• নয়া ভিডিয়োয় আরও বিড়ম্বনায় পদ্ম-শিবির
    এই সময় | ১০ মে ২০২৪
  • এই সময়: লোকসভা নির্বাচনের মাঝে সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) নিয়ে এমনিতেই খানিকটা বিড়ম্বনায় রয়েছে বিজেপি শিবির। সন্দেশখালি-২ নম্বর ব্লকের বিজেপি’র মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের ভাইরাল ভিডিয়োর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে বিজেপি যুক্তি দিলেও তা নিয়ে ভোটযুদ্ধে মাইলেজ তুলে নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।তারমধ্যে বুধবার সন্দেশখালির তিন নির্যাতিতা দাবি করেছেন, তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল এবং এখন তাঁরা অভিযোগ প্রত্যাহার করতে চাইলে বিজেপির কয়েকজন স্থানীয় নেত্রী তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন। সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে সরব গেরুয়া শিবিরের বিড়ম্বনা আরও বাড়ালো বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আসা নতুন একটি ভিডিয়ো (এরও সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’)।

    ওই ভিডিয়োতে এক সময়ে সন্দেশখালির আন্দোলনকারী হিসেবে যাঁদেরকে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে হাজির করেছিল বিজেপি, তাঁদের পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন খোদ বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী তথা সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ রেখা পাত্র। এদিন বসিরহাটের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে এই ভিডিয়োর বিষয়ে সাংবাদিকরা রেখার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ‘নো কমেন্টস’ বলে এড়িয়ে যান।

    সন্দেশখালির যে মহিলারা তাঁদের সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে এদিনই রেখার ছায়াসঙ্গী পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পিকে থানায় তলব করেছে সন্দেশখালি থানার পুলিশ। তাঁর বাড়িতে নোটিসও দেওয়া হয়েছে।

    গত শনিবার থেকে সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ইস্যুতে এরকম একের পর এক পাল্টা অভিযোগ ও ভিডিয়ো সামনে আসতে শুরু করায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াচ্ছে তৃণমূলও। এদিন এক ভার্চুয়াল জনসভায় জোড়াফুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা প্রমাণিত যে, কেন্দ্রের তাবড় নেতা, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর ইশারা ও অঙ্গুলিহেলনে সন্দেশখালি (নারী নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে) হয়েছে। তাঁদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদত ছিল।’

    সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে জাতীয় স্তরে বিজেপি’র উপর আরও চাপ বাড়াতে এদিন দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। ওই অভিযোগপত্রে শুভেন্দু অধিকারী, গঙ্গাধর কয়াল, শান্তি দলুই-সহ একাধিক বিজেপি নেতার নামে নালিশ ঠুকেছে তৃণমূল। তার প্রমাণ হিসাবে ভাইরাল ভিডিয়োর ক্লিপিংসও জমা দেওয়া হয়েছে।

    Sandeshkhali News: সন্দেশখালি স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে কমিশনে নালিশ তৃণমূলের

    ইসি-র দপ্তর থেকে বেরিয়ে সাগরিকা সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী, গঙ্গাধর কয়াল এবং শান্তি দলুইয়ের মতো যে বিজেপি নেতারা সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যা প্রচার করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি। শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে যে সব ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে, সেগুলো পুরো মিথ্যে।’

    সন্দেশখালির তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের অভিযোগকে বিজেপি এবার শুরু থেকেই লোকসভা ভোটে প্রচারের অস্ত্র করেছিল। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরাও বঙ্গে প্রচারে এসে বারবার এই সন্দেশখালি ইস্যুতে বিঁধেছেন রাজ্যের শাসক দলকে। সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি-র প্রচারমঞ্চেও হাজির করানো হচ্ছে। কিন্তু ভাইরাল ভিডিয়ো ফাঁস হওয়ার পর ‘আসল’ নির্যাতিতা কারা, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, নারী নির্যাতনের অভিযোগ সবই বানানো। এদিন নতুন ভাইরাল ভিডিয়ো জোড়াফুলের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে।

    ওই ভিডিয়োয় রেখা পাত্র-সহ তিন মহিলাকে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা সন্দেশখালির আন্দোলনে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ছিলাম আমরা সবাই। আমাদের ছাড়া রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে কারা গেল? আমরা তাহলে কারা?’ তখন পাশ থেকে আরও এক মহিলা বলছেন, ‘অনুপ দাস নিয়ে গিয়েছিল বলে খবর পেয়েছি। ভিতরে ভিতরে শিবু হাজরার কাছ থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে নিতেন। ওঁর সঙ্গে একজন (মহিলা) গিয়েছিলেন। তাহলে কি ওই মহিলা তৃণমূলের লোক, উপরে উপরে বিজেপি করেন?’

    তারপরই রেখাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা নির্যাতিতা মায়েরা সন্দেশখালিতে পড়ে আছি। তাহলে আমাদের হয়ে কারা গিয়েছে, সেটা জানা প্রয়োজন। আর রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে যে গিয়েছেন, আমাদের কিছু জানিয়েছিলেন? আমরা আন্দোলনের মুখ। আমাদের না নিয়ে গিয়ে অন্যদের সাজিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস কে দিয়েছে?’

    লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বারাসতে একটি জনসভায় যোগ দিতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময়ে রেখা-সহ কয়েকজন আন্দোলনকারী তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এরপরই সন্দেশখালির ঘটনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির কাছে নালিশ জানাতে কয়েকজন মহিলাকে দিল্লিতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকেই সে সময়ে সন্দেশখালির আন্দোলনকারী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাইরাল ভিডিয়োতে রেখা-সহ তিনজন মহিলা আন্দোলনকারী যে বক্তব্য পেশ করেছেন, সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে, সন্দেশখালি আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন না তাঁদেরকেও রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

    মনোনয়ন জমা দিতে এদিন রেখা বারাসতে জেলাশাসকের দপ্তরে যান। সেই সময়ে ভাইরাল ভিডিয়ো প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি কোনও জবাব দেননি। ‘নো কমেন্টস’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। ওই সময়ে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা এবং বুম ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তুমুল বাকবিতন্ডা এবং ধস্তাধস্তি হয়।

    এদিন রেখার পাশাপাশি বারাসতের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার মনোনয়ন জমা দেন। তাঁদের দু’জনকে নিয়ে শোভাযাত্রায় ছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সন্দেশখালির ভিডিয়ো প্রসঙ্গে এদিন কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। তবে রেখার পাশে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী, দলিত পরিবারের মেয়ে রেখা পাত্রকে ভয় পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ভয় দেখে আমাদের গর্ব হচ্ছে। বসিরহাটে চোরেদের সঙ্গে রেখার লড়াই হচ্ছে। রেখাই জয়ী হবেন।’

    এদিন সামনে আসা নতুন ভিডিয়োর প্রেক্ষিতে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘গোটাটাই নাটক ছিল। কখনও রেখাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কখনও অন্যদের নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।’ যদিও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘যাঁদের সামনে আনা হয়েছে, তাঁরাই কি শুধু ভুক্তভোগী? যাঁরা মুখ খুলছেন না, যাঁরা প্রকাশ্যে আসছেন না, তাঁরা কি ভুক্তভোগী নন? সন্দেশখালিতে পাড়ায় পাড়ায় ভুক্তভোগী। ১০ বছর ধরে এই ঘটনা চলেছে।’
  • Link to this news (এই সময়)