শিয়রে ভোট। নির্বাচনের আগে খড়্গপুর শহরে রেলের অবদান নিয়েই সুর চড়াচ্ছে দুই যুযুধান। বিজেপি ও তৃণমূল। কেন্দ্রের রেলের মাধ্যমে শহরের উন্নয়নকে তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। আবার রেলের এলাকার সমস্যা তুলে ধরে বিজেপিকে বিঁধছে তৃণমূল। এমন পরিস্থিতিতে রেলশহরে এসে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। পাশাপাশি এ রাজ্যের ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেলশহরের সমস্যা সমাধানে প্রতিজ্ঞাও করেন রেলমন্ত্রী!
শুক্রবার খড়্গপুর শহরের ধ্যানসিংহ ময়দান রেলমন্ত্রীর সেই প্রতিজ্ঞার সাক্ষী থাকল। এ দিন মেদিনীপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের প্রচারে রেলশহরের ওই ময়দানেই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জনসভা করেন। এ দিন বিকেল ৪.৩০টের সময় সভামঞ্চে আসেন অশ্বিনী। তার আগে যান খড়্গপুরের জগন্নাথ মন্দির দর্শনে। পরে সভামঞ্চে রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বক্তৃতা করেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। ওই বক্তৃতায় নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ঝুটি দিদি’ বলে কটাক্ষ করে ‘ঝুট বোলে কাউয়া কাটে’ গান ধরেন বিজেপি প্রার্থী। এর পরেই বক্তৃতা করতে গিয়ে নাম না করে পূর্বসূরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন রেলমন্ত্রী। অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘‘একসময় ছিল যখন ঝুটি দিদি রেলমন্ত্রী ছিলেন, যখন যেখানে খুশি শিলান্যাস করে দিতেন। কাজ নিয়ে কোনও ভাবনা নেই। আপনাদের সমস্যা নিয়েও ওঁর কোনও ভাবনাচিন্তা নেই।’’ প্রসঙ্গত, ‘এনডিএ’ আমলে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারে রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা। তাঁর সাফল্য বোঝাতে গিয়ে একাধিকবার সে কথা উল্লেখ করে মমতা বাজপেয়ীর সঙ্গে মোদী সরকারের তুলনা টানেন। মমতা এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যান ২০০১-এ। এরপর ২০০৪’এ এনডিএ ক্ষমতা হারায়। তারপর বাজপেয়ীর আপ্ত-সহায়ক হন তৎকালীন আইএএস অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেই অশ্বিনীই এখন রেলমন্ত্রী ও মমতার উত্তরসূরি।
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ধরেই টাকা বরাদ্দের অঙ্কে রেলমন্ত্রকের কাজের তুলনা টানেন অশ্বিনী। রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের জমানায় যখন মমতা দিদি রেলমন্ত্রী ছিলেন বাংলার রেলের উন্নয়নের জন্য দিতেন তিন হাজার কোটি টাকা। এখন মোদীজি পাঠান ১৩ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। প্রায় চারগুণ বেশি।’’ এই শহর থেকেই শুধু গত লোকসভা ভোটে ৪৫ হাজার ‘লিড’ পায় বিজেপি। তার পরে রেলের এলাকায় সেতু, উড়ালপুল, আন্ডারপাস, জলপ্রকল্পের কাজ রেল করলেও রেলের বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসায়ীদের বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ বার নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে এই বিষয়গুলি সামনে রেখেই প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল-বিজেপি। অশ্বিনী বৈষ্ণব এ দিন বলেন, ‘‘দিদিভাই (অগ্নিমিত্রা) আমাকে বললেন খড়্গপুরে অনেক সমস্যা। বাজারের সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। আমি দিদিভাইকে অনুরোধ করেছিলাম আপনি আমাকে আমাদের সকল ভাই-বোনের কাছে নিয়ে চলুন। এখন সকলের সামনে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনারা দিদিভাইকে ভোট দিয়ে দিল্লি পাঠান।’’
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশ্বিনী তুলেছেন প্রকল্প বাতিলের অভিযোগও। অশ্বিনী বলেন, ‘‘মমতা দিদিকে মোদীজি মোবাইল ফোনের মতো ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী উৎপাদনের দু’টি কারখানা গড়ার টাকা পাঠিয়েছিলেন। মমতা দিদি কী করলেন?’’ কারণ ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারতন্ত্র নিয়ে সমালোচনা করেন রেলমন্ত্রী। বলেন, ‘‘কারণ, মমতা দিদি শুধু নিজের ভাইপো, নিজের পরিবারের জন্য কাজ করেন।’’