উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় জেলার কেউ নেই। তবে অনেকেই আছে, যারা নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ভাল ফল করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে কাঁকসার অন্তরা কিস্কু, ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, বিক্রম ঘোষেরা।
মলানদিঘি দুর্গাদাস বিদ্যামন্দির থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে লবনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অন্তরা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৪। কলাবিভাগের ছাত্রী অন্তরা ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। ভবিষ্যতে ডব্লিউবিসিএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা তার। অন্তরা জানায়, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত একটি টিউশন ছিল। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাহায্য করেছেন। অন্তরার বাবা বলদেব কিস্কু একটি বেসরকারি কারখানায় ঠিকা শ্রমিক। মা নন কিস্কূ গৃহকর্মী। বলদেব বলেন, “দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে অন্তরা ছোট। ছেলে দিনমজুরি করে। খুব কষ্ট করে মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। ছোট থেকেই পড়ার প্রতি ঝোঁক। চাই না পড়াশোনায় কোনও বাধা আসুক।”
ত্রিলোকচন্দ্রপুর জরিলাল স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী, মাজুরিয়ার বাসিন্দা ইন্দ্রাণীও কলাবিভাগের ছাত্রী। সে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪৬ নম্বর পেয়ে স্কুলে সেরা হয়েছে। স্নাতক স্তরে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে তার। ইন্দ্রাণীও ভবিষ্যতে ডব্লিউবিসিএস অফিসার হতে চায়। তার বাবা দেবপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত চাষাবাদ করেন। তাঁর স্ত্রী মৌসুমী ছাড়াও সংসারে রয়েছেন এক ছেলে। তিনি এমএসসি পাঠরত। ইন্দ্রাণী জানায়, বাবা অসুস্থ। নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে টিউশন দেয় সে। ইন্দ্রাণী বলে, “বাবা অনেক কষ্ট করে পড়াচ্ছেন। আমরাও যতটা পারি সাহায্য করি।” দেবপ্রিয় বলেন, “মেয়ের ফলে আমরা খুব খুশি। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা কী ভাবে শেষ করবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। ইন্দ্রাণী বলে, “স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সব সময় পাশে থেকেছেন।”
মলানদিঘির চুয়া গ্রামের বাসিন্দা বিক্রম ৪৫৮ নম্বর পেয়েছে। দুর্গাপুর টিএন স্কুলের ছাত্র বিক্রম জানায়, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু খরচ জোগাড় হবে কী করে, তা নিয়ে চিন্তিত পরিবার। বিক্রমের বাবা প্রদীপ ঘোষ মলানদিঘি পঞ্চায়েতে ঠিকাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। মা বিপাশা গৃহকর্মী। প্রদীপ জানান, ছেলের উচ্চ শিক্ষার খরচ অনেক। সে জন্য তিনি ‘ইডব্লিউএস’-এর জন্য আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। তাই চিন্তার শেষ নেই। তিনি বলেন, “ওই প্রকল্পটি গ্রাহ্য হলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সুবিধা মিলবে।”