• অশুভ আঁতাঁতে রায় হাসিল চিটফান্ড সংস্থার, প্রশ্নে সেবি
    এই সময় | ০৯ মে ২০২৪
  • অমিত চক্রবর্তী

    হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও এক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা তাদের সম্পত্তি হাতবদল করায় এবং নিম্ন আদালত থেকে ‘অশুভ আঁতাঁতে’ রায় পক্ষে নেওয়ায় হাইকোর্টের ক্ষোভ ছিলই। আবার সেই বেআইনি ভাবে পাওয়া নির্দেশকে সেবি বা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া যে ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে--তাতে চরম ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট।মঙ্গলবার এক মামলায় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘গোটাটাই প্রতারণা। আমরা এই প্রতারক সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা বলব।’ একই সঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, যে ভাবে সেবি’র বোর্ড মান্যতা দিয়েছে গোটা বিষয়টিকে, তাতে এখনই ওই সংস্থার স্থায়ী সদস্যকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। তিনি ওই পদে থাকার অনুপযুক্ত। তাঁর আইন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নেই বলেও মনে করেছে হাইকোর্ট। ‘গোটাটাই অশুভ আঁতাঁত’ বলে মন্তব্য করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

    হাইকোর্টের এমন কড়া পর্যবেক্ষণের মুখে শুনানিতে উপস্থিত সেবি’র আইনজীবী স্যমন্তক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মাধবী পুরী বুচ নামে ওই স্থায়ী সদস্যই বর্তমানে সেবি’র চেয়ারপার্সন। যা শুনে স্তম্ভিত প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘তিনি যেই হোন না কেন, আমরা সচেতন ভাবেই এই পর্যবেক্ষণ করেছি। তিনি পাবলিক ইন্টারেস্ট দূরে সরিয়ে একটা বেআইনি রায়কে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমরা তাঁর পদ সম্পর্কে জানার পরেও ‘অশুভ আঁতাঁত’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করছি। তিনি ওই পদে থাকার অনুপযুক্ত।’ এই শুনানির পুরোটাই হাইকোর্টের ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। যদিও বুধবার পর্যন্ত রায়ের কপি আদালতের ওয়েবসাইটে আপলোড হয়নি।

    সেবি’র নির্দেশ খারিজ করতে গিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, সেবি’র রায় অনাবশ্যক, এক্তিয়ার বহির্ভূত, অপ্রয়োজনীয় এবং সঠিক বিচারের পরিপন্থী। এর পরেই আদালত মামলাকারীর আবেদন খারিজ করে দেয়। সেবি’র বর্তমান চেয়ারপার্সনকে নিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে প্রবল আলোচনা শুরু হয়েছে। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, মাধবী পুরী বুচ ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অজয় ত্যাগীর সঙ্গে সেবির পুরো সময়ের সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০২২-এর ১ মার্চ সেবি’র প্রথম মহিলা চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনিই বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর স্বামী ধাওয়াল বুচ বহুজাতিক ইউনিলিভারের একজন পরিচালক।

    এ রাজ্যের বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা গুলশন গ্রুপের বিরুদ্ধে বাজার থেকে বেআইনি ভাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছিল। প্রতারিতদের পক্ষে আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, ‘২০১৫ সালে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। তারই মধ্যে সেবি ওই সংস্থাকে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টে সেই মামলায় পরের বছর আদালত নির্দেশ দেয়, কোর্টের অনুমতি ছাড়া কোনও ভাবে ওই সংস্থার সম্পত্তি হাতবদল, বেচাকেনা করা যাবে না। সেই রায় এড়িয়ে ওই সংস্থা অন্য একটি সংস্থাকে তাদের সম্পত্তি হাতবদল করে বলে অভিযোগ। ওই হাতবদল বৈধ করতে সিটি সিভিল কোর্টে মামলা দায়ের করে দু’পক্ষ। আদালত থেকে ডিক্রিও আদায় করে।’

    ২০১৮-র ২৪ জানুয়ারি সেবি’র তৎকালীন স্থায়ী সদস্য মাধবী পুরী বুচের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ওই ডিক্রিকে বৈধতা দেয়। সেই ডিক্রি প্রথমে হাইকোর্টে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যর সিঙ্গল বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ হয়। আদালত ওই ডিক্রি খারিজ করে দেয়। এ বার সেই রায় গুলশন গ্রুপের তরফে চ্যালেঞ্জ করা হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই শুনানিতেই ডিভিশন বেঞ্চের বিস্ফোরক পর্যবেক্ষণ সেবি’র বর্তমান চেয়ারপার্সন সম্পর্কে। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, নিম্ন আদালতের যে মামলায় সেবি যুক্তই ছিল না, সেখানে অশুভ আঁতাঁতে তৈরি রায়ে বৈধতা দেওয়া সেবি’র পুরোপুরি এক্তিয়ার বহির্ভূত।
  • Link to this news (এই সময়)