এই সময়: একসময়ে তাঁকে বলা হতো মুর্শিদাবাদের বেতাজ বাদশা। কেউ আবার তাঁর নামের পাশে ‘রবিনহুড’ শব্দটা জুড়ে দিতেন। টানা পাঁচবারের সাংসদ। বাম আমলে জেল থেকে ভোটে লড়েও বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। শোনা যায়, তাঁর ভয়েই নাকি বহরমপুর শহরে চুরি-ডাকাতি তো দূরের কথা, মহিলাদের কটূক্তি করার সাহস হয় না কারও। সেই কারণে বহরমপুরে রাত-বিরেতেও মহিলারা নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারে। কিন্তু সেই মানুষটাকেই আজ প্রাণপাত করতে হচ্ছে বহরমপুরে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য।২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর একে একে তাঁর পুরোনো সঙ্গীরা দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত, সমিতি, জেলা পরিষদ, পুরসভা— সবই তৃণমূলের দখলে। এই জেলায় কংগ্রেসকে এখন দূরবীণ দিয়ে খুঁজতে হয়। তবু গড় বাঁচাতে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীররঞ্জন চৌধুরী।
অধীরের বিশ্বস্ত অনুগামী তথা বহরমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর কথায়, ‘পলাশির যুদ্ধে মুর্শিদাবাদের শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার পাশ থেকে সরে গিয়েছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরজাফর, জগৎ শেঠ, মীর কাসেমরা। কিন্তু সিরাজ ইংরেজদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। অধীর চৌধুরীও সেই মানসিকতা নিয়ে জন্মেছেন। তিনি শেষ দেখে ছাড়বেন।’
এই লড়াকু ইমেজটাই অধীরের প্রধান ইউএসপি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বহরমপুরে উড়ালপুল নির্মাণ, রেললাইন সম্প্রসারণের মতো একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। নিজের সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের টাকায় মানুষের জন্য আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছেন। গঙ্গা ভাঙন হোক বা বন্যা, মানুষের যে কোনও বিপদে-আপদে তিনি ছুটে যান। তাই অধীরকে উপেক্ষা করতে পারছে না বিরোধীরাও। তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবিরের কথায়, ‘অধীরদার বদলে অন্য কেউ দাঁড়ালে হয়তো আমাদের এতটা ভাবতেই হতো না। তবে এবার অধীরদার পক্ষে জেতা খুব মুশকিল।’
গত লোকসভা ভোটে অধীর চৌধুরী বহরমপুর আসনটি ধরে রাখলেও এরপর যত নির্বাচন হয়েছে সবক’টিতেই পর্যুদস্ত হয়েছে কংগ্রেস। বিধানসভা ভোটে জেলায় কংগ্রেস খাতাই খুলতে পারেনি। হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে অনেকটা থাবা বসিয়েছে বিজেপি। সংখ্যালঘু মুসলিমরা আরও বেশি করে ঝুঁকছেন তৃণমূলের দিকে। এই অবস্থায় শুধুমাত্র লড়াকু ইমেজ দিয়ে কি অধীর তাঁর দুর্গ রক্ষা করতে পারবেন? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।