীকে বিঁধলেন, তা-ই নয়, জুড়লেন ‘কালো টাকা’র প্রসঙ্গও। ঠিক যে যে বিষয়ে এতদিন কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতৃত্ব আক্রমণ করতেন মোদী ও তাঁর দলকে—সেই কথাই কেন প্রধানমন্ত্রীর মুখে, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। আর এই রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন, ‘তাহলে কি বন্ধুরা আর বন্ধু থাকছে না?’ মোদীকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বও।বিদায়ী লোকসভার একাধিক অধিবেশনে তো বটেই, গত অন্তত বছর দেড়েক ধরে মোদী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এই দুই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সম্পর্কের অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছেন রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে অন্য বিরোধী নেতারা। এমনকী আদানি ইস্যুতেই ‘টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন’ বিতর্কে সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের। এদিন রাহুল তথা বিরোধীদের সেই অস্ত্রকেই হাতিয়ার করেছেন মোদী। তেলঙ্গানায় একটি নির্বাচনী প্রচারসভায় বুধবার নমো বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে কংগ্রেসের শাহজ়াদা একটাই জিনিস উচ্চারণ করে গিয়েছেন।
রাফাল ইস্যু সামনে আসার পর থেকে তিনি শুধু একটাই মন্ত্র জপতেন—পাঁচ উদ্যোগপতি, পাঁচ উদ্যোগপতি। তারপরে তিনি বলতে শুরু করলেন আম্বানি-আদানি। কিন্তু যবে থেকে ভোট ঘোষণা হয়েছে, উনি আম্বানি-আদানির নাম করা বন্ধ করে দিলেন।’ মোদীর সংযোজন, ‘তেলঙ্গানার মাটি থেকে আমি প্রশ্ন করতে চাই, ওঁর ঘোষণা করা উচিত আম্বানি, আদানিদের থেকে ওঁরা কত টাকা নিয়েছেন? কত বস্তা কালো টাকা পৌঁছেছে? টেম্পো ভর্তি টাকা এসেছে? কেন রাতারাতি আম্বানি ও আদানিকে গালাগালি করা বন্ধ করে দিলেন? নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়! পাঁচ বছর ওঁদের গালাগালি করলেন, তারপরে রাতারাতি বন্ধ করে দিলেন?’
মোদী কারও নাম না-করলেও তাঁর নিশানায় যে রাহুলই, তা স্পষ্ট। ঘটনা হলো, আদানি-আম্বানিদের মতো শিল্পপতিদের সঙ্গে মোদীর আঁতাঁতের অভিযোগ বারবার তুলেছেন রাহুল। তাঁর দাবি ছিল, বিজেপি সরকার ২২ জন ভারতীয়কে ‘আরবপতি’ বানিয়েছে, কংগ্রেস চায় ক্ষমতায় এলে কোটি কোটি দেশবাসীকে লাখপতি করতে।
সেই প্রেক্ষিতে এদিন মোদী যেভাবে ‘আদানি-আম্বানি’ ইস্যুতে কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন, সেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন গুরুত্বপূর্ণ হলো যে জায়গা থেকে তিনি এই আক্রমণ শানালেন। ঘটনাচক্রে কংগ্রেস শাসিত তেলঙ্গানা সরকার সম্প্রতি সে রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১২,৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের চুক্তি করেছে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে।
মোদীর এদিনের নজিরবিহীন আক্রমণ সম্পর্কে রাহুল মুখ না-খুললেও নমোকে পাল্টা তোপ দেগেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা। রায়বরেলিতে একটি নির্বাচনী সভা থেকে তিনি বলেন, ‘আজ নরেন্দ্র মোদী বলছেন রাহুল গান্ধী আদানির নাম নিচ্ছেন না। সত্যিটা হলো, রাহুল আদানিদের কথা প্রতিদিন বলছেন। প্রতিদিন উনি আদানিদের সম্পর্কে সত্যিটা তুলে ধরছেন আপনাদের সামনে।’
প্রিয়াঙ্কার সংযোজন, ‘রাহুল গান্ধী প্রতিদিন বলছেন, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বড় শিল্পপতিদের আঁতাঁত রয়েছে। কৃষকদের একটা টাকা মকুব না-করলেও মোদী তাঁর বন্ধুদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকা মকুব করে দিয়েছেন। আগে নরেন্দ্র মোদী এর জবাব দিন।’ প্রিয়াঙ্কার যুক্তি, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন ফুলটস খেলেন, তখন এসব অবান্তর প্রসঙ্গ সামনে আনেন। আমি ওঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, উনি বেকারত্ব, দুর্নীতি, নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গে ফুলটস খেলুন।’
প্রথম তিন দফার ভোটের পরেও মোদী বারবার বলেছেন, এবার চারশো পার হচ্ছেই! পাল্টা বিরোধীদের দাবি, এই তিন দফাতেই কেন্দ্রের শাসক দল জোরালো ধাক্কা খেয়েছে। মঙ্গলবারই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এবার চারশো পার নয়, এবার পগারপার!’ ঠিক এই পরিস্থিতিতে মোদীর গলায় ‘আদানি-আম্বানি’ ও ‘কালো টাকা’র প্রসঙ্গ শুনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কটাক্ষ, ‘সময় বদলাচ্ছে। বন্ধুরা আর বন্ধু থাকছে না? তিন দফার ভোট মিটে যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নিজের বন্ধুদেরই আক্রমণ শুরু করেছেন। এটা পরিষ্কার যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর চেয়ার কাঁপতে শুরু করেছে।’
নমোকে কটাক্ষে বিঁধেছে তৃণমূলও। দলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘পিএম, মানে ‘PrimElection Minister’ কখনওই বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, নারী সুরক্ষা নিয়ে এবং বাংলার মতো অ-বিজেপি রাজ্যগুলিকে কীভাবে আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে একটা শব্দও বলেন না।’
রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলের পোস্ট, ‘হাসি পায়! কী হচ্ছে এসব দাদু?’ আর এক তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এক্স প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘বাহ... তাহলে নরেন্দ্র মোদী মানছেন আদানি-আম্বানি মানেই কালো টাকা? তাহলে মোদী এখন মানছেন রাহুল গান্ধী বরাবর ঠিক কথাই বলে এসেছেন!’