'লজ্জা করে না?' দিদির আক্রমণ পাল্টা পদ্মর হেল্পলাইন
এই সময় | ০৯ মে ২০২৪
মণিপুস্পক সেনগুপ্ত
এই সময়, কলকাতা ও বর্ধমান: ‘অযোগ্য’ কারা, সেই প্রশ্ন নিয়ে জলঘোলা করার পিছনে বেশি সময় ব্যয় করতে চাইছে না বিজেপি। ভোট-সমীকরণের কথা মাথায় রেখে তারা আপাতত ব্যস্ত ‘যোগ্য’দের পাশে থাকার বার্তা দিতে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তোলার থেকেও নিজেদের গা-থেকে ‘চাকরিখেকো’ তকমা মুছতেই এখন বেশি তৎপরতা গেরুয়া শিবিরে। তৃণমূল অবশ্য এত সহজে বিজেপিকে হাত ধুয়ে ফেলতে দিতে চাইছে না। তারা জোর গলায় প্রচার চালাচ্ছে, প্রায় ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দেওয়ার জন্য কলকাঠি নেড়েছে বিজেপি-ই, এখন তারা যতই যোগ্যদের পাশে থাকার কথা বলুক না কেন।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশ মতো যোগ্য শিক্ষকদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য বুধবার বর্ধমান পার্টি অফিসে একটি অনলাইন পোর্টালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। এ বিষয়ে একটি হেল্পলাইন নম্বরও এদিন চালু করা হয় বিজেপির তরফে। একইদিনে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ফের একবার ‘চাকরিখেকো’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন।
হুগলির বলাগড়ের নির্বাচনী সভা থেকে মমতা বলেন, ‘মোদী বলেছিলেন, পাঁচ বছরে ১০ কোটি ছেলেমেয়েকে চাকরি দেবেন। দিয়েছেন একজনকেও? কেউ পেয়েছেন? উল্টে ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নিল! মানুষখেকো বাঘ শুনেছেন, চাকরিখেকো বাঘ শুনেছেন কখনও? ওরা চাকরিখেকো বাঘ! লজ্জা করে না? আবার খেয়েদেয়ে বলছে, হাম রহেগা আপকে পাশ!’
তৃণমূলের এই প্রচারের মোকাবিলায় বিজেপি নেতাদের মুখে একটাই কথা, তারা যোগ্য শিক্ষকদের পাশে থাকবে। শমীক বলেন, ‘এই মামলা হয়তো আরও অনেকদিন চলবে। এই দীর্ঘ লড়াইয়ে সব যোগ্য প্রার্থীর পাশে থাকব আমরা। প্রধানমন্ত্রী বর্ধমান থেকেই যোগ্যদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আমাদের। তাই আমরা সেই বর্ধমান থেকেই যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের জন্য একটি পোর্টাল সার্ভিস চালু করলাম। এখানে চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। কাগজপত্র ঠিক থাকলে আমাদের লিগ্যাল সেল সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০২১ থেকেই সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। ২০২২-এ এই মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিজেপির আক্রমণ আরও চাঁচাছোলা হয়। কোনও সন্দেহ নেই, সব মিলিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে যথেষ্ট চাপেই ছিল রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্যে’র মধ্যে কোনও বিভাজন রেখা না টেনে একলপ্তে প্রায় ২৬ হাজির শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেওয়ার পর বঙ্গ-রাজনীতিতে ন্যারেটিভ পাল্টাতে শুরু করে।
চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কাঠগড়ায় তোলে বিজেপিকে। ভোটের মরশুমে এর কুপ্রভাব আঁচ করে বিজেপিও বার্তা দেয়, তারা ‘যোগ্য’দের সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বর্ধমানের সভা থেকে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতে চিঁড়ে কতটা ভিজবে, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই সংশয় আছে। কারণ, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী রায়ে সবার চাকরি আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তৃণমূল সেই রায়কে স্বাগত জানিয়ে যেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাঁজ বাড়িয়েছে, তার মোকাবিলা করা সহজ কম্মো নয় বলেই পদ্ম শিবিরের একাংশের অভিমত।
এদিন বলাগড়ের পর আরামবাগের সভাতেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্গাপুরে কাল (মঙ্গলবার) মিছিল করছিলাম। কিন্তু মনে পড়ে ছিল সু্প্রিম কোর্টে। কী রায় হয়, তা জানার জন্য। রায় শুনে মন স্নিগ্ধ হয়ে গেল। আমার আত্মা শান্তি পেল। এই ভাবে যারা মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়, তারা দানব ছাড়া কিছু নয়। এরা মানব নয়, এরা দানব।’ সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখে তৃণমূলের এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই অবশ্য মনে করছে বিজেপি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শমীক বলেন, ‘গতকালের পর থেকে তৃণমূল নেতানেত্রীরা এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে, এই রায়ে তাঁরা বিশাল স্বস্তি পেয়েছেন। আসলে রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভাকে বাঁচানোর জন্য গিয়েছিল আদালতে। যোগ্য প্রার্থীদের জন্য তাদের কোনও উৎসাহ নেই।’