• কে বড়, ডোন্ট কেয়ার! দুর্গ রক্ষায় স্পষ্ট বার্তা
    এই সময় | ০৯ মে ২০২৪
  • এই সময়: লোকসভা ভোটে আরামবাগের দুর্গ ধরে রাখতে জেলার তৃণমূলের নেতাদের কোন্দল অবিলম্বে মিটিয়ে ফেলার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের অভ্যন্তরীণ অনৈক্যের প্রভাব যাতে কোনওভাবে ভোটবাক্সে না-পড়ে, তার জন্যও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। অনিল বসুর দাপটে ২০০৯ পর্যন্ত আরামবাগ ছিল সিপিএমের শক্তি ঘাঁটি।২০১১-তে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত একাধিক বিধানসভা বামেরা জিতেছিল। ২০১৪ সালে আরামবাগ তৃণমূল ছিনিয়ে নিলেও ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে এই লোকসভার অন্তর্গত একাধিক বিধানসভায় জিতেছিল বিজেপি। বিধানসভার ভোটের নিরিখে সমগ্র লোকসভায় বিজেপি ১০ হাজার ৫৪৪ ভোটে বিজেপি এগিয়ে।

    ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগে তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার অল্প মার্জিনে জয়ী হয়েছিলেন। এবার অপরূপার বদলে মিতালি বাগকে সেখানে প্রার্থী করেছে জোড়াফুল। কিন্তু আরামবাগে তৃণমূলের অন্দরমহল যে একসুরে বাঁধা নেই, বুধবার খোদ মমতার কথায় তার আভাস পাওয়া গিয়েছে। বাম আমলে রাজনৈতিক হানাহানিতে উত্তপ্ত আরামবাগে বহুবার গিয়েছেন মমতা। সেই আরামবাগে দলের কিছু নেতার ইগোর লড়াইয়ের কারণে তৃণমূলের ফল খারাপ হোক—কোনও ভাবেই চান না তৃণমূলনেত্রী।

    আরামবাগের কালীপুরে এ দিন তৃণমূলের সভায় মমতা বলেন, ‘আমাদের নেতৃবৃন্দকে বলব, অনেক কষ্ট করে এই আরামবাগ উদ্ধার করা হয়েছে। মনে রাখবেন, আমি ছোট না ও ছোট, আমি বড় না ও বড়, এটা ডোন্ট কেয়ার করতে হবে। মানুষকে কেয়ার করুন আর কিছু করার দরকার নেই।’

    ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত পুরশুড়া, আরামবাগ, গোঘাট, খানাকুল বিধানসভায় বিজেপি জিতেছিল। এই বিধানসভাগুলির মধ্যে খানাকুল, পুরশুড়া, আরামবাগে তৃণমূল নেতৃত্বের কাজকর্মে মমতা সন্তুষ্ট নন। তৃণমূলনেত্রীর কথায়, ‘পুরশুড়ায় বিজেপির একটা গুন্ডা আছে। খানাকুলে ইকবাল এমএলএ ছিল। এলাকা কন্ট্রোলে রাখত। ইকবাল না-থাকায় খানাকুল, পুরশুড়ায় আমাদের একটু প্রবলেম আছে। যদি খানাকুল, পুরশুড়ায় প্রবলেম হয় তোমরা মেটাবে। তারকেশ্বরে প্রবলেম হওয়ার কথা নয়। হরিপাল বেচারামের এলাকা, সেখানেও প্রবলেম হওয়ার কথা নয়। কৃষ্ণর (সাঁতরা) এলাকায় তো প্রবলেম হওয়ার কথা নয়। গোঘাটে মানসরা (মজুমদার) কোথায়? ওখানেও প্রবলেম হওয়ার তো কথা নয়?’

    আরামবাগের বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ অপরূপার কাজকর্ম নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছিল। অনেক ভাবনাচিন্তা করেই যে এবার তৃণমূল প্রার্থী বদল করেছে, মমতার কথায় সেই ইঙ্গিত রয়েছে। নিচুতলা থেকে রাজনীতি করে উঠে আসা মিতালির ভাবমূর্তিও পরিচ্ছন্ন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ। মমতার কথায়, ‘এর আগে কেউ ভুল করে থাকলে আমরা ভুল শুধরে নিয়েছি। এবার প্রার্থী মিতালি বাগ। ও বাগদি কমিউনিটির মেয়ে। এই মেয়েটি বিয়ে পর্যন্ত করেনি ভালো করে দল করবে বলে। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদে কাজ করেছে। কেউ গায়ে একটি কালির আঁচড় দিতে পারবে না।’

    তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ দিন মমতার মঞ্চেও অপরূপাকে দেখা যায়নি। তাঁর বক্তব্য, ‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হরিপালের দাদা-বৌদির দল আমাকে মঞ্চে উঠতে দেয়নি।’ যদিও কল্যাণের বক্তব্য, ‘তালিকায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তারা (মঞ্চ) ঢুকতে পেরেছে। এখানে আমার কোনও ভূমিকা নেই। যদি কারও ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকে, আমার কিছু করার নেই।’ মমতা এদিন মিতালির হয়ে বাড়তি সভা করার নির্দেশ দিয়েছেন কল্যাণকে। কয়েক দিন আগেই মিতালির গাড়ি ভাঙচুর হয়।

    তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি হামলা চালিয়েছে। আরামবাগে একদা যাঁরা বাম কর্মী-সমর্থক ছিলেন, তাঁরাই বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ। চলতি লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজে আরামবাগ লোকসভায় ভোট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর নাম না-করে এদিন মমতা বলেন, ‘আজ গদ্দার হার্মাদদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। বিজেপির সব নেতা সিপিএমের ওই সব গুন্ডা। এরা এলাকায় জিতলে ত্রাস করে দেবে। তখন আমাকে বলবেন না, কেন এখানে চমকাইতলা, গোপীনাথপুরে (মতো পরিস্থিতি) হলো?’
  • Link to this news (এই সময়)