• বাগদায় ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া তৃণমূল, আজ সভা অভিষেকের
    আনন্দবাজার | ১৩ মে ২০২৪
  • একটা সময়ে তৃণমূল শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১৬ সাল থেকে বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়ে আসছে। এ বার লোকসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। তারই প্রস্তুতি হিসেবে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ, রবিবার সভা করতে আসছেন বাগদায়।

    তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, বাগদা ব্লকের হেলেঞ্চা হাই স্কুলের মাঠে দুপুরে অভিষেকের সভা করার কথা। শনিবার গিয়ে দেখা গেল, মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কাছেই হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছে। পুলিশ কর্তারা এলাকায় টহল দিচ্ছেন, সভাস্থল পরিদর্শন করছেন। গোটা এলাকা তৃণমূলের পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিংয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। অভিষেক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটআউট লাগানো হয়েছে।

    রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, বাম আমলে, ২০০৬ সালে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের ভরাডুবির মধ্যেও বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন দুলাল বর। বাম আমলেই ২০০৩ সালে বাগদা পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী, প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। তৃণমূলের এখানে ভরাডুবি শুরু হয় ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট থেকে। সে বার দুলাল বর কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়ান। বামেরা কংগ্রেস প্রার্থী দুলালকে সমর্থন করে। ভোটে জিতে যান দুলাল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাগদা থেকে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর ২৪,৪৫৭ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। ২০২১ সালে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস ৯,৭৯২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। সেই বিশ্বজিৎ পরবর্তী সময়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিশ্বজিৎকে দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে বসান। তাঁকেই লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছে দল।

    পর পর ভোটে এখানে তৃণমূলের ভরাডুবির কারণ হিসেবে গোষ্ঠীকোন্দলকে দায়ী করেন দলেরই অনেকে। তা ছাড়া, নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে এখানে। তবে জেলা সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিশ্বজিৎ বাগদার সব নেতানেত্রীদের এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা শুরু করেন। এখন প্রকাশ্যে কোন্দল অনেকটা মেটানো গিয়েছে বলেই নেতৃত্ব মনে করছেন।

    বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত যে সাতটি বিধানসভা আছে, তার মধ্যে সব থেকে বেশি মতুয়া এবং উদ্বাস্তু সমাজের মানুষের বাস বাগদা বিধানসভা এলাকাতেই। নাগরিকত্বের বিষয়টি এখানে ভোটে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন। মতুয়া ভোট এখানে গুরুত্বপূর্ণ বরাবরই। মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের দীর্ঘ দিন দাবি ছিল নাগরিকত্বের। সম্প্রতি কেন্দ্র সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন) কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তারপর থেকে মতুয়া-উদ্বাস্তু সমাজ কার্যত দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। মতুয়াদের একাংশের দাবি, তাঁরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন। কিন্তু সিএএ-তে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের ব্যবস্থা নেই। এখানে আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের কথা উল্লেখ আছে। ফলে তাঁরা সিএএ আইন বাতিলের দাবি তুলেছেন।

    তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অভিষেক মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের এই বার্তাই দিতে আসছেন যে, নাগরিকত্বের আবেদন করলে মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষেরা বে-নাগরিক হয়ে যাবেন। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের পাশে আছেন। কেউ তাঁদের এখান থেকে তাড়াতে পারবে না।

    বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘সাংগঠনিক ভাবে এ বার আমরা বাগদা থেকে লিড পাচ্ছিই। অভিষেকের সভা আমাদের লিডের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।’’

    যদিও অভিষেকের সভাকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিষেক আসুন বা যে-ই আসুন, বাগদার মানুষ মনস্থির করে নিয়েছেন, গদ্দার বিশ্বজিৎকে ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে এখান থেকে হারাবেনই।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)