নতুন শিক্ষানীতিতে এই শিক্ষাবর্ষে কলেজগুলিতে পাঠ্যক্রম সরলীকরণ করে চালু করতে চলেছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছর কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে উচ্চ শিক্ষা দফতরে নির্দেশ মতো সমস্ত তথ্য পাঠাচ্ছে তারা। গত বছর থেকে নতুন শিক্ষানীতি চালুর পরে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজে বহু ছাত্রছাত্রী কোনও না কোনও বিষয়ে পাশ করতে পারেননি। কেন তেমন হল, তা খোঁজ করতে গিয়ে পাঠ্যক্রমের বিস্তার এবং নিয়মিত ক্লাস না হওয়ার মত বিভিন্ন বিষয় সামনে এসেছিল। সেই সময় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, পাঠ্যক্রম সরলীকরণের কথা ভাবা হচ্ছে। সে মতো নির্দিষ্ট কমিটি গড়ে কাজ করেন তাঁরা। এ বছর থেকে পড়ুয়ারা ‘সিঙ্গল মেজর’ এবং ‘সিঙ্গল মাইনর’ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা সুযোগ পাবেন। পড়ুয়াদের একাংশের জন্য পাস কোর্সের মতো তৈরি করা হয়েছে ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি কোর্স’। বিষয়টি নিয়ে মোটের উপরে খুশি ছাত্র সংগঠনগুলিও।
আলিপুরদুয়ার থেকে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর পর্যন্ত ৫০টির বেশি কলেজ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তথা কলেজ সমূহের পরিদর্শক (অস্থায়ী) দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘এ বছর থেকে কোর্স সরলীকরণ করা হয়েছে। গত বছর নতুন শিক্ষানীতিতে কোর্স চালুর পরে দেখা যায়, একাধিক পড়ুয়ারা কোর্সের আয়তনের জেরে সমস্যায় পড়েছেন। অনার্সের ধাঁচে যারা পড়ছেন আর পাস কোর্সের ধাঁচে যারা পড়তে চান, সকলকেই একই পাঠ্যক্রম পড়তে হচ্ছিল। এ বার সেটা আলাদা করা হল। এ বছর কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির প্রক্রিয়া হবে। সে মতো সমস্ত তথ্য উচ্চ শিক্ষা দফতরে আজ, শনিবারের মধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, গত বছর থেকে নতুন শিক্ষানীতিতে অনার্সের পরিবর্তে একটি ‘মেজর’ বিষয় (অনার্সের মতো) এবং সঙ্গে দু’টো ‘মাইনর’ বিষয় নিয়ে চার বছরের পাঠ্যক্রম চালু করা হয়। নিয়ম মেনে সঙ্গে আরও চারটি বিষয় নিতে হয়। এ ছাড়া, রয়েছে ‘ইনটার্নশিপ’। আগের যে পাস কোর্স ছিল, তার অবলুপ্তি ঘটে। তার পরিবর্তে পাস কোর্সে পড়তে ইচ্ছুকদেরও একই রকম একটি ‘মেজর’ এবং দু’টি ‘মাইনর’ নিয়েই পড়তে হচ্ছিল। সঙ্গে আরও চারটি বিষয় এবং ‘ইনটার্নশিপ’। তাতে গত বছর ৯০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া পাশ করতে পারেনি। এ বার অনার্সের মতো যারা পড়তে চান, তাঁদের জন্য দু’টো ‘মাইনর’ বিষয়ের পরিবর্তে একটি ‘মাইনর’ বিষয় পাঠ্যক্রমে রাখা হয়। অর্থাৎ, ‘সিঙ্গল মেজর’ এবং ‘সিঙ্গল মাইনর’ থাকছে তাঁদের পাঠ্যক্রমে। সঙ্গে চারটি বিষয় (এবিলিটি এনহ্যান্সমেন্ট কোর্স, ভ্যালু অ্যাডেড কোর্স, স্কিল এনহ্যান্সমেন্ট কোর্স, ইন্টার ডিসিপ্লিনারি কোর্স)।
পাস কোর্সের ধাঁচে এ বার চালু করা হচ্ছে ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি কোর্স’। সেখানে তিনটি বিষয় পড়তে হবে পড়ুয়াদের। সঙ্গে ‘এবিলিটি এনহ্যান্সমেন্ট’-এর মতো চারটি বিষয় এবং ‘ইনটার্নশিপ’। তাতে একাধিক ছাত্রছাত্রী যাঁরা অনার্সের ধাঁচে পড়াশোনার পরিবর্তে পাস কোর্স-এর ধাঁচে পড়তে আগ্রহী, তাঁদের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হল।
অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রদেশ সম্পাদক শুভব্রত অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘আমরা সব সময়ই চেয়েছি, পড়ুয়াদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিক। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তনয় তালুকদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘নতুন শিক্ষানীতি একেই জটিল। তার উপরে যে ভাবে চালু করা হয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে এমন বিষয় ছিল, যে তা পড়ানোর শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন না। তাই কোর্স সরলীকরণ এবং কলেজের পরিকাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’ এসএফআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অঙ্কিত দে বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবেন এমন সিদ্ধান্ত হলে আমরা পক্ষে থাকব। তবে এই নতুন শিক্ষানীতির বিপক্ষে আমরা। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন চাই। পড়ানোর গুণগত মান উন্নয়ন এবং যথাযথ ভাবে ক্লাস করানোও প্রয়োজন।’’