অফিসে ‘সুইটি’, ‘বেবি’ বলা মানেই হেনস্থা নয়: হাইকোর্ট
এই সময় | ১০ মে ২০২৪
‘স্যাম বাহাদুর’ সিনেমায় সেনাবাহিনীর ফিল্ড মার্শাল মানেকশ’র কথা মনে আছে? যিনি লিঙ্গ-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকেই ‘সুইটি’ বলে সম্বোধন করতেন? কিন্তু রিলের সেই ‘সুইটি’ সম্বোধন রিয়েল লাইফে নেভির এক শীর্ষ অফিসারকে আইনের কাঠগড়ায় এনে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, ওই অফিসারের ‘বেবি’ ডাক নিয়েও আদালতের দরজায় কড়া নেড়েছেন নেভিরই এক মহিলা অফিসার।মামলায় নেভির এক মহিলা অফিসার তাঁর সুপিরিয়রের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন। হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় ওই মহিলা তাঁর সুপিরিয়রের ‘সুইটি’ ও ‘বেবি’ সম্বোধনকেই জোরালো প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যদিও বিচারপতি ভট্টাচার্যের বক্তব্য, এই ধরনের শব্দপ্রয়োগ সামাজিক কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত। শব্দের ক্ষেত্রে একে সেক্সুয়াল রং দেওয়া হয় না।
আদালতের সামনে এটাও উঠে আসে যে, ওই মহিলা যখন তাঁর অফিসারকে জানান তিনি এই ধরনের সম্বোধন শুনতে অভ্যস্ত নন, ওই অফিসারও সঙ্গে সঙ্গে এই সব শব্দের ব্যবহার বন্ধ করে দেন। এই মামলার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ দেখে ‘স্টেয়ারিং’ বা তাকানোর প্রসঙ্গও টেনেছে হাইকোর্ট। আদালতের বক্তব্য, অনেক রকম ভাবেই তাকানো যায়। কিন্তু তাকানো মানেই যৌনহেনস্থা, এমনটা সবসময়ে না-ও হতে পারে।
এর আগে ওই মহিলা তাঁর অফিসের ইন্টারনাল কমপ্লেনস কমিটির (আইসিসি) কাছেও এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কমিটি জানায়, এই ধরনের শব্দপ্রয়োগ সঠিক নয়। তবে কমিটি এ-ও লক্ষ্য করেছে, অভিযোগকারিণী যখন হোয়াটসঅ্যাপ করে এবং অন্য ভাবে ওই অফিসারকে তাঁর আপত্তি বোঝান, তখন থেকে আর অভিযুক্ত অফিসার ওই সব শব্দ ব্যবহার করেননি। আদালত মনে করছে, মহিলার আপত্তি শুনে থেমে যাওয়ার অর্থ একটাই— মহিলাকে বিরক্ত করা বা সেক্সুয়াল ইঙ্গিত করে হেনস্থা করার পথে হাঁটেননি অভিযুক্ত অফিসার।
ওই মহিলা আরও নানা ভাবে তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু সে সবের সমর্থনে কোনও সাক্ষ্য, সিসিটিভি ফুটেজ ইত্যাদি যে পাওয়া যায়নি, তা জানিয়েছিল আইসিসি। কোর্টের নজরে এটাও এসেছে। অভিযোগের ধারাবাহিকতা এবং ঘটনাক্রম দেখে কোর্ট এই অভিযোগকে সঠিক বলে মনে করেনি। অভিযোগকারিণীর অন্য সহকর্মীরা এর আগে নানা সময়ে তাঁর সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ করেছিলেন অফিস কর্তৃপক্ষের কাছে। সে সব থেকে বাঁচতেই তিনি এই মামলা করেছেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে আদালত।
বিদেশে দেখেছি হানি, বেবি বা সুইটির মতো শব্দ অফিস-কাছারিতে খুব স্বাভাবিক ভাবে ব্যবহার হয়। এটা অনেকটা স্নেহের বা আদরের ডাক। কিন্তু এ দেশে এটা খুব স্বাভাবিক বলে আমরা হয়তো মনে করি না। কারণ আমরা অভ্যস্ত নই। তবে শব্দ ব্যবহার করলেই হলো না, তার সঙ্গে বডি ল্যাঙ্গোয়েজও একটা বড় ব্যাপার। — পবিত্র সরকার, ভাষাবিদ
আমি এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি, যেখানে বেবি বা সুইটি ডাকে অভ্যস্ত নই। যদিও হলিউডের ছবি বা বিদেশে গিয়েও দেখেছি, সেখানে এটা খুব স্বাভাবিক সম্বোধন। তবে আমাদের এখানে স্নেহ বা আদর করে মামনি ডাক অনেক বেশি আন্তরিক লাগে শুনতে। — সোহিনী সরকার, অভিনেত্রী