• অমৃতা-সাদি বিশ্রামে, মহুয়া দিনভর যাত্রায়
    আনন্দবাজার | ১৫ মে ২০২৪
  • চারপাশ কেমন যেন ফাঁকা-ফাঁকা। ভোটের পর দিন প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে হচ্ছে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর। এতগুলো দিন ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চারপাশে লোকজন। দলের কর্মী-সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষের ভিড় ঘিরে থাকত তাঁকে। চরম ব্যস্ততার মধ্যে কী ভাবে যে গোটা দিন কেটে যেত, বোঝাই যেত না। কিন্তু সোমবার ভোট মিটে যেতেই ঘিরে সব কেমন উধাও। মঙ্গলবার সকাল থেকে এক ঝটকায় ওই ব্যস্ততা থেকে দূরে চলে গিয়েছেন মানুষটা।

    কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করছেন কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়। কিছুতেই যেন সময় কাটতে চাইছে না তাঁর। আবার, কর্মীদের মাঝে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে তাঁর। ইচ্ছে করছে মানুষের কোলাহলে মিশে যেতে। কিন্তু শরীর আর পেরে উঠছে না। টানা প্রায় দেড় মাসের প্রচার কর্মসূচির পরিশ্রম। শরীর যেন শুষে নিয়েছে। ভোটের পর দিন তাই বাধ্যতামূলক রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় শরীর ছেড়ে দিয়েছেন। অমৃতা রায় বলছেন, “এক-আধবার মনে হচ্ছে দলের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করি। কথা বলি। দলের কার্যালয়ে যাই। কিন্তু শরীর আর নিচ্ছে না। ক্লান্ত লাগছে।”

    ক্লান্ত লাগাই স্বাভাবিক, মনে করছেন তাঁর দলের কর্মীরা। ২৪ মার্চ বিজেপি প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হয়। তার পর থেকে টানা ভোটের প্রচার চলেছে। নাম ঘোষণার পরে অমৃতা দু’দিনের জন্য কলকাতার বাড়ি গিয়েছিলেন। ফিরে এসে সেই যে প্রচার শুরু হয়েছে, তার পর থেকে কার্যত নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পাননি। প্রবল গরম উপেক্ষা করে কার্যত গোটা লোকসভা কেন্দ্র ঘুরেছেন। বেশির ভাগ দিন সকাল সাতটা নাগাদ বের হতেন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় দশটা। ওই ছকে বাধা নিয়ম থেকে আচমকা বদল।

    মঙ্গলবার ভোটের পরের দিন ছিল শুধুই বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট। তবে বেলা ১১টা নাগাদ এক বার কৃষ্ণনগরের গণনাকেন্দ্র বিপিসিআইটি কলেজে গিয়েছিলেন অমৃতা। সব কিছু বুঝে নিতে। সেখানেই মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে ঘরের ভিতরে পাশাপাশি বসেন দু’জনে। সৌজন্যমূলক কথাবার্তাও হয় তাঁদের মধ্যে। সেখান থেকে ফিরে এসে আবার দিনভর বিশ্রাম। বিজেপির প্রার্থী বলেন, “টানা প্রচারের ধকলে শরীর খুব ক্লান্ত। আজ আর দলের কার্যালয়ে গেলাম না, কাল যাব।”

    কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী এস এম সাদিও কার্যত মঙ্গলবার বিশ্রাম নিয়েই কাটিয়েছেন। এ দিন বেলা প্রায় বারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছেন তিনি। জানালেন, শরীর যেন আর চলছে না। ভোটের আগে প্রতি দিন মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে, রোড-শো, প্রচার করেছেন তিনি। একটা দিনের জন্যেও প্রচারে খামতি দেননি। অনেকেই বলছেন, প্রচার আর পরিশ্রমে সিপিএম প্রার্থীর ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেননি কোনও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তার পরে মঙ্গলবার বিশ্রামের জন্যই রেখেছিলেন সাদি। কিন্তু দলীয় কার্যালয়ের টান বড় প্রবল। ফের স্নান করে চলে এসেছিলেন কৃষ্ণনগরের উকিলপাড়ার দলের জেলা কার্যালয়ে। অন্য দিনের মতো সেখানেই দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে, সেখানেই ঘুম। উঠেছেন বিকেল প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ। তার পর থেকে বিভিন্ন প্রান্তের নেতা-কর্মীদের ফোন করেছেন সাদি। ভোটের খবরের পাশাপাশি তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। ফাঁকে ফাঁকে কথা বলেছেন দলের কার্যালয়ে আসা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। সাদির কথায়, “শরীরের উপর দিয়ে বড্ড ধকল গিয়েছে। একটু সুযোগ পেয়েই শরীর তাই পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছে। কাল থেকে আবার দলের কাজ শুরু করব।”

    বিরোধীরা এ দিন কার্যত বিশ্রাম করে কাটালেও তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের অভিধানে যেন ‘বিশ্রাম’ বলে কোনও শব্দ নেই। সোমবার রাত থেকে টানা ঘুম দিলেও মঙ্গলবার তিনি বিশ্রাম নেননি বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও মঙ্গলবার সকালে তিনি কারওর সঙ্গেই বিশেষ দেখা করেননি। বেলা ১১টা নাগাদ মহুয়া বিপিসিআইটি কলেজে গিয়ে সব কিছু বুঝে নেন। তার পর দুপুরেই বেরিয়ে পড়েন কলকাতার উদ্দেশে। এ দিনই তিনি দিল্লি চলে যাচ্ছেন বলে ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)