এই সময়: লোকসভা ভোট ঘোষণার পরে দেশজুড়ে জারি রয়েছে আদর্শ আচরণবিধি। তাই সরকারি কোনও অনুষ্ঠানমঞ্চে রবীন্দ্র-স্মরণে ব্যবহার করতে পারবে না কোনও রাজনৈতিক দল। কিন্তু তা বলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪-তম জন্মদিবস কবিগুরুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ঘিরেও রাজনৈতিক টানাপড়েন বাদ থাকল না।এদিন দিল্লিতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে রবীন্দ্রনাথের ছবিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন বিদায়ী লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার, সাগরিকা ঘোষ এবং সাকেত গোখলে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। তবে বিজেপি’র কোনও সাংসদকে সেখানে দেখা যায়নি।
এর আগে অবশ্য রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে বাংলায় এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ রাজ্যে এলে নরেন্দ্র মোদী কিংবা অমিত শাহের মতো প্রথম সারির বিজেপি নেতারা নিয়ম করে রবি ঠাকুরের স্মরণ নেন। কিন্তু সংসদের সেন্ট্রাল হলে অত্যন্ত দায়সারা ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হওয়ায় তা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘কেন আমরা বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলি, এর থেকেই বোঝা যায়। বাঙালির বিশ্বসেরা আইকনকে এরা সহজেই ভুলে যেতে পারে।’
বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে আমরা কীভাবে শ্রদ্ধা জানাব, সেটা যদি ওঁদের কাছ থেকে শিখতে হয় তার থেকে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হয় না। যে রাজ্যে গীতবিতানের জায়গায় কবিতাবিতান লেখা হয়েছে, বিশ্বভারতীর জায়গায় আর একটা বিশ্বভারতী (বিশ্ববাংলা) তৈরির পরিকল্পনা চলছে, সেখানে আর বলার কিছু থাকে না।’
যদিও এদিন সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় কবিগুরুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে তিনি লেখেন, ‘গুরুদেব টেগোরের জন্মজয়ন্তীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাঁর সহিষ্ণু প্রজ্ঞা ও প্রতিভা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত ও আলোকিত করতে থাকবে।’
এক্স হ্যান্ডেলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবসে তাঁকে জানাই আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম। দেশ কালের গণ্ডি পেরিয়ে আজও আমাদের আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশায়, সঙ্কট-সাফল্যে, উৎসব-পার্বণে তিনিই পরম আশ্রয়-আত্মার আত্মীয়। প্রার্থনা করি, মনুষ্যত্বের যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গিয়েছেন, তাকে পাথেয় করে এভাবেই যেন মাথা উঁচু করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে, সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারি।’
বিকেলে কলকাতার ক্যাথিড্রাল রোডে রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত কবি প্রণাম অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মমতা। তবে কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি আগাগোড়াই ছিলেন দর্শকাসনে। রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হয়। সকালে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ছিলেন শশী পাঁজা, বিমান বসু, তাপস রায়-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এদিন সকালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি প্রাঙ্গনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এতদিন সাধারণত ঠাকুরবাড়ি প্রাঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের মূর্তির সামনে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হতো। কিন্তু এবার অনুষ্ঠানটি হয়েছে দ্বারকানাথ মঞ্চে। তা নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, এখন নির্বাচন চলায় পুরোনো জায়গায় অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় খরচ কমাতে অনুষ্ঠানও কাটছাঁট করতে হয়েছে।