ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেতু নির্মাণ প্রৌঢ়ের, দেখতে পুরো 'সেকেন্ড হুগলি ব্রিজ'
এই সময় | ০৯ মে ২০২৪
নাম গোপাল মল্লিক, নিতান্ত ছাপোষা চেহারা। পায়ে হাওয়াই চটি, পরনে লুঙ্গি,পাতলা ফিনফিনে শার্ট। নদীতে ডিঙি পারাপার করান। প্রতিদিন প্রতি ট্রিপেই ভালো ভিড় হয়। বর্ষাকালে সে ভিড় আরও বাড়ত। কোলে বাচ্চা নিয়ে মহিলাদের পারাপার যেমন দেখেছেন, তেমনই দেখেছেন বয়স্কদের কাদা পথ পেরিয়ে যাতায়াত করতে। আবার চোখে পড়েচে প্রসূতিদের কষ্টও। আর সেই সমস্যা অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তিনি। তাই তিল তিল করে টাকা জমাতে শুরু করেন। সময় সময় আসতেই সেই টাকা বের করলেন পকেট থেকে। একেবারে থোক ২৪ থেকে ২৫ লাখ টাকা! কিছু মানুষের থেকে অবশ্য ঋণও নিয়েছেন। আর সেই সমস্ত কিছু নিয়েই লোকসভা ভোটের আবহে ২৪ - ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু বানালেন নিজের গ্রামে। সে আবার যেমন তেমন সেতু নয়, একেবারে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নিজামপুরের ঘটনা।সুবিধা হবে ১৫-২০ গ্রামেরলোকসভা নির্বাচনে জোর কদমে ঘাটাল লোকসভায় প্রচার চালাচ্ছেন শাসকদলের প্রার্থী দেব এবং বিরোধী প্রার্থী হিরণ। তারই মাঝে প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে দাসপুরে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে আস্ত সেতু তৈরি করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মানুষের মন জয় করলেন এই প্রৌঢ়! প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে কাঁসাই নদীর উপর এই সেতুর নির্মাণ করলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগেই। আর এই সেতু নির্মাণের ফলে নিজামপুর তিলন্দ, বালক রাউত, রবিদাসপুর, সৈয়দ করিম, নন্দনপুর, বসন্তপুর, গোবিন্দনগরের মতো প্রায় ১৫ - ২০ টি গ্রামের মানুষের কষ্টের অবসান হল।
রাতবিরেতে রোগী যাতায়াতে সুবিধাদাসপুরের নিজামপুর ও পার্বতীপুরের মাঝে কাঁসাই নদীতে বাঁশের সাঁকোই ছিল পারাপারের মূল ভরসা। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষায় বন্যার জল বাড়লে তা ভেঙে যেত। কখনও কখনও নদীতে জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উধাও হয়ে যেত। রাতবিরেতে বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স আসার উপায় ছিল না। প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার ঘুরপথে আসতে হত। অন্যদিকে উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা পড়তে হত কৃষকদেরও। এবার গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখেই প্রায় ২৪ - ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নতুন এই সেতু তৈরি করে ফেললেন নিজামপুর গ্রামের গোপাল মল্লিক।
খুশি এলাকার মানুষএদিকে গোপালের এই ভূমিকায় খুবই খুশি মানুষ। এহেন উদ্যোগের জন্য গোপাল মল্লিককে রীতিমতো সাধুবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।