Sam Pitroda : রেসিস্ট-বিতর্কের জেরেই কি ‘স্বেচ্ছায়’ ইস্তফা পিত্রোদার!
এই সময় | ০৯ মে ২০২৪
এই সময়: ভোটের আবহে বড় ধাক্কা কংগ্রেসে! ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করলেন ওভারসিজ় কংগ্রেস ইউনিটের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদা। নাকি, ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে কংগ্রেসই বাধ্য করল তাঁকে পদ ছাড়তে?কিছুটা ধোয়াঁশা থাকলেও পিত্রোদার পদত্যাগের নেপথ্যে তাঁরই ‘সেমসাইড গোল’ বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার স্টাইলে ভারতেও ‘উত্তরাধিকার কর’ চালু করা উচিত বলে মন্তব্য করে গত মাসে বির্তকে জড়িয়েছিলেন রাহুল গান্ধীর মুখ্য পরামর্শদাতা পিত্রোদা। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। তার রেশ কাটার আগেই এ দিন ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’ ব্যাখ্যায় ভারতীয়দের ‘স্কিন-কালার’ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেন পিত্রোদা।
এক পডকাস্ট-সাক্ষাৎকারে পিত্রোদাকে বলতে শোনা যায়, ‘ভারত বৈচিত্রময় দেশ। এখানে পূর্বাঞ্চলের লোকেদের চিনাদের মতো দেখতে, পশ্চিমাঞ্চলের লোকেরা আরবদের মতো, উত্তরের লোকেরা শ্বেতাঙ্গ, আর দক্ষিণের লোকেদের চেহারা আফ্রিকানদের মতো। কিন্তু তাতে কী? ভারতীয়রা সবাই ভাই-বোনের মতো মিলেমিশে থাকেন।’
পত্রপাঠ পিত্রোদার এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে বিঁধতে শুরু করে দেয় গেরুয়া শিবির। তেলঙ্গানার র্যালি থেকে মোদীকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যাম পিত্রোদার এই মন্তব্যে আমি ভয়ঙ্কর রেগে গিয়েছি। শেহজাদাকে(রাহুল) এর জবাব দিতেই হবে। গায়ের রঙের ভিত্তিতে দেশবাসীর প্রতি এই অশ্রদ্ধা কিছুতেই মেনে নেবে না দেশ। আমাকে আপনারা বহু বার নানাবিধ খারাপ কথা বলেছেন। আমি কিছুই মনে করিনি। কিন্তু দেশের মানুষের অপমান আমি কোনও ভাবেই সহ্য করব না।’
কংগ্রেস অবশ্য সাফ বুঝিয়ে দেয় যে তারা পিত্রোদার মন্তব্যের দায় নিতে নারাজ। দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা জয়রাম রমেশ সকালেই টুইট করে বলেন, ‘দেশের বৈচিত্র ব্যাখ্যায় পিত্রোদা যা বলেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় কংগ্রেস এই ধরনের উপমার সঙ্গে একেবারেই একমত নয়।’ সন্ধের পরে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে টুইট করে বলেন, ‘মিস্টার পিত্রোদা স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কংগ্রেস তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে।’ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে অবশ্য, হাওয়া গরম দেখে কংগ্রেসই তাঁকে বাধ্য করেছে পদত্যাগ করতে।
তার আগে অবশ্য দিনভর তুলকালাম হয়ে গিয়েছে! পিত্রোদার ‘বর্ণবিদ্বেষী’ ও ‘বিভেদকামী’ মন্তব্যের পাল্টা গেরুয়া শিবিরের তরফে ধারাবাহিক আক্রমণ শানাতে থাকেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা, রবিশঙ্কর প্রসাদ, কঙ্গনা রানাউতের মতো বিজেপি নেতারা। এক্স প্ল্যাটফর্মে হিমন্তের তোপ— ‘স্যাম ভাই, আমি উত্তরপূর্বের মানুষ। এবং আমাকে চিনাদের মতো নয়, একজন ভারতীয়ের মতোই দেখতে। বৈচিত্রময় দেশে চেহারায় ভিন্নতা থাকলেও কিন্তু আমরা আসলে এক। দয়া করে আমাদের দেশটাকে একটু অন্তত বোঝার চেষ্টা করুন।’
‘রেসিস্ট’-এর পাশাপাশি পিত্রোদাকে ‘কংগ্রেসের শকুনিমামা’ বলেও তোপ দাগেন বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সি আর কেশবন। তাঁর কথায়, ‘পিত্রোদা নিজেই বিভেদকামী কংগ্রেসের আসল চেহারাটা আজ গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিলেন। উনি আজ বিদেশের মাটিতে বসে ১৪০ কোটি ভারতীয়কে অপমান করেছেন।’ রাহুলের ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি কংগ্রেস থেকে পিত্রোদার বহিষ্কারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
মোদী আবার খুঁচিয়ে তোলেন পুরোনো বিতর্কও। তেলঙ্গানার ওই র্যালি থেকেই মোদীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তখন সত্যিই বুঝতে পারিনি মাননীয় দ্রৌপদী মুর্মুকে কেন রাষ্ট্রপতি পদে মানতে পারছে না কংগ্রেস! আজ বুঝতে পারলাম। আমেরিকায় বসে থাকা শেহজাদার মামা-ই আমার চোখ খুলে দিলেন। শেহজাদার দার্শনিক মামা তো বলেই দিলেন, ভারতীয়দের মধ্যে যাঁদের গায়ের রং কালো, তাঁরা আফ্রিকানদের মতো দেখতে। বুঝতে পারছি, তখন সেই কারণেই কংগ্রেস দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে বেঁকে বসেছিল।’
কংগ্রেস দলগত ভাবে সে ভাবে মুখ না-খুললেও মোদীকে পাল্টা বিঁধতে ছাড়েননি কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কার্যত ডিফেন্সিভ স্ট্যান্সেই তাঁর তোপ, ‘মোদীজি অ-কাজের কথায় বেশি সময় নষ্ট করেন। পারলে কর্মসংস্থান নিয়ে ফুলটস বল খেলে দেখান। পারলে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ফুলটস খেলুন। নারী-নির্যাতন ইস্যুতে ফুলটস খেলুন। কই সে সবে তো আপনার ব্যাট চলে না!’