• বনগাঁয় সভা থেকে সিএএ নিয়ে কী বার্তা দেন শাহ, কৌতূহল
    আনন্দবাজার | ১৪ মে ২০২৪
  • বনগাঁ লোকসভার বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের সমর্থনে আজ, মঙ্গলবার বনগাঁয় সভা করতে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বনগাঁ শহরের আরএস মাঠে তাঁর সভা করার কথা। জেলা বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, বনগাঁ শহরে কিসান মান্ডিতে থাকা হেলিপ্যাডে নামবে তাঁর কপ্টার। সেখান থেকে গাড়িতে সড়ক পথে সভাস্থলে পৌঁছবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ইতিমধ্যেই সভাস্থল এবং হেলিপ্যাড এলাকার নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেছেন।

    বনগাঁ লোকসভা আসনটি মতুয়া, উদ্বাস্তু, তফসিলি অধ্যুষিত। এখানে ভোটে জয়-পরাজয় অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করেন মতুয়া ভোটারেরা। ২০১৯ সালে লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মতুয়াদের বড় অংশের সমর্থন ছিল বিজেপির দিকে। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। অনেকেই মনে করছেন, ভোটের আগে সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধন আইন চালু করে বিজেপি যে লাভ ঘরে তুলতে চেয়েছিল, সেটা হচ্ছে না। বরং এই ঘটনায় সুবিধা পাচ্ছে তৃণমূল। কারণ, মতুয়াদের একাংশ ইতিমধ্যেই সিএএ বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা এত দিন মনে করেছিলেন, সিএএ কার্যকর হলে তাঁরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু সিএএ বিধি কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারির পরে দেখা যাচ্ছে, সেখানে আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নিতে হবে। এই ঘটনায় মতুয়াদের একাংশ ক্ষুব্ধ।

    সিএএ নিয়েই তৃণমূলের সব স্তরের নেতারা তেড়েফুঁড়ে প্রচার শুরু করেছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের বোঝাচ্ছেন, তাঁদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড আছে। তাঁরা ভোট দেন। তাঁরা নাগরিক। নতুন করে নাগরিকত্বের আবেদন করলে উল্টে, তাঁদের সেই নাগরিকত্ব চলে যাবে। ডিটেনশন ক্যাম্পে জায়গা হবে। এই প্রচারে মতুয়াদের অনেকে প্রভাবিত হচ্ছেন। তৃণমূলের পাশাপাশি বাংলা পক্ষ, দামাল বাংলা নামে সংগঠনগুলিও বনগাঁ লোকসভা এলাকায় সিএএ বিরোধী প্রচার শুরু করেছে। রবিবার বাগদার এক জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এ রাজ্যে এসে ঘোষণা করেন, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেবেন এবং এনআরসি করা হবে না— তা হলে তিনি সিএএ সমর্থন করবেন।

    অন্য দিকে, বিজেপি নেতৃত্ব বরাবরই দাবি করে আসছেন, সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। এই আইনে নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার কথা নেই। আবেদন করলে কারও নাগরিকত্ব চলে যাবে না।

    সিএএ-এর পাশাপাশি বনগাঁ কেন্দ্রে বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছে গোষ্ঠী কোন্দল। দলের অন্দরে গুঞ্জন, উপর-উপর কোন্দল মিটলেও আন্তরিক ভাবে অনেকেই শান্তনু ঠাকুরের হয়ে প্রচারে গা ঘামাচ্ছেন না। শাহের সভাকে ঘিরে বিজেপি নেতৃত্ব সকলকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করছেন। রবি ও সোমবার অভিষেক এবং মমতা জোড়া সভা করেছেন বাগদা-বনগাঁয়। শাহের সভা তাঁদের পাল্টা হিসেবে দেখেছেন বিজেপির অনেকেই। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, শাহের সভার ফলে বিজেপির জয়ের ব্যবধান আরও বাড়বে।

    বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভায় আমরা ৩৫ হাজার মানুষের জমায়েত করছি। মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষেরা থাকবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিএএ নিয়ে তৃণমূলের মিথ্যাচারের জবাব দেবেন। সিএএ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হবে। কর্মীরা আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।”

    তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, “নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি এবং কেন্দ্র সরকার মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের ভাঁওতা দিয়েছে। এখন ভোটের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যতই তাঁদের সান্ত্বনা দিতে আসুন, কোনও কাজ হবে না। মতুয়ারা বিজেপির প্রতারণা ধরে ফেলেছেন।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)