২০১১-র বিধানসভা ভোটে নেতাই গণহত্যাকে প্রচারে এনে সাফল্য পেয়েছিল তৃণমূল। তার পর বিভিন্ন নির্বাচনেই ঘুরে ফিরে এসেছে নেতাই। ২০২১ সালে ঝাড়গ্রাম বিধানসভার প্রচারেও ছিল নেতাই। সে বারও বিপুল ভোটে জেতেন তৃণমূলের বিরবাহা হাঁসদা। এ বারও লোকসভায় ঝাড়গ্রামের ভোটে থাকছে সেই নেতাই, তবে প্রেক্ষিত বদলে।
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পর নেতাই দিবসের উত্তরাধিকার নিয়ে তৃণমূল ও শুভেন্দুর আকচাআকচি চলেছে। তবে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের শিবির থেকে গুলি চালানোর ঘটনায় চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যুর মামলায় ১৩ বছর পরে সব অভিযুক্তই জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। এই আবহে লোকসভা ভোটের প্রচারের প্রথম পর্বেই বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু নেতাই পৌঁছে শহিদবেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, আশপাশে প্রচারও করেছেন।
আর তৃণমূলের প্রচারে থাকছে উন্নয়ন। রাজ্যে পালাবদলের পরে কংসাবতীর উপর লালগড় ও ঝাড়গ্রাম সংযোগকারী শহিদ রঘুনাথ মাহাতো সেতু হয়েছে। ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। কিন্তু কংসাবতীর ভাঙন রোধে তেমন কাজ হইনি বলে অভিযোগ। নদী গিলছে জনপদ, চাষজমি। তৃণমূলের দাবি, লালগড় ব্লকের ১০টি অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। সরকারি কলেজ, পলিটেকনিক, আইটিআই, একাধিক সরকারি স্কুল হয়েছে। গ্রামে গ্রামে পানীয় জলের সমস্যার সুরাহাও হয়েছে। নেতাই-সহ কয়েকটি গ্রামে প্রতিটি বাড়ির সামনে জলের ট্যাপ বসেছে।
তবে এলাকায় কাজ নেই, শিল্প নেই। অনেক যুবক ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে যান। কংসাবতী তীরবর্তী এলাকায় সেচের সুযোগ থাকলেও দূরবর্তী গ্রামগুলিতে সরকারি সেচ নেই। কয়েকদিন আগে তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেনের পৈতৃক গ্রাম রঘুনাথপুরে প্রচারে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কালীপদের ভাইপো মিঠুন সরেনও প্রণতকে জানান, রকারি সেচের সুবিধা না থাকায় চাষে ভীষণই সমস্যা হয়। এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদেরও চেয়ারপার্সন। বিধানসভার ১৪টি অঞ্চলে ৩৫টি রাস্তার কাজের বরাদ্দ দিয়েছে পর্ষদ। তার মধ্যে ১৬টি রাস্তা হয়েছে। বিধায়ক তহবিল থেকে শহরে অ্যাম্বুল্যান্স, পুরসভাকে শববাহী গাড়ি, স্কুলের জন্য টাকা দিয়েছেন বিধায়ক।
কিন্তু উন্নয়ন প্রচারেও বিঁধছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। প্রার্থী কালীপদ সরেনকে না-পসন্দ একাংশের। ফলে, প্রচারে সবাইকে দেখা যাচ্ছে না। লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তারাচাঁদ হেমব্রম মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ। নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে এসে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি শ্যামল মাহাতোকেও ব্লকের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে মন্ত্রীকেও সে ভাবে দেখা যায়নি। কিছুদিন আগে প্রার্থীকে নিয়ে জেলা শহরের বাজারে প্রচার করেছিলেন মন্ত্রী। প্রার্থীর মনোনয়নের শোভাযাত্রায় মন্ত্রীর দেখা মেলেনি। শেষএলায় পৌঁছন তিনি। মন্ত্রীর অবশ্য দাবি, ৩ মে থেকে ঝাড়গ্রামে আছেন, নিজের বিধানসভায় প্রচার করছেন। বিরবাহার কথায়, ‘‘বিপুল উন্নয়ন তো হয়েছেই। তাছাড়াও অসুস্থের চিকিৎসায় সাহায্য থেকে বিভিন্ন ভাবে মানুষের পাশে থাকি। ভোটের ফলে তার প্রতিফলন দেখা যাবে।’’ প্রার্থীর সঙ্গে বেশি প্রচারে থাকছেন না কেন? মন্ত্রীর জবাব, ‘‘সবাই একসঙ্গে প্রচারে যাওয়ার তুলনায় এলাকাভিত্তিক প্রচারে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন। সেটাই করছি।’’
ঝাড়গ্রাম শহরে বেহাল পথঘাট ও নিকাশি নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। ৭ বছরেও উড়ালপুলের সার্ভিস রোডের কাজ হয়নি। আবার কলেজ মোড়ে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য দোকানপাট ভাঙা হলেও কাজের গতি অতি মন্থর। কাজের অভাব, অপ্রাপ্তির ক্ষোভ পুঁজি করে বিজেপি জনমত গঠনের চেষ্টা করছে। দলের ঝাড়গ্রাম বিধানসভার আহ্বায়ক রমেশ সরকার বলছেন, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামগুলির পাশাপাশি জেলা শহরেও রাস্তা ও পানীয় জলের সমস্যা আছে। লালগড়ে কংসাবতীর ভাঙনরোধে উপযুক্ত কাজ হয়নি। কোনও শিল্প নেই, কাজ নেই।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মু পাল্টা বলছেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ বিবিধ পরিষেবায় সন্তুষ্ট ভোটাররা আমাদেরই উপুড়হস্ত ভোট দেবেন।’’