অর্ণব আইচ: দাঁত দিয়েও মানুষ চেনা যায়। শনাক্ত করা যেতে পারে দেহ। তাই এখনও পর্যন্ত ৮০০ মানুষের দাঁত সংগ্রহ করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে লালবাজার। এর মধ্যে শতাধিক দাঁত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে। গত প্রায় দশ বছর ধরে মানুষের দাঁত সংগ্রহ করে চলেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যেক মাসেই কলকাতার বিভিন্ন জায়গা উদ্ধার হয় বহু অজ্ঞাতপরিচয় দেহ। বিশেষ করে গঙ্গায় দেহ ভেসে এলে তা-ও উদ্ধার করার দায়িত্ব পড়ে কলকাতা পুলিশের উপর। অনেক সময়ই দেহগুলি শনাক্ত হয় না। আবার দেহগুলি শনাক্ত করা গেলেও অনেক সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
যিনি দেহটির দাবিদার, দেহটি আসলে তাঁরই পরিজনের কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এমনকী, কয়েক মাস বা বছর ঘোরার পরও আসতে পারেন দাবিদার। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পর অজ্ঞাতপরিচয় দেহের শেষকৃত্য করে পুলিশ ও পুরসভা। এর পর আর দেহের কোনও অংশের চিহ্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু পরবর্তীকালে ওই দেহের কোনও দাবিদার এলে অথবা দেহটি কোনও মামলার অন্তর্ভুক্ত হলে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। অথচ দেহের কোনও অংশ না থাকলে দেহের ডিএনএ পরীক্ষা সম্ভব নয়। তাই এই ধরনের সমস্যার সমাধানে প্রায় বছর দশেক আগেই কলকাতা পুলিশ প্রত্যেকটি অজ্ঞাতপরিচয় দেহ উদ্ধারের পর সেগুলির দাঁত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমতো যে কোনও অজ্ঞাতপরিচয় দেহ অথবা পরবর্তীকালে ডিএনএ পরীক্ষার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন ধারণা হলে সেই দেহটি থেকে দাঁত সংগ্রহ করা শুরু হয়।
খাবার চিবানোর জন্য বারোটি ‘মোলার’ দাঁত মানুষের মুখের পিছনের দিকে থাকে। সেরকম একটি দাঁতই চিকিৎসকরা তুলে পুলিশকর্মীদের হাতে তুলে দেন। সাধারণত মর্গ থেকে ‘মোলার’ দাঁত সংগ্রহ করার পর সেটি বিশেষ একটি পাত্রে করে লালবাজারে নিয়ে আসা হয়। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে রয়েছে দাঁতের ‘সংগ্রহশালা’। লালবাজারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত অন্তত ৮০০ দাঁত কলকাতা পুলিশ সংগ্রহ করে ওই সংগ্রহশালায় রেখেছে। যে পাত্রটিতে দাঁত রয়েছে, তাতে রয়েছে বিশেষ নম্বর। সেই নম্বর অনুযায়ী রয়েছে সেই মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য।
কবে ও কোন জায়গা থেকে দেহটি উদ্ধার হয়েছে, দেহটি পুরুষ না কি মহিলার, দেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পর্কেও তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এমনও দেখা গিয়েছে যে, দেহটি শেষকৃত্য করার অনেক পরে এসেছেন দাবিদার। তখন দেহটি ওই দাবিদারের পরিজনের কি না, তা জানার জন্য দেহের নমুনা হিসাবে সংগ্রহশালা থেকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দাঁতই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ফরেনসিকে। লালবাজারের দাবি, এখনও পর্যন্ত শতাধিক দাঁত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, সংগ্রহশালায় আরও দাঁত যুক্ত হবে। তাই সেইমতো পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।