• আবার সন্দেশখালি! মোদী কলকাতায় নামার পরপরই আবার স্টিং ভিডিয়ো! সেই ‘গঙ্গাধরের মুখেই নতুন তথ্য’
    আনন্দবাজার | ১২ মে ২০২৪
  • সন্দেশখালি স্টিং অপারেশনের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ্যে এল শনিবার রাতে। আগেরটির মতো এই ভিডিয়োটিরও সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। এই ভিডিয়োতেও সন্দেশখালির দু’নম্বর ব্লকে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সেই গঙ্গাধর কয়ালকেই দেখা গেল। ৪৬ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োর শুরুতেই, সন্দেশখালিতে যে মহিলারা আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের আর্থিক সাহায্য করার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে ‘গঙ্গাধরকে’। গঙ্গাধর অবশ্য প্রথম ভিডিয়োটি 'বিকৃত' বলে ইতিমধ্যেই সিবিআইকে বয়ান দিয়েছেন। কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও করেছেন। শনিবার রাতে স্টিং ভিডিয়োর দ্বিতীয় পর্বটি যখন প্রকাশ্যে আসে, ঘটনাচক্রে সেই সময়ে কলকাতাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার সন্ধ্যায় এসেছেন তিনি। রবিবার রাজ্যের তিন জেলায় চারটি নির্বাচনী জনসভা করবেন।

    প্রশ্নকর্তা : আজকে শুভেন্দুদা টাকা পাঠানো মোবাইল পাঠানো, সব সাপোর্ট দিচ্ছে...
    গঙ্গাধর : সত্যিই খালি হাতে হবে না এ সব। আমরা নয় দীর্ঘ দিন করে আসছি। আমরা মেনে নিতে পারব। কিন্তু সবাই তা করতে পারবে না।

    প্রশ্নকর্তা : আপনারা তো হাতে গুনে ১০ জন।
    গঙ্গাধর : হ্যাঁ ১০ জন, ১০ জন। ১০ জনের বেশি পাওয়া যাবে না সন্দেশখালিতে। এক টাকা ছাড়া তারা কথা বলবে না। আমি তো নিজে বুঝতে পারছি। যতই পুরনো কার্যকর্তা হোক। জেলার নেতাদের দেখতে পাচ্ছেন? তাদের দেখতে পাবেন না।

    প্রশ্নকর্তা : ওরা দেখছে, কয়াল উঠে যাচ্ছে! তা হলে আমরা কেন পিছনে পড়ে থাকব? শুনুন চেয়ারে বসতে গেলে মাঠে খাটতে হবে।
    গঙ্গাধর : হ্যাঁ, চেয়ারে বসতে গেলে মাঠে খাটতে হবে। ওদের ঈর্ষা হচ্ছে কারণ আমি সংগঠনকে দাঁড় করাচ্ছি।

    প্রশ্নকর্তা : তবে আপনার কাজ নিয়ে কিন্তু দাদা খুব খুশি...
    গঙ্গাধর : (হাসি)

    প্রশ্নকর্তা : এ বার আমাকে কতগুলি হিসাব দিন। যে সব মহিলা আন্দোলন করেছেন, তাঁদের আগে সাপোর্ট করা দরকার। কারণ তাঁরা জ্বলেছে... এঁদেরকে সামলে রাখতে হবে। এঁদের মধ্যে কত জন এখনও পর্যন্ত টাকা পেয়েছেন? কত হবে সংখ্যাটা?
    গঙ্গাধর : ৭২ জন টাকা পেয়েছেন।

    প্রশ্নকর্তা : এক বার পেয়েছেন না দু’বার?
    গঙ্গাধর : এক বারই পেয়েছে।

    প্রশ্নকর্তা : মোবাইল পেয়েছে কেউ?
    গঙ্গাধর : না মোবাইল পায়নি।

    প্রশ্নকর্তা : ও দিকে তো মোবাইল পেয়েছে?
    গঙ্গাধর : হ্যাঁ, ওই শান্তনুদের এলাকায় মোবাইল পেয়েছে। আমার এলাকায় কেউ পায়নি।

    প্রশ্নকর্তা : আন্দোলন জারি রাখতে গেলে মোবাইলের প্রয়োজন আছে?
    গঙ্গাধর : আছে আছে। খান দশেক দিলে ভাল হয়। ১০টা দিলে কাজ হয়ে যাবে।

    প্রশ্নকর্তা : এ রকম হবে না তো যে এক জনকে দিলে, অন্য জন মুখ ভার করে বসে রইল..
    গঙ্গাধর : না সে রকম হবে না। জানতে দিলে হবে না।

    প্রশ্নকর্তা : ৭২ জনকে ২ হাজার করে দেওয়া হয়েছে?
    গঙ্গাধর : হ্যাঁ, ২ হাজার। শান্তনু বলেছিল, লিকুইড ক্যাশ ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এনভেলপের ভিতরে কী ছিল বলেনি।

    প্রশ্নকর্তা : পাঁচ হাজার টাকা করে ও (শান্তনু) মহিলাদের দিয়েছিল।
    দু’জনেই : জেলিয়াখানি, বেড়মজুর ১ ও ২-তে দিয়েছিল।

    প্রশ্নকর্তা : আপনার মিনিমাম কত হলে চলতে পারে? আপনার কত লাগবে?
    গঙ্গাধর : এক লাখ হলে চলে যাবে।

    প্রশ্নকর্তা : এই খরচাগুলো পার্টিই দেবে। ধরুন এখানে ১০টা বাইক লাগবে...
    গঙ্গাধর : তাদের তেল ভরে দিতে হবে। টিফিন থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ। অনেক কিছু দিতে লাগে তো। মদের খরচও আছে।

    প্রশ্নকর্তা : লুকিয়ে চুরিয়ে বলার কোনও কারণ নেই।
    গঙ্গাধর : এ বার ধরুন কোরাকাটিতে বৈঠক আছে। সেখানে আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। আমিই মূল লোক। আমার কিছু হয়ে গেলে নির্বাচন শেষ। ১০টা ছেলে আমাকে এসে নিয়ে যাবে। তাদের তেল না দিলে আসবে?

    প্রশ্নকর্তা : সব জোগান দিতে হবে।
    গঙ্গাধর : কারও হয়তো মোবাইলে পয়সা ভরে দিতে হবে। এগুলোও দিতেই হবে। দিয়েছি তো আমি।

    প্রশ্নকর্তা : আগের দিন আপনার সঙ্গে কথা হল যে বিষয়ে। মোটামুটি ৫০ জন মহিলাকে...
    গঙ্গাধর : মোটামুটি ৫০ জন মহিলাকে সাপোর্ট দিতে পারলে আমাদের আন্দোলন আরও দাঁড়িয়ে যাবে এবং সংগঠন আরও মজবুত হবে। আমি একটা তালিকা তৈরি করে আপনাদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ করে দেব।

    প্রশ্নকর্তা : না না, হোয়াট্‌সঅ্যাপ নয়। কোথা থেকে কী ভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে, কেউ জানেন না। এর থেকে আমাদের হাতে লিখে নিলাম। আপনারও ঝামেলা থাকল না, আমাদেরও থাকল না। হোয়াট্‌সঅ্যাপে পাঠালে প্রমাণ থেকে যাবে। ভোট পর্যন্ত আপনার মোট কতটা পরিমাণ মদ লাগবে? মহিলাদের এবং পুরুষদের জন্য আলাদা করে বলুন?
    গঙ্গাধর : আদিবাসী এলাকায় বেশি লাগে। তফসিলি এলাকায় একটু কম। তিনটে অঞ্চলে প্রায় ৫০টি বুথ রয়েছে। সন্দেশখালিতে ১০টি বুথ রয়েছে। সেখানে বেশি মদ লাগবে। এখানে তফসিলি উপজাতি বেশি। মুসলিমরা সংখ্যায় ৩০০ জনের মতো।

    প্রশ্নকর্তা : আপনার মণ্ডলে ভোটের দিন পর্যন্ত কতটা কী লাগবে বলুন?
    গঙ্গাধর : (খানিক ক্ষণ ভেবে) আমার তো ওই ভাবে ধারণা নেই।

    প্রশ্নকর্তা : তাও আন্দাজে একটু বলুন। এখন থেকেই বাজেট না করলে শেষ মুহূর্তে সামলে উঠতে পারব না।
    গঙ্গাধর : তাও বুথ প্রতি ৫ হাজার করে ধরুন।

    প্রশ্নকর্তা : তার মানে ৫০টি বুথে আড়াই লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা কত থাকবে?
    গঙ্গাধর : ধরুন ৩০ শতাংশ মহিলা এবং ৭০ শতাংশ পুরুষ।

    প্রশ্নকর্তা : এই মহিলাদের মধ্যে কি আমাদের আন্দোলনকারী মহিলারাও থাকবেন?
    গঙ্গাধর : আন্দোলনকারী মহিলারা তো সকলে মদ্যপান করে না।

    প্রশ্নকর্তা : যারা খাচ্ছে, তারাও আন্দোলনকারীদের মধ্যে থাকবেন তো? খরচও ওর মধ্যেই ধরা হচ্ছে তো?
    গঙ্গাধর : হ্যাঁ, তারা থাকবেই। তবে আলাদা আলাদা। পুলিশের সামনে তারা আসবে না। পুরুষরা পিছন থেকে সাহায্য করবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)