নেদারল্যান্ড থেকে ৩ কোটির মাদক কলকাতায় পাচার, গ্রেপ্তার নার্সিং ছাত্রী, নেপথ্যে আফ্রিকার চক্র?
প্রতিদিন | ০৯ মে ২০২৪
অর্ণব আইচ: মিজোরামে বসে অর্ডার দেওয়া হয়েছিল মাদকের। নেদারল্যান্ডস থেকে সেই মাদক পাচার হয়ে এসেছিল কলকাতায়। ডাক যোগে শহরে আসা প্রায় তিন কোটি টাকার মাদকের সূত্র ধরেই মিজোরামের এক নার্সিং ছাত্রীকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করল কেন্দ্রীয় সংস্থা নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। এই পাচারের পিছনে আফ্রিকার আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর নাম আর লালরোলুয়াহপুই। মিজোরামের আইজলের বাসিন্দা ওই তরুণী নার্সিংয়ে স্নাতক পাস করার পর স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হয়। গত ৪ এপ্রিল মধ্য কলকাতার কিরণশংকর রায় রোডের বিদেশ পোস্ট অফিসে একটি পার্সেল ডাক যোগে আসে। প্রাপকের ঠিকানা ছিল মিজোরামের আইজলে। প্রেরক নেদারল্যান্ডের। কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যেই সূত্র মারফৎ এনসিবির আধিকারিকরা খবর পান যে, সন্দেহজনক বস্তু রয়েছে পার্সেলটিতে। সেইমতো ওই পার্সেলটি মিজোরামে পাঠানোর আগেই এনসিবি পরীক্ষা করে। ভিতর থেকে উদ্ধার হয় নিষিদ্ধ অ্যামফেটামাইন ট্যাবলেট। ২ কিলো ১৭০ গ্রাম ওই নিষিদ্ধ মাদকের দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। সেইমতো আইজলে গিয়ে এনসিবি তদন্ত করে। ওই তরুণীর উপর গত কয়েক মাস ধরেই নজর ছিল গোয়েন্দাদের। তার আইজলের ঠিকানায় নোটিস পাঠিয়ে তলব করে এনসিবি।
এনসিবির দাবি, মঙ্গলবার সল্টলেকের মিজোরাম হাউজে গিয়ে ওঠে ওই তরুণী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা, বাবা ও এক আত্মীয়া। সেখানে গিয়েই গোয়েন্দারা তাকে জেরা করেন। ওই নার্সিং ছাত্রী গোয়েন্দাদের জেরার মুখে স্বীকার করে যে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের বেশ কিছু বেআইনি ওষুধ তৈরির কারখানায় অ্যামফেটামাইন ট্যাবলেট তৈরি হয়। সেগুলি বিদেশে পাচার করে আন্তর্জাতিক চক্র। এরকম একটি বেআইনি কারখানা থেকেই চক্রের মাথারা ওই বিপুল পরিমাণ মাদক সংগ্রহ করে মিজোরামে পাচারের ছক কষে। ওই নার্সিং ছাত্রীর দায়িত্ব ছিল সেগুলি উত্তর পূর্ব ভারত-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাচার করা। জেরার পর বুধবার তাকে মিজোরাম হাউজ থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন ওই ছাত্রীকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তাকে জেল হেফাজতে রাখার আবেদন জানান এনসিবির আইনজীবী আল্পনা ভৌমিক। তাকে এক দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। বৃহস্পতিবার তাকে ব্যাঙ্কশালের নারকোটিকস আদালতে তোলা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এক দিদির সূত্র ধরেই মাদক পাচারের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে নার্সিং ছাত্রী আর লালরোলুয়াহপুই। তার ওই দিদি দিল্লিতে চাকরি করতে যায়। সেখানেই তার সঙ্গে আফ্রিকার কেনিয়ার বাসিন্দা এক পুরুষ ও এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয়। মাদক পাচার করলে অতি অল্প পরিশ্রমে বিপুল টাকা রোজগার হবে, দুই আফ্রিকান এমনই টোপ দেয় যুবতীকে। তারা তার সাহায্যে একটি সুটকেসে মাদক পাচারের ছক কষে। কিন্তু গত বছর মাদক-সহ বিমানবন্দরে শুল্ক দপ্তরের হাতে ধরা পড়ে যায় ওই যুবতী। তাকে জেরা করে ও তার মোবাইলের সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, আইজলে তার এক বোন আর লালরোলুয়াহপুইকে সে মাদক পাচার চক্রে যুক্ত করেছে। এর পর থেকেই ওই নার্সিং ছাত্রীর উপর নজর রাখেন গোয়েন্দারা। দিদির গ্রেপ্তারির পর যে আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার আন্তর্জাতিক চক্রটি মাদক পাচারের কাজে নার্সিং ছাত্রীকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে, তা মোবাইলের কল লিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্র ধরে নজরদারি রাখতে গিয়েই তাঁদের হাতে আসে এই পার্সেলটি। ধৃত তরুণীর মোবাইল থেকে আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রের কয়েকজন মাথার নম্বর ও যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। তাদেরও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।