এক সময়ে মন্দিরবাজার ছিল সিপিএমের দুর্গ। রাজ্যে ক্ষমতার পালা-বদলের পরেই সেই দুর্গ ভেঙে চুরমার। তৃণমূল ক্ষমতার রাশ ধরে এখানেও। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের অন্দরে ফাটল ধরেছে, তা কিছু এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। শাসক দলের পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। নিয়োগ-দুর্নীতিতে বিধায়কের নামে পোস্টার পড়েছে এলাকায়। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, এ বার তৃণমূলের গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়েছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, একশো দিনের কাজ প্রকল্প এবং আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ।
এলাকার অনেকের অভিযোগ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাসক দলের নেতাদের কাছে নালিশ জানিয়ে তো লাভ হয় না বরং তাঁদের মদতেই বহু ঘটনা ঘটে। তৃণমূল কর্মীদের একাংশেরও অভিযোগ, দুর্নীতি-স্বজনপোষণ বিষয়গুলি নিয়ে দলে চোরাস্রোত তীব্র হয়েছে কয়েক বছর ধরেই। শাসক দলের গোষ্ঠী-কোন্দল নিয়ে সরব বিরোধীরাও। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তাঁদের অনেককেই এখন দলের প্রথম সারিতে দেখা যায়। প্রথম সারির পুরনো নেতাদের অনেকে এখন দলের পিছনের সারিতে। মিটিং-মিছিলে তাঁরা খুব একটা বেরোন না।
দুর্নীতি বা স্বজনপোষণের অভিযোগকে অবশ্য বিশেষ আমল দিচ্ছেন না মন্দিরবাজারের বিধায়ক তথা তৃণমূলের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জয়দেব হালদার। তাঁর দাবি, ‘‘এখানে স্বজনপোষণ হয়নি। প্রতিটি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পেয়েছে। গোষ্ঠী-কোন্দল নেই। দলের নির্দেশ মেনে কোনও কোনও পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে আমরা ভাল ফল করব।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিরোধীরা আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।’’
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরে মন্দিরবাজার ব্লকের কিছু জায়গায় বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে নিজেদের জায়গা তৈরি করতে শুরু করে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে দলের ছন্নছাড়া চিত্রটা প্রকট হয়েছে। কিছুদিন আগে একটি সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগ দিয়েছেন দিলীপ জাটুয়া-সহ বেশ কয়েকজন কর্মী। তিনি এক সময় বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বে ছিলেন। এমনকি বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁকে। তবে সোমবার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে কৃষ্ণচন্দ্রপুরের সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও ইভিএম মেশিনে তার কতটা প্রভাব পড়বে তা সময় বলবে।
বিজেপির রাজ্য তফসিলি মোর্চার সহ-সভাপতি অশোক পুরকাইত মন্দিরবাজার ব্লকের বাসিন্দা। মথুরাপুরের লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অশোকের বক্তব্য, ‘‘বুথ সভাপতিরা কাজ করছেন। মাঝে সংগঠন কিছুটা ছন্নছাড়া হয়েছিল। তা সামলে নেওয়া গিয়েছে। তাছাড়া তৃণমূল যে দুর্নীতিগ্রস্ত ও চোর তা মানুষ জেনে গিয়েছে। লোকসভা ভোটে আমরা বেশ ভাল ফল করব।’’
গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে এলাকায় আইএসএফের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। কিছু এলাকায় তাঁরা মজবুত সংগঠন গড়ে তুলেছেন বলে দাবি দলীয় নেতৃত্বের। ঘর গোছাতে ব্যস্ত সিপিএম-ও। বুথ স্তরে বৈঠক হচ্ছে, দলীয় কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। দুর্নীতিকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করেছেন তাঁরা। সিপিএম নেতা সজল চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘এক দিকে বিজেপির জয় শ্রীরামের আবেগ আর অন্য দিকে, শাসক দলের হুঁশিয়ারি - এই দুইয়ের জাঁতাকলে থেকেও আমরা সংগঠন ধরে রেখেছি।’’