• সন্দেশখালিতে 'নির্যাতিতা'দের সাক্ষাৎ পাননি কেউই
    আজকাল | ১০ মে ২০২৪
  • রিয়া পাত্র, সন্দেশখালিসন্দেশখালি নিয়ে গত কয়েকমাসের চর্চার মোড় ঘোরাচ্ছে কয়েকটি ভিডিও। স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালের একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়ায়। তাতে তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, সন্দেশখালিতে টাকার বিনিময়ে মিথ্যে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে আরও একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। তাতে এক মহিলা দাবি করেছেন, কিছু না জানিয়েই সই করানো হয় সাদা কাগজে। সাফ জানিয়েছেন, ধর্ষণ বলে মিথ্যে অভিযোগ তার হয়ে দায়ের করা হয়েছে থানায়। পরে তা তুলতে গেলেও হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। ভিডিওগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আজকাল ডট ইন। তবে, সেখানে তৃণমূল, বিজেপি, বাম এবং সাধারণ মানুষ, সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করলেন অত্যাচারের কথা। জানালেন জমি দখল, ভেড়ি তৈরি, জুলুমের কথা। কিন্তু মা বোনদের শ্লীলতাহানি? ধর্ষণ? বললেন, "গুজব শুনেছি।" দেখেছেন কি? তাঁর জবাব কেউ দিতে পারেননি। শাহজাহান আর তার দলবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, মহিলাদের মিটিং-এর জন্য ডাকা হত, মিটিং শেষে বসিয়ে রাখা হত, রাতবিরেতে ডাকা হত পিঠে তৈরি করার জন্য। তারপর? এর বেশি কেউ জানেন না। পাত্র পাড়ার কেউ কেউ গঙ্গাধরের ভিডিও দেখে ঝাঁঝিয়ে উঠছেন। বলছেন গঙ্গাধর ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু তার পরে তাঁরাই আবার বিকেলের মিটিং এর জন্য বলতে যাচ্ছেন বাড়িতে বাড়িতে। কিসের মিটিং? বিজেপির। কেন? বলছেন, তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন সাধারণ মানুষ হিসেবে। কিন্তু নানাবিধ অত্যাচারের কারণে এখন বিজেপির হাত ধরেছেন। রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাশে না দাঁড়ালেও, ছেলে হয়ে মোদি দাঁড়িয়েছেন পাশে, অভিযোগ এটাই। সোমা দাসের মতো আবার অনেকেই বলছেন, "দেখুন অন্তত ২০ বছর রয়েছি এলাকায়। জমি নিয়ে অত্যাচার হয়েছে, হুমকি হয়েছে। কিন্তু মা বোনদের ওপর অত্যাচার দেখিনি।" তাঁদের মতে, আন্দোলন ছিল শাহজাহানের বিরুদ্ধে, শিবু, উত্তমের বিরুদ্ধে। সব ঠিক ছিল, ততদিন পর্যন্ত যতদিন না এখানে শুভেন্দু অধিকারী ঢুকে পড়লেন। কেউ কেউ গোটা ঘটনায় বিরক্ত। বলছেন, "কই আমাদের মা বোনদের কাছে তো এই প্রস্তাব আসেনি। তাহলে সব মা বোনেরা অত্যাচারিত কেন বলা হচ্ছে?" প্রায় তিন দশক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, প্রাক্তন শিক্ষক সন্তোষ বিশ্বাস বলছেন, সন্দেশখালিতে গুন্ডা রাজ চলত। মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। পুলিশের ওপর ভরসা ছিল না মানুষের। কিন্তু কতটা কী? জানেন না তিনিও। বলছেন ভিত্তি আছে, তবে কতটা "রং চড়ানো " জানেন না। যে গঙ্গাধর কয়ালের মন্তব্য ঘিরে এত শোরগোল, তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল তিনি নেই। ছেলেও মামাবাড়িতে। স্ত্রী বিমলা কয়াল রয়েছেন একা। ভাইরাল ভিডিও তাঁর মতে চক্রান্ত। অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে। কিন্তু তৃণমূল কেন এরকম করবে? বিমলার মতে, "সন্দেশখালির আন্দোলন থামানোর জন্য এই চক্রান্ত।" সন্দেশখালির আন্দোলন থামাতে চক্রান্তের শিকার বিজেপি নেতা কেন?  বললেন, "এর থেকে বেশি জানি না। " স্বামীর মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে না কি যোগাযোগই হয়নি তাঁর সঙ্গে। এদিকে বাড়ির বাইরে মোতায়েন পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশ যদিও জানেন না, কেন তাঁকে সেখানে ডিউটি দেওয়া হয়েছে। তবে বিমলা কয়াল বলছেন, "তৃণমূল আক্রমণ করতে পারে ভেবে নিরাপত্তার খাতিরে পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলেন।" স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আবার বলছেন, গঙ্গাধর বিজেপি করলেও, সৎ ছেলে।এসবের মাঝে বুধবার রাতে একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে রেখা পাত্র সহ তিন মহিলাকে দেখা গিয়েছে। এক মহিলাকে বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁরা সন্দেশখালি আন্দোলনে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে নির্যাতিতা হিসেবে কারা গিয়েছেন জানেন না তাঁরা। এই ভিডিওর সত্যতাও যাচাই করেনি আজকাল ডট ইন।
  • Link to this news (আজকাল)